দেশে-বিদেশে লুঙ্গির বাজার তুঙ্গে

লুঙ্গি
প্রতীকী ছবি। ছবি: এমরান হোসেন/ স্টার ফাইল ফটো

প্রবাসী বাংলাদেশির সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সারা বিশ্বে বাড়ছে দেশি লুঙ্গি রপ্তানির পরিমাণ। আবার দেশে জনসংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে থাকায় স্থানীয় বাজারেও এই পণ্যের চাহিদা বেড়েই চলেছে।

দেশে লুঙ্গির বাজার বছরে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার। আর লুঙ্গি রপ্তানি করে বছরে আয় হচ্ছে ১০ লাখ ডলারের বেশি।

পাঁচ বছর আগেও লুঙ্গির স্থানীয় বাজার ছিল বছরে ১০ হাজার কোটি টাকার। রপ্তানি আয় ছিল কয়েক লাখ ডলার।

লুঙ্গি পরার অভিন্ন সংস্কৃতি ও সুতির লুঙ্গির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ভারত পরিণত হয়েছে বাংলাদেশি লুঙ্গির প্রধান বাজারে।

এ ছাড়াও, অনানুষ্ঠানিকভাবে এক হাজার ২০০ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের লুঙ্গি মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় পাঠানো হয় বলে জানিয়েছেন রপ্তানিকারকরা।

নগরায়ন সাধারণত ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি ও স্থানীয় পোশাককে প্রভাবিত করে থাকে। তবে দেশে দ্রুত নগরায়ন সত্ত্বেও লুঙ্গির স্থানীয় বাজার প্রতি বছর ১০ শতাংশেরও বেশি হারে বাড়ছে।

নগরায়নের ফলে দেখা যাচ্ছে বেশিরভাগ নগরবাসী পুরুষ লুঙ্গির চেয়ে ট্রাউজার বেশি পছন্দ করছেন। ট্রাউজার বেশি টেকসই হওয়ায় এটি লুঙ্গির বাজারকে প্রভাবিত করছে।

গ্রামের তুলনায় শহরে লুঙ্গির চাহিদা কম। লুঙ্গি এখনো গ্রামের মানুষের অন্যতম প্রধান পোশাক।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে—কমপক্ষে ২৫ দেশে লুঙ্গি পাঠানো হয়। সৌদি আরব, কাতার, ওমান, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, বাহরাইন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ভারত, মিয়ানমার ও ইন্দোনেশিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিরা এর প্রধান ক্রেতা।

'প্রতি বছর লুঙ্গির চালান বাড়ছে। চাহিদা বেশি হওয়ায় কয়েকটি দেশি প্রতিষ্ঠান রপ্তানিতে ভালো করছে।'

আলাউদ্দিন টেক্সটাইল মিলস (এটিএম) প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিলীপ কুমার সাহা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সুতার দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠান লুঙ্গি তৈরি বন্ধ করে দিয়েছে।'

দেশে ও বিদেশে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে সুতির লুঙ্গির চাহিদা বেশি।

প্রায় দুই কোটি বাংলাদেশি বিদেশে থাকেন। তাদের প্রায় সবারই কমপক্ষে একটি লুঙ্গি আছে। অনেকে আত্মীয়-স্বজন বা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে লুঙ্গি সংগ্রহ করেন।

লুঙ্গির অন্যতম প্রধান উৎপাদনকারী ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান আমানত শাহ গ্রুপের প্রধান নির্বাহী এমদাদুল কবির সিদ্দিকীও দিলীপ কুমার সাহার সঙ্গে একমত।

এমদাদুল কবির সিদ্দিকী বলেন, 'লুঙ্গির বাজার প্রতি বছর ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে।'

বাজার বড় হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে লুঙ্গি উৎপাদনের জন্য সুতা উৎপাদনকারী কারখানার সংখ্যাও বাড়ছে।

তিনি জানান, চারটি বড় সুতা কারখানা বর্তমানে লুঙ্গির সুতা তৈরি করছে।

লুঙ্গি উৎপাদনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ লুঙ্গি ম্যানুফ্যাকচারার্স ট্রেডার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএলএমটিইএ) সদস্য ২৫০-র কাছাকাছি। দেশে লুঙ্গি উৎপাদকের সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি।

নরসিংদী, নরসিংদীর বাবুরহাট, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, নারায়ণগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জের গাউছিয়া এবং ঢাকার নবাবগঞ্জ ও রুহিতপুর লুঙ্গির জন্য বিখ্যাত।

এমদাদুল কবির সিদ্দিকী জানান, উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় তাঁতিরা হাতে চালানো তাঁত থেকে যন্ত্রে চালানো তাঁতের দিকে সরে গেছেন।

বাংলাদেশ টেক্সটাইল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের স্থানীয় সুতা ও বনন কারখানা উন্নয়ন সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. খোরশেদ আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'লুঙ্গি এখন বহুমুখী রপ্তানি পণ্য।'

'প্রতি বছর লুঙ্গির চালান বাড়ছে। চাহিদা বেশি হওয়ায় কয়েকটি দেশি প্রতিষ্ঠান রপ্তানিতে ভালো করছে।'

দেশে নয় কোটির মধ্যে সাত কোটির বেশি পুরুষ নিয়মিত লুঙ্গি কেনেন উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'শহরে অনেকেই ট্রাউজার পরায় লুঙ্গির বাজারে প্রভাব পড়ছে। গ্রামে এখনো ছেলেদের প্রধান পোশাক লুঙ্গি।'

দেশে ৬০ হাজারেরও বেশি তাঁতি সরাসরি লুঙ্গি তৈরির সঙ্গে জড়িত। পরোক্ষভাবে জড়িতদের নিয়ে হিসাব করলে সংখ্যাটি আরও অনেক বেশি হবে।

মো. খোরশেদ আলম জানান, শিল্প কারখানায় গ্যাস সরবরাহে ঘাটতি ও গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশের বস্ত্র খাতের উৎপাদন খরচ বেড়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

An Eid evening at Pongu Hospital: overflowing emergency, lingering waits

NITOR is a 1,000-bed tertiary medical facility that receives referral patients from all over the country

17m ago