আরও বাড়ছে ঋণের সুদ, বিনিয়োগ নিয়ে চিন্তায় ব্যবসায়ীরা

খেলাপি ঋণ, ব্যাংক, বাংলাদেশ ব্যাংক,
স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় আরও একবার নীতি সুদহার বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে ঋণের সুদ বাড়বে। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ উদ্যোগ নিয়ে উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীরা। তাদের যুক্তি, ঋণের সুদ বাড়লে তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রমে চাপ বাড়বে। এছাড়া নতুন বিনিয়োগের পরিকল্পনা থেকে হয়তো সরে আসতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল নীতি সুদহার ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করেছে। এ নিয়ে চলতি বছরে পঞ্চমবারের মতো ও গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সময়ে তৃতীয়বারের মতো নীতি সুদহার বা পলিসি রেট বাড়ানো হলো। একে রেপো রেটও বলা হয়।

মূলত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে যে সুদের হারে ঋণ নিয়ে থাকে তাকে রেপো রেট বা নীতি সুদহার বলা হয়। এখানে উল্লেখ্য, এবারই প্রথম মূল্যস্ফীতির হারকে ছাড়িয়ে গেছে নীতি সুদহার।

মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে ঋণপত্র খোলার পরিমাণ কমা ও বেসরকারি বিনিয়োগে মন্দার মধ্যে নতুন করে নীতি সুদহার বাড়ানো হলো, যা আগামী ২৭ অক্টোবর থেকে কার্যকর হবে।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, জুলাই-আগস্ট সময়ে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে ঋণপত্র খোলার পরিমাণ আগের বছরের চেয়ে ৪৪ শতাংশ কমে ২৮৫ দশমিক ৫৬ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, 'নতুন সুদহার মূল্যস্ফীতি কমাবে বলে আমি মনে করি না। বরং এতে শিল্পের ভোগান্তি বাড়বে ও বিনিয়োগকারীরা ঋণ খেলাপি হতে পারেন।'

তিনি আরও বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ সিদ্ধান্তের ফলে বছরের ব্যবধানে শিল্প ঋণের ব্যয় প্রায় ১৭ শতাংশ বেড়েছে।

তিনি প্রশ্ন করেন, এত ঋণ ব্যয় নিয়ে উদ্যোক্তারা কীভাবে টিকে থাকবেন?

তাই ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ অমূলক নয় বলে জানান তিনি।

বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট অনুযায়ী, মূল্যস্ফীতির চাপ, অস্থিতিশীল অর্থনীতি এবং অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে বেসরকারি ভোগ, বিনিয়োগ ও রপ্তানি প্রবৃদ্ধি কমে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রির (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কঠোর নীতি আরোপ করলেও শেষ পর্যন্ত তা বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে 'আত্মঘাতী ফল' বয়ে আনতে পারে।

তিনি মনে করেন, তিনটি বিষয় মূলত বেসরকারি বিনিয়োগকে শ্লথ করতে পারে যথাক্রমে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি, অসামঞ্জস্যপূর্ণ জ্বালানি সরবরাহ এবং উচ্চ সুদহার।

'বর্তমান পরিস্থিতিতে এই সমস্যাগুলো মোকাবিলা করতে হচ্ছে। খুব শিগগির ব্যবসায়ের পরিবেশের উন্নতি হবে এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। এ পরিস্থিতিতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যয় কমিয়ে আর্থিক ক্ষতি এড়ানোর চেষ্টা করে,' বলেন তিনি।

তিনি বলেন, 'আমি বিশ্বাস করি, বিনিয়োগকারীরা এ মুহূর্তে নতুন বিনিয়োগের ঝুঁকি নেবেন না।'

বিসিআই সভাপতি জানান, ক্রমবর্ধমান সুদহার ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং মূল্যস্ফীতি কমার পরিবর্তে সাধারণ জনগণের ক্রয় ক্ষমতা কমে যাবে।

তিনি যুক্তি দেখান, নীতি সংকোচনের তত্ত্ব যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মতো আমদানিভিত্তিক অর্থনীতিতে বেশি কার্যকর, কিন্তু বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে কম।

অবশ্য মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে বাংলাদেশকে কঠোর নীতি মেনে চলার পরামর্শ দিচ্ছে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) মতো বহুপাক্ষিক ঋণদাতারা।

তাই গত আগস্টে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর ও আইএমএফের সাবেক অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় সুদহার বাড়ানো অব্যাহত রেখেছেন।

তবে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশের (আইবিএফবি) সভাপতি হুমায়ুন রশিদ বলেন, আইএমএফের পরামর্শ অন্ধভাবে অনুসরণ করলে সব সমস্যার সমাধান হবে না।

তার ভাষ্য, নতুন সুদহার জনগণের আস্থা আরও নষ্ট করবে, কারণ সামনের দিনগুলোতে পণ্যের দাম বাড়তে থাকবে। এছাড়া সুদের হার বৃদ্ধি বিনিয়োগকারীদের নতুন বিনিয়োগ করতে নিরুৎসাহিত করবে। কারণ বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিনিয়োগের আগ্রহ কম। তাই এতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে।

তিনি বলেন, 'নতুন বিনিয়োগ না হলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হুমকির মুখে পড়বে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তের ফলে ব্যবসা করার খরচ বাড়বে এবং একটি নির্দিষ্ট সীমা ছাড়িয়ে গেলে ব্যবসায়ীরা নতুন বিনিয়োগ করবে না।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, নতুন করে সুদের হার বৃদ্ধির ফলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য ঋণ নেওয়ার খরচ বাড়বে এবং ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট দেখা দেবে। এতে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহ কমে যেতে পারে।

Comments

The Daily Star  | English

NBR plans to roll back tax benefits for exporters

The prospect of reduced tax benefits has rattled exporters, already wrestling with shifting global trade dynamics, including fresh US tariffs

11h ago