ডিসেম্বরে পাওয়া বিদেশি ঋণে মিললো স্বস্তি

অলঙ্করণ: আনোয়ার সোহেল/স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

গত ডিসেম্বরে বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এক দশমিক এক বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে। ফলে কিছুটা স্বস্তিতে সরকার।

গত মাসে সরকার প্রায় দুই বিলিয়ন ডলার ঋণ পেয়েছে। এর আগের পাঁচ মাসের ঋণ পাওয়ার গড় ছিল ৩০৯ মিলিয়ন ডলার।

গত জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে মোট বিদেশি ঋণ এসেছিল তিন দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলার। নভেম্বরে এসেছিল এক দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার।

গত ছয় মাসে সবচেয়ে বেশি ঋণ এসেছে এডিবি থেকে। এর পরিমাণ এক দশমিক শূন্য পাঁচ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ডিসেম্বরে বাজেট সহায়তা হিসেবে এসেছে ৬০০ মিলিয়ন ডলার। বিশ্বব্যাংক দিয়েছে ৮০০ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ডিসেম্বরে ৫০০ মিলিয়ন ডলার এসেছে বাজেট সহায়তা হিসেবে।

এ ছাড়া, গত ছয় মাসে রাশিয়া ৫৩২ মিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে। এটি দেওয়া হয়েছে মূলত রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য। এ ছাড়াও, জাপান ঋণ দিয়েছে ৪৪১ মিলিয়ন ডলার, চীন দিয়েছে ২৬৮ মিলিয়ন ডলার ও ভারত দিয়েছে ৭২ মিলিয়ন ডলার।

তবে ডিসেম্বরে এত ঋণ পাওয়া সত্ত্বেও তা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩ শতাংশ কম। সেসময় বিদেশি ঋণ এসেছিল চার দশমিক শূন্য ছয় বিলিয়ন ডলার।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে দেশের বিদেশি ঋণ পরিশোধ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৭ শতাংশ বেড়েছে।

চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশটি মূল ঋণ ও সুদ বাবদ এক দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছে। এর আগের অর্থবছরে একই সময়ে তা ছিল এক দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার।

টাকার হিসাবে পাওনা ১৭ হাজার ২৪০ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ২৩ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা হয়েছে। এটি সরকারি অর্থায়নের ওপর চাপ বাড়িয়ে দিয়েছে।

মূল ঋণ পরিশোধ ৩৩ শতাংশ বেড়ে এক দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। সুদ পরিশোধ ১৬ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৭৪৭ মিলিয়ন ডলার।

বিদেশি ঋণের প্রতিশ্রুতি দ্রুত কমে যাওয়ায় আর্থিক চাপ বাড়ছে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে অনুদান ও ঋণের প্রতিশ্রুতি কমছে। এটি এর আগের অর্থবছরের ছয় দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় ৬৭ শতাংশ কমে দুই দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।

ঋণের প্রতিশ্রুতি ছয় দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার থেকে কমে হয়েছে দুই বিলিয়ন ডলার। অনুদানের প্রতিশ্রুতি ৪১০ মিলিয়ন ডলার থেকে কমে হয়েছে ২৮৯ মিলিয়ন ডলার।

বিদেশি ঋণের প্রতিশ্রুতি কমে যাওয়ায় অর্থনীতিবিদরা ঋণ পরিশোধের সময়সীমা ও সুদহার পুনর্বিবেচনার পাশাপাশি বিদেশি অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

ক্রমবর্ধমান ঋণের দায়বদ্ধতা, ক্রমহ্রাসমান বিদেশি ঋণের প্রতিশ্রুতি ও কম রাজস্ব আদায়ের কারণে দেশের রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিশাল সংকটের মুখে দাঁড়িয়েছে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মানীয় ফেলো মুস্তাফুজুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গ্রেস পিরিয়ড শেষ হওয়ায় ঋণ পরিশোধের খরচ প্রত্যাশিত ছিল। এটি রিজার্ভের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে।'

চীনের সঙ্গে সাম্প্রতিক আলোচনার কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'যদিও পুনরায় সমঝোতা এটি চ্যালেঞ্জিং বিষয়, তবে আমাদের সুদহার ও পরিশোধের সময়কাল নিয়ে আবার আলোচনার চেষ্টা করা উচিত। এটা ভালো দিক যে সরকার এখন সমস্যাটি সমাধানের চেষ্টা করছে।'

তিনি মনে করেন, আলোচনার সক্ষমতা জোরদার করার পাশাপাশি সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করাই টেকসই পথ।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) প্রধান অর্থনীতিবিদ আশিকুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঋণ পরিশোধের বোঝা দেশের জন্য ঝুঁকি তৈরি করবে না। কারণ রপ্তানি-রেমিট্যান্স আয় ভালো হলে বিদেশি ঋণের প্রয়োজনীয়তা কমতে পারে।'

তিনি আরও বলেন, 'প্রথম ছয় মাসে যে পরিমাণ ঋণ পরিশোধ হয়েছে তা রপ্তানি ও রেমিট্যান্স আয়ের মাত্র পাঁচ দশমিক ছয় শতাংশ। অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য এটি উদ্বেগের কারণ হওয়া উচিত নয়।'

চলতি অর্থবছরে রপ্তানি-রেমিট্যান্স আয় ৭৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। ঋণ পরিশোধ চার থেকে পাঁচ বিলিয়ন ডলার হলেও তা দেশকে খেলাপি হওয়ার ঝুঁকিতে ফেলবে না বলে মনে করেন তিনি।

ডলারের বিপরীতে টাকার দাম কমে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। অতিরিক্ত পরিমাণে বিদেশি ঋণ পরিশোধ দেশে আর্থিক চাপ বাড়াতে পারে। অর্থ মন্ত্রণালয় রাজস্ব আদায়ের উদ্যোগকে সহজ করে চলেছে। এটি সরকারকে এই অতিরিক্ত চাপ সামলাতে সহায়তা করবে।

তবে রাজস্ব আদায়ের হার খুব একটা আশার আলো দেখাচ্ছে না।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বরে মধ্যে রাজস্ব আদায় আগের অর্থবছরে একই সময়ের তুলনায় প্রায় শূন্য দশমিক ৯৮ শতাংশ কম।

Comments

The Daily Star  | English

Disrupting office work: Govt employees can be punished within 8 days

The interim government has moved to amend the Government Service Act-2018 to allow swift disciplinary action against its employees who will be found guilty of disrupting official activities.

7h ago