বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিজিটাল উদ্যোগে ধীরগতি

ভারতকে দেখে এই ডিজিটাল সেবাগুলো চালু করা হয়েছে। তবে গ্রাহকদের মধ্যে এমন সেবার চাহিদা আছে কি না, কতোটা ব্যবহার উপযোগী ও সময় উপযোগী করা উচিত তা জানার জন্য পর্যাপ্ত গবেষণা হয়নি।
অলঙ্করণ: আনোয়ার সোহেল/স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

সরকারের 'ক্যাশলেস' বাংলাদেশ গড়ার অংশ হিসেবে তিনটি বড় ডিজিটাল উদ্যোগ 'বিনিময়', 'বাংলা কিউআর' ও 'টাকাপে' চালু করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে এসব উদ্যোগে এখন খুব একটা সাড়া মিলছে না।

তাড়াহুড়ো করে চালু করা এবং ব্যবহার উপযোগী ফিচারের অভাবের পাশাপাশি এগুলোকে জনপ্রিয় করতে প্রচারণা না চালানোয় গ্রাহকদের কাছ থেকে তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

এ ছাড়া, এই কার্যক্রম বাস্তবায়নে প্রণোদনার অভাব ও ব্যাংকগুলোর অনিচ্ছা আছে বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

তারা আরও জানান, ভারতকে দেখে এই ডিজিটাল সেবাগুলো চালু করা হয়েছে। তবে গ্রাহকদের মধ্যে এমন সেবার চাহিদা আছে কি না, কতোটা ব্যবহার উপযোগী ও সময় উপযোগী করা উচিত তা জানার জন্য পর্যাপ্ত গবেষণা হয়নি।

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কিছু কারণে "বিনিময়" উদ্যোগটি প্রায় বন্ধ হয়ে আছে। এটি এখনো গ্রাহকবান্ধব ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম হতে পারেনি।'

তিনি মনে করেন, 'বাংলা কিউআর' ও 'টাকাপে'র শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠার সুযোগ অনেক। তবে তা জনপ্রিয় হতে সময় লাগবে।'

বিনিময়

মোবাইল আর্থিক পরিষেবা (এমএফএস) দেওয়া আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকগুলোকে ডিজিটাল লেনদেনে সক্ষম করতে ২০২২ সালের নভেম্বরে আন্তঃব্যবহারযোগ্য ডিজিটাল লেনদেন প্ল্যাটফর্ম 'বিনিময়' ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল। সরকারের আইসিটি বিভাগের ইনোভেশন ডিজাইন অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনারশিপ একাডেমি (আইডিয়া) বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় এই প্ল্যাটফর্মটি তৈরি করেছে।

ভারতের ইউনাইটেড পেমেন্ট ইন্টারফেসকে (ইউপিআই) মডেল হিসেবে নিয়ে 'আইডিয়া' বিনিময় প্ল্যাটফর্মকে প্রায় ৬৫ কোটি টাকায় ডেভেলপ করে। 'বিনিময়'-এ নিবন্ধনের মাধ্যমে গ্রাহকরা এমএফএস সেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করতে পারেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গ্রাহকবান্ধব ফিচার ও প্রচারণার অভাব এবং ব্যাংকগুলোর অনীহার কারণে "বিনিময়" প্ল্যাটফর্ম এখনো গ্রাহকদের কাছে প্রহণযোগ্য হয়ে উঠেনি।'

বর্তমানে আট ব্যাংক, তিন এমএফএস সেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠান ও দুটি পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সেবা দিচ্ছে।

ব্যাংকগুলো হলো—সোনালী, ব্র্যাক, ইউসিবি, ইস্টার্ন, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, পূবালী, আল-আরাফাহ ও মিডল্যান্ড এবং তিন এমএফএস সেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠান বিকাশ, রকেট ও এমক্যাশ।

২০২২ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৩ সালের মে মাসের মধ্যে এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ৯৯ হাজার ৪৯৮টি লেনদেন হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত বছরের জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত তা কমে হয়েছে ৮০ হাজার ৯৩৪টি।

