কর হার আগাম ঘোষণা করতে পারে সরকার

আগামী অর্থবছর এনবিআর এমনভাবে কর হার ঘোষণা করতে পারে, যা শুধু বিদায়ী অর্থবছরে নয়, পরবর্তী অর্থবছরের জন্যও প্রযোজ্য হবে।
কর
স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

আসছে অর্থবছরে ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক আয়করের হার আগেই ঘোষণা করতে পারে সরকার। যেন করদাতারা তাদের বিনিয়োগ ও কর নিয়ে আগাম পরিকল্পনা করতে পারে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বর্তমানে একটি অর্থবছর শেষে প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিগত কর হার ঘোষণা করে।

উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, বর্তমান অর্থবছর ২০২৩ সালের জুলাইয়ে শুরু হয়েছে এবং এ বছরের জুনে শেষ হবে। আর অর্থবছর শেষে নির্ধারণ করে দেওয়া কর হারের ওপর ভিত্তি করে করদাতারা আয় ও সম্পদের বিবরণী দাখিল করেন এবং পরবর্তী বছর তাদের আয়ের ওপর কর প্রদান করে, যাকে মূল্যায়ন বছর বলা হয়ে থাকে।

তবে আগামী অর্থবছর এনবিআর এমনভাবে কর হার ঘোষণা করতে পারে, যা শুধু বিদায়ী অর্থবছরে নয়, পরবর্তী অর্থবছরের জন্যও প্রযোজ্য হবে।

ফলে যে কেউ ২০২৪-২৫ অর্থবছর শুরুর আগে আয়করের হার জানতে পারবে। শুধু তাই নয় ২০২৫ সালের জুনে অর্থবছর শেষে সেই হারে কর পরিশোধ করতে পারবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, করদাতাদের দীর্ঘদিনের দাবির ভিত্তিতে এনবিআর বিদ্যমান 'রেট্রোস্পেকটিভ সিস্টেম' বদলে নতুন পদ্ধতি চালু করতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।

এখানে উল্লেখ্য পূর্ববর্তী কর হলো এমন একটি লেনদেন বা চুক্তির উপর আরোপিত কর, যে লেনদেন বা চুক্তি আগেই সংগঠিত হয়েছে।

ওই কর্মকর্তা বলেন, 'আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে এনবিআর নতুন পদ্ধতিতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে, যাকে সম্ভাবনাময় কর ব্যবস্থাও বলা যেতে পারে। আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি।'

তিনি আরও জানান, এই পদ্ধতি ব্যক্তি ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জনে সহায়তা করবে। এছাড়া তাদের কর ব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগ পরিকল্পনাতেও সহায়ক হবে।

এর আগে, গত ১৪ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ প্রস্তাবে সম্মতি দেন এবং এটি পরবর্তী অর্থ আইনে একীভূত হতে পারে বলে জানান অর্থ মন্ত্রণালয়ের এই কর্মকর্তা

বিনিয়োগকারী ও কর বিশ্লেষকরা এনবিআরের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, এটি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াবে এবং দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে উৎসাহ যোগাবে।

জানতে চাইলে ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএবি) ট্যাক্সেশন অ্যান্ড কর্পোরেট ল কমিটির চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির বলেন, 'দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে এটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আমি মনে করি।'

তিনি আরও বলেন, শুধু বিনিয়োগকারীরাই নন, ব্যক্তিরাও এই উদ্যোগে উপকৃত হবেন। কারণ তারা ব্যবসা বা আর্থিক পরিকল্পনার ব্যাপারে আগে থেকে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।

তাই বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতে নতুন পদ্ধতি চালু হলে তা অব্যাহত রাখতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

হুমায়ুন কবির আরও বলেন, 'অন্তত দুই দশক আগে সরকার একবার এ পদ্ধতি বাস্তবায়ন করেছিল। কিন্তু দুই বছর পর তা বন্ধ করে দেওয়া হয়।'

মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি কামরান টি রহমানও এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, 'এর মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা ইতিবাচক ইঙ্গিত পাবেন। আর স্থিতিশীল কর ব্যবস্থা তাদের আস্থা বাড়াবে।'

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে এক কোটির বেশি মানুষ আছেন, যাদের করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর বা টিন রয়েছে। ২০২২-২৩ সালে করদাতারা ৪১ লাখ রিটার্ন জমা দিয়েছেন, যার বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ১৭ শতাংশ।

এদিকে এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, ৩৫ হাজার ৯৭৬টি কোম্পানি রিটার্ন দাখিল করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৬ শতাংশ বেশি।

Comments

The Daily Star  | English

Floods cause Tk 14,421 crore damage in eastern Bangladesh: CPD study

The study highlighted that the damage represents 1.81 percent of the national budget for fiscal year (FY) 2024-25

2h ago