বাণিজ্য সুবিধা অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার

২০২৬ সালের পরেও একাধিক সুবিধা পেতে পারে বাংলাদেশ

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা, ডাব্লিউটিও, শুল্কমুক্ত, ইউরোপ, রপ্তানি, এলডিসি,

 

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডাব্লিউটিও) এলডিসি থেকে উত্তরণের পরও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য বাণিজ্য সুবিধা অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশকে কেবল ২০২৬ সালের পর সম্ভাব্য রপ্তানি ক্ষতি এড়াতে সহায়তা করবে না, বরং বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতেও সহায়তা করবে।

গত ২৩ অক্টোবর স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে উত্তরণের পথে সহায়তা করার প্রচেষ্টা হিসেবে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে জেনেভাভিত্তিক বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার জেনারেল কাউন্সিল।

১৯৭১ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে পৃথকভাবে শ্রেণিবদ্ধ করে। বর্তমানে ৪৬টি স্বল্পোন্নত দেশ আছে, তাদের কয়েকটি শিগগির এই ক্যাটাগরি থেকে বেরিয়ে যাবে।

২০০৫ সালে হংকংয়ে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ষষ্ঠ মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের পর থেকে উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশগুলো স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য ৯৭ শতাংশ পণ্যে শূন্য শুল্ক সুবিধা দিয়ে আসছে।

কিন্তু, ২০২৬ সালের নভেম্বরে নির্ধারিত স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশ সেই সুবিধা পাবে না বলে মনে করা হচ্ছিল, ফলে রপ্তানি ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা ছিল।

উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মতে, শুল্ক আরোপের কারণে বাংলাদেশের মোট রপ্তানি বার্ষিক আনুমানিক ৫ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলার কমে যেতে পারে।

বেশিরভাগ শুল্ক সুবিধা কমাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং এ কারণে রপ্তানি কমতে পারে ৫ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানির ২৫ বিলিয়ন ডলার বা ৪৫ শতাংশ এসেছে এই অঞ্চল থেকে।

এছাড়া, কানাডা, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় রপ্তানিতে প্রভাব পড়তে পারে।

সিংহভাগ রপ্তানি পোশাক খাতে কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের রপ্তানির প্রায় ৮৫ শতাংশ তৈরি পোশাক শিল্পের। পণ্যের তালিকায় আছে টি-শার্ট (তুলা), পুরুষের ট্রাউজার (তুলা) ও জার্সি (ফাইবার এবং তুলা)।

কিন্তু, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সর্বশেষ সিদ্ধান্তের কারণে ২০২৬ সালের পর আরও কয়েক বছর বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে।

বাংলাদেশ তিন বছরে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হওয়ার পর বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার বহুপাক্ষিক ব্যবস্থার আওতায় স্বল্পোন্নত দেশগুলোর বাণিজ্য সুবিধা আরও ছয় বছরের জন্য বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছে। এর মধ্যে আছে ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্যের জন্য ট্রেড-রিলেটেড অ্যাসপেক্টস অব ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইটস (টিআরআইপিএস)।

জ্যেষ্ঠ বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা কবে নাগাদ ঘোষণা করবে তা জানায়নি। হয়তো তাদের পরবর্তী মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে ঘোষণা আসতে পারে।

তবে স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে কোনো দেশের নির্দিষ্ট বাণিজ্য স্কিমের নিয়ম মেনে চলতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, 'টিআরআইপি মওকুফের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আলোচনা চলছে।'

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আবদুস সামাদ আল আজাদ জানান, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে আবুধাবিতে অনুষ্ঠেয় বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ১৩তম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়া হতে পারে।

এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের ডিসটিনগুইশড ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ২০২৬ সালের পর আরও কয়েক বছর স্থানীয় রপ্তানিকারকরা শুল্কমুক্ত সুবিধা ভোগ করবেন।

তিনি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার এই সিদ্ধান্তকে বাংলাদেশের জন্য সুসংবাদ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

'ডব্লিউটিও'র বহুপাক্ষিক ব্যবস্থায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে স্থানীয় ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্যও লাভবান হবে,' যোগ করেন তিনি।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, স্থানীয় সরবরাহকারীরা শূন্য শুল্ক রপ্তানি সুবিধা ভোগ করায় দেশে নতুন বিনিয়োগ আসবে।

তিনি বলেন, 'ডাব্লিউটিও'র এই সিদ্ধান্ত বিজিএমইএকে ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়তা করবে।'

যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার মতো কয়েকটি দেশ ইতোমধ্যে জানিয়েছে, তারা ২০২৬ সালের পরও বাংলাদেশের জন্য বাণিজ্য সুবিধা অব্যাহত রাখবে।

তিনি বলেন, 'এখন ডব্লিউটিও বাংলাদেশের জন্য এই সুবিধা সম্প্রসারণ করেছে। অবশ্যই এটি আমাদের জন্য ভালো খবর।'

বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী বেলায়েত হোসেন বলেন, 'এই সিদ্ধান্ত হিমায়িত খাবার রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।'

বর্তমানে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে শুল্ক সুবিধার শীর্ষে আছে এবং এই বাণিজ্য সুবিধার ৬৭ শতাংশ পর্যন্ত ব্যবহার করছে। দেশের রপ্তানির ৭৩ শতাংশেরও বেশি বাণিজ্য সুবিধা ভোগ করে।

Comments

The Daily Star  | English

BDR carnage rooted in 'long-term plot', says investigation commission

It was abetted by intelligence failures, gross negligence, and the involvement of several political figures, according to the commission chief

1h ago