২০২২ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৩ সালের মে পর্যন্ত লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২১ কোটি ২৫ লাখ টাকা। গত বছরের জুন থেকে নভেম্বরে মধ্যে তা কমে হয়েছে ১৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও পেমেন্ট সিস্টেমস বিভাগের নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক 'বিনিময়'-এ প্রত্যাশার তুলনায় ধীর লেনদেন ও নিবন্ধনের কথা স্বীকার করে বলেন, 'প্ল্যাটফর্মটি আপগ্রেড করা হচ্ছে।'

তিনি আরও বলেন, 'বেশকিছু ফিচার যুক্ত করা হচ্ছে। আন্তঃঅ্যাকাউন্ট লেনদেন সহজ করার বিষয়ে কাজ চলছে। আরও ফিচার যোগ করা হলে বেশি সংখ্যক ব্যাংক "বিনিময়"র সঙ্গে যুক্ত হতে আগ্রহী হবে।'

বাংলা কিউআর

গত বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ ব্যাংক নগদ লেনদেন কমাতে ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম 'বাংলা কিউআর' চালু করে। এক বছরেরও বেশি সময় হয়ে গেলেও বেশিরভাগ ব্যাংক তা গ্রহণ করেনি।

'বাংলা কিউআর' (কুইক-রেসপন্স কোড) মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপস, এমএফএস ও পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডারের মাধ্যমে পণ্য ও সেবার বিল পরিশোধে সহায়তা করে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাংলা কিউআরের মাধ্যমে লেনদেনের পরিমাণ আশানুরূপ নয়। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ব্যাংককে এই প্ল্যাটফর্মে ক্যাশলেস লেনদেন বাড়াতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।'

বেশিরভাগ ব্যাংকের ডিজিটাল সেবা দেওয়ার মতো অ্যাপ নেই। তিনি মনে করেন, 'এটা বড় বাধা।'

বাংলা কিউআর ব্যবহার করা ব্যাংকগুলোর মধ্যে ঢাকা ব্যাংক অন্যতম।

এই বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমরানুল হক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাংলা কিউআরের প্রচারণা আরও জোরালো করতে হবে। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে প্ল্যাটফর্মটির কার্যকর সেবা নিশ্চিত করতে হবে।'

গত মাসে সিএসআর (করপোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটি) অ্যাকাউন্টে বাংলা কিউআর'র মার্কেটিং সংক্রান্ত খরচ দেখানোর জন্য ব্যাংকগুলোকে অনুমতি দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

টাকাপে ডেবিট কার্ড

২০২৩ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তর্জাতিক কার্ডগুলোর ওপর নির্ভরতা কমাতে ও বিদেশে ভ্রমণের সময় পণ্য-পরিষেবার দাম মেটাতে ডলারের পরিবর্তে টাকা ব্যবহারের জন্য ডেবিট কার্ড 'টাকাপে' চালু করে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশে প্রথম এ ধরনের কার্ড চালু করেছে। আট ব্যাংককে এই কার্ড ইস্যু করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে ছয় মাসের বেশি হলেও এখনো বাণিজ্যিকভাবে এটি উদ্বোধন করা হয়নি।

ব্যাংক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কার্ডটি ম্যাগনেটিক স্ট্রাইপের ওপর তৈরি করা হয়েছে। এটি পুরোনো প্রযুক্তি। বিশ্বব্যাপী পর্যায়ক্রমে তা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। আরও সুরক্ষিত মাইক্রোচিপ প্রযুক্তি দিয়ে এটি বদলানো হচ্ছে। ফলে ব্যাংকগুলো কার্ডটি ইস্যু করেনি।

তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, 'কার্ড ইস্যু করতে কিছুটা সময় লাগবে। কারণ ব্যাংকগুলো এখন বাণিজ্যিকভাবে এটি চালু করতে তাদের প্রযুক্তি আপগ্রেড করছে।'

তিনি আরও বলেন, 'গ্রাহকদের বাড়তি নিরাপত্তা দিতে টাকাপেতে চিপ সংযোজন করা হবে, যাতে এটি গ্রাহকদের কাছে আরও গ্রহণযোগ্য হয়।'

Comments

The Daily Star  | English
Net foreign investment in stocks

Foreign investors returning to stock market

After a long time, foreign investors are showing renewed interest in buying shares of listed companies in Bangladesh as they hope good governance will return to the local stock market following the recent political changeover.

12h ago