কোটা আন্দোলন ঘিরে অচলাবস্থায় বিপর্যস্ত ঢাকার বিলাসবহুল হোটেল ব্যবসা

কোটা আন্দোলন
হোটেল মালিকরা জানিয়েছেন সাম্প্রতিক ঘটনায় অতিথির সংখ্যা অনেক কমেছে। ছবি: আনিসুর রহমান/স্টার

শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনায় দেশি-বিদেশি অতিথিরা ভ্রমণ এড়িয়ে চলায় ঢাকার বিলাসবহুল হোটেলগুলোয় ব্যাপক গ্রাহক সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এছাড়াও, সরকার দেশব্যাপী কারফিউ দেওয়ায় সবার নির্বিঘ্ন যাতায়াত ব্যাহত হওয়ার কারণটিও সামনে এনেছেন তারা।

হোটেল মালিকরা দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, চলতি জুলাইয়ের মাঝামাঝি অগ্রিম কক্ষ বুকিং বাতিলের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০ শতাংশেরও বেশি।

তারা আরও জানান, হোটেলে অতিথির সংখ্যা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কমে ১০ শতাংশে এসে পৌঁছেছে।

কর্পোরেট মিটিং, কনফারেন্স ও প্রদর্শনীর জন্য রুম ও হল বুকিং বাতিল হয়েছে।

সরকারি চাকরিতে মেধাবী শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বাড়ানোর দাবি জানিয়ে চলতি মাসের শুরুতে কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।

ডেইলি স্টারের তথ্য অনুসারে, গত ১৬ জুলাই থেকে এ পর্যন্ত সহিংসতায় অন্তত ১৬৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন।

ঢাকা রিজেন্সি হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট লিমিটেডের বিক্রয় ও বিপণন পরিচালক মাহমুদ হাসান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত ১৮ জুলাই থেকে অনেকেই বুকিং বাতিল করতে শুরু করেন।'

গতকাল পর্যন্ত নতুন কোনো অতিথি পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'বর্তমানে আমাদের মাত্র ৩৫ শতাংশ কক্ষে অতিথি আছে।

'বেশ কয়েকটি জাতীয় ও স্থানীয় অনুষ্ঠানের জন্য বেশিরভাগ হোটেল কক্ষ বুক করা ছিল। কিন্তু শিক্ষার্থীদের সাম্প্রতিক আন্দোলনে ব্যাপক প্রাণহানির কারণে সবকিছু বাতিল করা হয়েছে। এটি আমাদের ব্যবসার ওপর বড় খারাপ প্রভাব ফেলেছে।"

"প্রতিদিনের রক্ষণাবেক্ষণের খরচ ক্ষতি বাড়িয়ে দিচ্ছে।'

এই প্রেক্ষাপটে মাহমুদ হাসান বলেন, 'কারফিউ তুলে না নেওয়া পর্যন্ত বাজার কীভাবে ঘুরে দাঁড়াবে তা বলা সম্ভব নয়।'

নাম প্রকাশ না করার শর্তে উত্তরার এক বিলাসবহুল হোটেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত ১৯ জুলাই থেকে অতিথি কমতে শুরু করেছে। অগ্রিম বুকিং ৮০ শতাংশ কমে গেছে। আগস্টের বুকিং বাতিল করা হয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'এখনকার মতো এত খারাপ ব্যবসা এর আগে কখনো ছিল না।'

একই কথা বলেছেন রেডিসন ব্লু ঢাকা ওয়াটার গার্ডেনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, 'যে সংখ্যক অতিথি পাচ্ছি তা দিয়ে আমাদের হোটেলের দৈনিক রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিচালন খরচ মেটানো যাচ্ছে না। কবে নাগাদ এই পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পারব তা বলা যাচ্ছে না।'

গত ১৫ থেকে ২০ জুলাইয়ের মধ্যে সব ইভেন্টের বুকিং বাতিল হয়েছে উল্লেখ করে প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও ঢাকার জনসংযোগ ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ নাফেউজ্জামান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কারফিউয়ের প্রথম কয়েকদিন নতুন অতিথি আসেননি। তবে এখন অতিথিদের উপস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসছে।'

এদিকে গোল্ডেন টিউলিপ-দ্য গ্র্যান্ডমার্ক ঢাকার ব্যবস্থাপক সৈয়দ হক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত ১৭ জুলাই থেকে রুম ও ইভেন্টের বুকিং বাতিল করা হচ্ছে।'

তিনি জানান, ওই দিনের পর এখন পর্যন্ত একটি মাত্র বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তা ছাড়া এই সময়ে হোটেলে কোনও অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়নি।

'বর্তমানে মাত্র ছয়টি রুম বুকিং আছে। পুরো হোটেল কার্যত ফাঁকা,' যোগ করেন তিনি।

দেশের নানান প্রকল্পে কাজ করা ইউরোপীয়, ভারতীয় ও চীনা নাগরিকদের জন্য পুরো এক বছরের রুম বুক করা আছে জানিয়ে তিনি বলেন, 'পরিস্থিতি দেখে তারা হোটেল ছেড়ে চলে গিয়েছেন।'

সৈয়দ হক আরও বলেন, 'আমাদের কয়েকজন কর্মচারীর বার্ষিক ছুটি পাওনা হওয়ায় খরচ কমাতে তাদের ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। সে হিসেবে সীমিত জনবল নিয়ে হোটেলের কার্যক্রম চলছে।'

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, দেশে ১৭টি পাঁচতারা মানের হোটেল আছে।

Comments

The Daily Star  | English

Private airlines caught in a bind

Bangladesh’s private airline industry is struggling to stay afloat, hobbled by soaring fuel prices, punitive surcharges, and what operators describe as unfavourable policies. Of the 10 private carriers that have entered the market over the past three decades, only two -- US-Bangla Airlines and A

8h ago