বাংলাদেশের জন্য চীন এখনো বড় রপ্তানি-বাজার হতে পারেনি

বাংলাদেশ চীন বাণিজ্য
বাংলাদেশের ৯৮ শতাংশ পণ্যের ওপর শুল্কমুক্ত সুবিধা থাকলেও চীনে রপ্তানি তেমন বাড়েনি। ছবি: সংগৃহীত

গত এক দশক বা এরও বেশি সময় ধরে উদার অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা দিলেও চীন বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনাময় রপ্তানিবাজার হয়ে উঠতে পারেনি।

অন্যদিকে এশিয়ার দুটি শীর্ষ অর্থনীতির দেশ ভারত ও জাপান বিগত বছরগুলোয় বাংলাদেশের জন্য খুব ভালো রপ্তানিবাজার হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুসারে, সদ্য বিদায়ী অর্থবছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত জাপানে রপ্তানি এক দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা ছিল এক দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার।

একই সময়ে ভারতে রপ্তানি হয়েছে এক দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা ছিল দুই দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলার।

গত অর্থবছরের জুলাই-মে পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে চীনে পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৭৬১ দশমিক শূন্য দুই মিলিয়ন ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা ছিল ৬৭৭ দশমিক ৩৫ মিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশের ৯৮ শতাংশ পণ্যের ওপর শুল্কমুক্ত সুবিধা থাকা সত্ত্বেও চীনে রপ্তানি তেমন বাড়েনি।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, চীন শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের বৃহত্তম আমদানি-বাজারে পরিণত হয়েছে। প্রতি বছর সেখান থেকে আমদানি হচ্ছে ২৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি।

২০১৫ সালে চীন কয়েকটি স্বল্পোন্নত দেশে তাদের পণ্যের ৯৭ শতাংশ পর্যন্ত বাণিজ্য সুবিধার বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়। পরে বাংলাদেশের জন্য তা ৯৮ শতাংশে বাড়ানো হয়।

রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (আরএপিআইডি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাকের গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের আমদানিতে চীনের অংশ ২০২১-২২ অর্থবছরে ১০ দশমিক তিন শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২৬ দশমিক চার শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে চীন থেকে আমদানি প্রায় এক বিলিয়ন ডলার বেড়ে সাড়ে ২৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি হয়েছে। চীন থেকে আমদানি বাংলাদেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ও দেশীয় শিল্পের পাশাপাশি ক্রেতাদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।

চীন থেকে আমদানির উল্লেখযোগ্য অংশ শুল্কমুক্ত বন্ডেড ওয়্যারহাউসের মাধ্যমে আসে। কারণ সেগুলো রপ্তানি শিল্পে ব্যবহার করা হয়।

চীনে রপ্তানি না বাড়ার অন্যতম প্রধান কারণ পণ্য বহুমুখীকরণের অভাব।

কারণ চীন নিজেই বিশ্বের বৃহত্তম পোশাক ও বস্ত্র সরবরাহকারী দেশ। বিশ্ববাজারের প্রায় ৩২ শতাংশ দখল করে আছে মহাপ্রাচীরের দেশটি।

চীন বছরে ১০ বিলিয়ন ডলারের পোশাক আমদানি করে। বাংলাদেশের মোট রপ্তানির ৮৪ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক থেকে।

বাণিজ্য-বিনিয়োগ বাড়াতে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) সইয়ের জন্য দুই দেশের আলোচনার প্রস্তুতি চলছে। আগামী সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেইজিং সফরে প্রথম দফার আলোচনা হতে পারে।

বর্তমানে চীনের মোট আমদানির মাত্র শূন্য দশমিক শূন্য চার শতাংশ আসে বাংলাদেশ থেকে। মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক তার গবেষণায় বলেন, 'এটি এক শতাংশ হলে চীনে বাংলাদেশের রপ্তানি দাঁড়াবে ২৬ বিলিয়ন ডলার।'

তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে চীনে বাংলাদেশের বাজার মাত্র চার শতাংশ। এর বিপরীতে ভিয়েতনামের বাজার ১৮ শতাংশ।

বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী খাতগুলোয় চীনের বিনিয়োগ খুবই সহায়ক হবে বলেও গবেষণায় বলা হয়েছে।

ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় রপ্তানিমুখী পণ্য উৎপাদনে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ আদর্শ হতে পারে।

দেশের মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি রপ্তানি স্বার্থ বিবেচনায় চীনের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি অনেক লাভজনক হবে। এ ধরনের চুক্তিতে সেবা খাতে প্রযুক্তি হস্তান্তর ও বাণিজ্য বাড়ানোর দিকে যথাযথ নজর দিতে হবে।

তবে চীনে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়াতে হবে উল্লেখ করে গবেষণায় আরও বলা হয়, দেশের রপ্তানি খাতে পরিপূরক বিনিয়োগ আসার বিধানসহ চীনের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করা হলে তা খুবই কার্যকর হবে।

একই সঙ্গে চীনের উচিত বাংলাদেশের জন্য শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা বাড়ানো। মুক্ত বাণিজ্যে দেশের অনুকূলে 'লেস-দ্যান ফুল রেসিপ্রোসিটি' নীতি অনুসরণ করতে হবে।

বাংলাদেশ চায়না চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সেক্রেটারি জেনারেল আল মামুন মৃধা গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি হলে শুল্কমুক্ত সুবিধা পুরোপুরি নেওয়া যাবে।'

বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি বেশি হওয়ায় দেশের রপ্তানিকারকরা বিশেষ করে পোশাক রপ্তানিকারকরা চীন থেকে কাঁচামাল এনে অন্য দেশে আবার রপ্তানি করেন।

Comments

The Daily Star  | English

Eid meat: A day of sharing for some, a day of struggle for others

While the well-off fulfilled their religious duty by sacrificing cows and goats, crowds of people -- less fortunate and often overlooked -- stood patiently outside gates, waiting for a small share of meat they could take home to their families

1h ago