১ বছরে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ১৪ শতাংশ

বিদেশি বিনিয়োগ
স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের ক্রমবর্ধমান ধারায় এখন যেন ভাটার টান। রিজার্ভ ক্রমাগত কমে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে বিদেশি বিনিয়োগও কমতে দেখা যাচ্ছে। ২০২৩ সালে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ কমেছে। এমন পরিস্থিতিতে মনে হচ্ছে এ দেশে বিনিয়োগ করতে বিদেশিরা তেমন আগ্রহী নন।

গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা গেছে, গত বছর দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে তিন বিলিয়ন ডলারের সামান্য বেশি। ২০২২ সালে তা ছিল সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলার। এর মানে হচ্ছে এটি আগের বছরের তুলনায় ১৪ শতাংশ কম।

ইক্যুইটি মূলধন ২০২২ সালে তা এক দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলার থেকে ৩১ শতাংশ কমে ৭০৫ দশমিক ৮৩ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

পুনঃবিনিয়োগকৃত আয় ১২ দশমিক এক শতাংশ কমে দুই দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। তবে আন্তঃপ্রতিষ্ঠান ঋণ ২০২২ সালে ঋণাত্মক ৫৭ দশমিক ৬৫ মিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ৮৮ দশমিক ৯১ মিলিয়ন ডলার হয়েছে।

সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগকে 'হতাশাজনক' হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স কর্পোরেশনের সাবেক অর্থনীতিবিদ এম মাসরুর রিয়াজ।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এটি এমন সময় দেখা গেল যখন গত দুই বছর ধরে বিদ্যমান সামষ্টিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো থেকে বেরিয়ে আসার জন্য দেশে ডলারের প্রয়োজন।'

তবে একে 'বিস্ময়কর নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তার মতে, 'আমাদের অর্থনৈতিক সাফল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে আমাদের সক্ষমতা বাড়েনি।'

তিনি আরও বলেন, 'বিদেশি বিনিয়োগ আনার জন্য কৌশল ও প্রচারের অভাবও আছে।'

ব্যবসার পরিবেশ, বাণিজ্য নীতি, লজিস্টিক খাত ও পুরোনো নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার দুর্বলতাগুলোকে এর পেছনের কারণ বলেও মনে করেন তিনি।

তিনি বলেন, 'দেশে সামষ্টিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের কারণে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে।'

নেদারল্যান্ডস থেকে এসেছে ৩৬৬ দশমিক ৯৬ মিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৩১৪ দশমিক নয় মিলিয়ন ডলার, চীন থেকে ২৫৯ দশমিক ৫৪ মিলিয়ন ডলার, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ১৮১ দশমিক ৪৩ মিলিয়ন ডলার ও নরওয়ে থেকে ১৭৬ দশমিক ৮৭ মিলিয়ন ডলার।

মুদ্রার বিনিময় হারে অস্থিরতার পাশাপাশি রিজার্ভ, আমদানি ও উৎপাদন কমে গেলে বিদেশিরা বিনিয়োগে আগ্রহী হন না।

বিশ্বব্যাপী পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া, পণ্য সরবরাহে ঝামেলা হওয়া, বৈদেশিক চাহিদায় মন্দা ও হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স আসার কারণে চলতি মাসের শুরুতে রিজার্ভ ১৯ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে যায়। ২০২১ সালের আগস্টে তা ছিল ৪০ দশমিক সাত বিলিয়ন ডলার।

ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিলাসবহুল ও অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি সীমাবদ্ধ করতে বাধ্য হয়। গত দুই বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার দাম কমেছে ৩৫ শতাংশ।

২০২৩ সালে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ এসেছিল তিন দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার। ২০২২ সালের তুলনায় তা ১৭ দশমিক আট শতাংশ কম। চলতি বছরেও সেই ধারা চলমান আছে।

মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির তথ্য অনুসারে, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চে মূলধন প্রত্যাবাসন, বিপরীত বিনিয়োগ, ঋণ ও আন্তঃপ্রতিষ্ঠান ঋণ পরিশোধসহ মোট বিদেশি বিনিয়োগ চার দশমিক ৯২ শতাংশ কমে ৩২১ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে।

বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় আর্থিক অ্যাকাউন্ট ঘাটতিতে পড়েছে।

বিদেশি বিনিয়োগ, মাঝারি ও দীর্ঘমেয়াদী ঋণ, বাণিজ্য ক্রেডিট, নিট সহায়তা প্রবাহ, পোর্টফোলিও বিনিয়োগ ও রিজার্ভের সঙ্গে আর্থিক অ্যাকাউন্ট জড়িত।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চে আর্থিক ঘাটতি দাঁড়িয়েছে নয় দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ এসেছে যুক্তরাজ্য থেকে। এর পরিমাণ ৬১৩ দশমিক ৯৩ মিলিয়ন ডলার। এটি মোট সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের ২০ দশমিক চার শতাংশ।

নেদারল্যান্ডস থেকে এসেছে ৩৬৬ দশমিক ৯৬ মিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৩১৪ দশমিক নয় মিলিয়ন ডলার, চীন থেকে ২৫৯ দশমিক ৫৪ মিলিয়ন ডলার, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ১৮১ দশমিক ৪৩ মিলিয়ন ডলার ও নরওয়ে থেকে ১৭৬ দশমিক ৮৭ মিলিয়ন ডলার।

গত বছর সবচেয়ে বেশি বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে উত্পাদন খাতে। এর পরিমাণ ছিল এক দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলার। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পেট্রোলিয়াম খাত। এই খাতে বিনিয়োগ এসেছে ৫৮ দশমিক ২৭ মিলিয়ন ডলার।

ব্যবসা-বাণিজ্য খাতে ৫৫১ দশমিক ৯৭০ মিলিয়ন ডলার; পরিবহন, সংরক্ষণ ও যোগাযোগ খাতে ২৯০ দশমিক ১১ মিলিয়ন ডলার ও সেবা খাতে এসেছে ২০৮ দশমিক ৫২ মিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সাল শেষে দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ২০ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলার। এটি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় পাঁচ দশমিক এক শতাংশ কম। ২০২২ সালেও তা কমেছে। এটি ছিল ১৯ বছরের মধ্যে প্রথম কমতে থাকা।

ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি জাভেদ আখতার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বর্তমান কর ব্যবস্থায় কয়েকটি বিধান আছে যা ব্যবসায় অন্যায্য করের বোঝা তৈরি করছে। এই ধরনের নিয়ম বিনিয়োগ ও সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগে বিরূপ প্রভাব ফেলছে।'

'ব্যবসার ওপর আর্থিক বোঝা কমাতে এ ধরনের প্রতিকূল নিয়ম বদলানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি বিনিয়োগ ও বিনিয়োগ সহায়ক পরিবেশকে উত্সাহিত করবে,' যোগ করেন তিনি।

পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজও বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সরকারকে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়নের আহ্বান জানান।

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh tops sea arrivals to Italy in early 2025

According to the latest data from the United Nations High Commissioner for Refugees (UNHCR), 2,589 Bangladeshis landed in Italian shores in January and February this year while 1,206 went to the European country in the two months last year

1h ago