বিমাদাবি পরিশোধে ব্যর্থ ফারইস্ট লাইফ, যে ব্যবস্থা নিলো নিয়ন্ত্রক সংস্থা

বিমাদাবি নিষ্পত্তির জন্য যদি কাগজপত্রের প্রয়োজন হয় তবে দাবিদারের সঙ্গে দ্রুত টেলিফোনে যোগাযোগ করতে হবে এবং দ্রুত নিষ্পত্তি নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতে হবে।
ফারইস্ট লাইফ
ছবি: সংগৃহীত

চলতি মাসের মধ্যে বিমা গ্রহীতাদের পাওনা টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হলে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের প্রিমিয়াম আয়, বিনিয়োগ হতে আয় ও লাইফ ফান্ড থেকে আয় অন্য কোনো খাতে খরচ না করার নির্দেশ দিয়েছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।

গতকাল বুধবার প্রতিষ্ঠানটিকে আইডিআরএ থেকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, বিমাদাবি পরিশোধের জন্য বারবার নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও তা নিষ্পত্তিতে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।

চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি তাদের বিমাদাবির মাত্র চার শতাংশ নিষ্পত্তি করেছে।

দুই হাজার ৩৫১ কোটি টাকার দাবির বিপরীতে ৯৬ কোটি ৫৮ লাখ টাকা পরিশোধ করেছে উল্লেখ করে চিঠিতে আরও বলা হয়, দাবি নিষ্পত্তির এই হার অত্যন্ত 'অসন্তোষজনক' ও 'হতাশাজনক'।

চিঠিতে বলা হয়েছে, ফারইস্ট তার এজেন্টদের কমিশন হিসেবে প্রথম বছরের প্রিমিয়ামের ২০ শতাংশের বেশি দিতে পারবে না। আইন অনুসারে ৩৫ শতাংশ দিতে পারে।

বাকি ১৫ শতাংশ কমিশন স্থগিত করে দ্বিতীয় বছরের প্রিমিয়ামের ওপর কমিশনের সঙ্গে সমন্বয় করার কথাও চিঠিতে বলা হয়েছে।

এতে বলা হয়, বিমাদাবি নিষ্পত্তির জন্য যদি কাগজপত্রের প্রয়োজন হয় তবে দাবিদারের সঙ্গে দ্রুত টেলিফোনে যোগাযোগ করতে হবে এবং দ্রুত নিষ্পত্তি নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতে হবে।

চিঠিতে বলা হয়েছে—যদি নথিপত্র ইতোমধ্যেই পাওয়া যায়, তাহলে দাবি নিষ্পত্তিতে ৯০ দিন পর্যন্ত দেরি করা যাবে না। আইন অনুসারে, ৯০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে।

আইডিআরএ'র এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আর্থিক সংকটের কারণে প্রতিষ্ঠানটি বিমা গ্রহীতাদের দাবি নিষ্পত্তি করতে পারছে না।'

গতকাল ফারইস্টের চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আইডিআরএ'র সঙ্গে আলোচনা করে দাবিগুলো নিষ্পত্তি করা হবে।'

গত মাসে তিনি ডেইলি স্টারকে বলেছিলেন প্রতিষ্ঠানটি আর্থিকভাবে দুর্বল, আর এর মালিকরা জেলে।

তিনি আরও জানান, ফারইস্টকে আগের অবস্থানে ফিরিয়ে আনতে সরকার নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করেছে। তবে এখন পর্যন্ত খুব বেশি অগ্রগতি হয়নি।

'আর্থিক অবস্থা দুর্বল হওয়ায় প্রয়োজনীয় হারে বিমাদাবি পরিশোধ সম্ভব হচ্ছে না,' যোগ করেন তিনি।

তার মতে, এর পেছনে আরেকটি কারণ হলো নতুন গ্রাহকরা পলিসি ওপেন করছেন খুবই কম। কারণ প্রতিষ্ঠানটির সুনাম নষ্ট হয়েছে।

এর আগে প্রতিষ্ঠানটির জমি ও অন্যান্য সম্পত্তি বিক্রির বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। সে সময় ক্রেতারা যে দাম বলেছিলেন তা ক্রয়মূল্যের চেয়ে কম ছিল। এ কারণে জমি বিক্রি করা যাচ্ছে না বলেও জানান তিনি।

আইডিআরএ'র মুখপাত্র জাহাঙ্গীর আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, বহু বিমা গ্রহীতাদের পলিসির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও তাদের দাবির নিষ্পত্তি করা হচ্ছে না। এ কারণে প্রতিষ্ঠানটিকে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

২০২১ সালের এপ্রিলে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট প্রতিষ্ঠান শিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোম্পানিকে ফারইস্টের অডিটের জন্য নিযুক্ত করে। অডিট শেষে তারা ২০২২ সালের মে মাসে আইডিআরএ-তে প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল।

সেই প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটির দুই হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এ ছাড়াও, ৪৩২ কোটি টাকার হিসাব সংক্রান্ত অনিয়ম ধরা পড়েছে।

জালিয়াতির সঙ্গে ফারইস্টের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ও এম এ খালেক, সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হেমায়েত উল্লাহসহ কয়েকজন সাবেক পরিচালক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে।

মূলত বাজারমূল্যের চেয়ে বেশি দামে জমি কেনা ও প্রতিষ্ঠানটির মুদারাবা টার্ম ডিপোজিট রিসিপ্ট (এমটিডিআর) বন্ধক রেখে ব্যাংক ঋণ নেওয়ার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করা হয়।

এমটিডিআর হলো এমন অ্যাকাউন্ট যার মাধ্যমে মুদারাবা ধারণার ওপর ভিত্তি করে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য জমা করা অর্থের ওপর মুনাফা দেয়।

২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয় এবং হেমায়েত উল্লাহকে বরখাস্ত করে।

বর্তমানে স্বতন্ত্র পরিচালকরা ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স পরিচালনা করছেন।

Comments