দিনমজুর থেকে উদ্যোক্তা পাহাড়ের থোয়াই মারমা
পাহাড়ে ফলের বাগান ও ঝিরিতে মাছ চাষ করে আত্মনির্ভরশীল বান্দরবান সদরের জামছড়ি ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের তংপ্রু পাড়ার মংক্যসিং মারমার ছেলে থোয়াই সিং হ্লা মারমা (২৭)।
২০১৪ সালে এসএসসি পাশ করার পর সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন থোয়াই সিং হ্লা মারমা। ঢাকায় ন্যাশনাল পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন। পারিবারিক আর্থিক অস্বচ্ছতার কারণে ডিপ্লোমা কোর্সের অষ্টম সেমিস্টার শুরুর আগেই পড়াশুনাকে বিদায় জানিয়ে বাড়ি চলে আসতে বাধ্য হন তিনি।
থোয়াই মারমা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পারিবারিক অসচ্ছলতার পাশাপাশি উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন বিসর্জন—সব মিলিয়ে খুব দিশেহারা ছিলাম।'
'২০১৮ সালে ঢাকা থেকে গ্রামে ফিরে আসার পর নিরুপায় হয়ে প্রথমদিকে অন্যের জমি ও বাগানে দৈনিক ৫০০ টাকা মজুরিতে কাজ শুরু করি। অন্যদের মতো করে কাজ ও পরিশ্রম করতে অভ্যস্ত না হওয়ায় অনেকের কাছে হাসি পাত্র হয়েছি। অনেক কটু কথাও শুনতে হয়। পরিবারের বড় ছেলে হওয়া সংসারে হাল ধরার কঠিন বাস্তবতাকে কাঁধে তুলে নিতে বাধ্য হই।'
২ বছর দিনমজুরি করে সংসার চালানোর পাশাপাশি তরুণ উদ্যোক্তা হয়ে আত্মনির্ভরশীলতার স্বপ্ন দেখেন থোয়াই। নতুন কিছু করার আশায় ২০ হাজার টাকার জমান।
২০২০ সালে বৈশ্বিক করোনা মহামারিতে আবারো কর্মহীন হয়ে পড়েন তিনি। জমানো টাকাও শেষ হয়ে যায়। আবার নিরুপায় হয়ে পড়েন এই তরুণ।
২০২১ সালে করোনার নিষেধাজ্ঞা কিছুটা শিথিল হলে 'আমার বাড়ি আমার খামার' (একটি বাড়ি একটি খামার) প্রকল্প থেকে স্বল্প সুদে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে পেঁপে চাষ শুরু করেন।
সে বছর পেঁপে বিক্রি করে ৫০ হাজার টাকা ঋণ পরিশোধ করার পর একই প্রতিষ্ঠান থেকে আবারো ঋণ নেন এক লাখ টাকা। ঋণের টাকা দিয়ে এক একর পাহাড়ি টিলায় এক হাজার পেঁপের চারা রোপণ করেন।
থোয়াই বলেন, 'যত্ন ও পরিচর্যার পর পেঁপে বিক্রি করে এক মৌসুমে ২ লাখ টাকা আয় করি। এক লাখ টাকার ঋণ পরিশোধ করে বাকি টাকা দিয়ে ১০০ আমের চারা রোপণ করি। ৫ বছর চুক্তিতে পাহাড়ি ঝিরিতে বাঁধ দিয়ে বানানো পুকুর ইজারা নিই। মাছ চাষের পাশাপাশি দেশি মুরগির খামার গড়ে তুলি।'
থোয়াই সিং হ্লা মারমা সম্পর্কে ৬ নং ওয়ার্ডে সদস্য মং শৈনু মারমা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'থোয়াই অনেক কষ্ট করেছেন। পড়াশুনা করেও গ্রামে অন্য ১০ জনের মতো নন। এই বয়সে অনেকে বিপথগামী হয়ে যায়। আত্মনির্ভরশীল হওয়ার স্বপ্নের বিভোর থোয়াই অন্যরকম।'
তার মতে, থোয়াইকে দেখে গ্রামের অনেকে ছোট ছোট প্রকল্প আকারে টিলায় বাগানের কাজ শুরু করেছেন। মং শৈনু মারমা বলেন, 'আশা করবো, শিক্ষিত বেকার যুবকেরা চাকরির পিছনে না ছুটে আত্মনির্ভরশীল হতে কাজ করবেন।'
থোয়াইয়ের আক্ষেপ, 'শুনেছি প্রতি বছর পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়, জেলা পরিষদ ও উন্নয়ন বোর্ড থেকে অনেক বাগান চাষিকে সহায়তা দেওয়া হয়। তরুণ উদ্যোক্তাদের যদি এই সহযোগিতা দেওয়া হয় তাহলে আমি মনে করি পাহাড়ে অনেক তরুণ বেকারত্বে অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবেন। বিপথগামী তরুণের সংখ্যাও কমে আসবে।'
Comments