দুবাইয়ে বাংলাদেশিদের মালিকানাধীন কয়েক ডজন সম্পত্তির খোঁজ পেয়েছে এনবিআর

সর্বোচ্চ ভ্যাটদাতা, মূল্য সংযোজন কর, ভ্যাট, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, এনবিআর,ওয়ালটন, বিকাশ, নগদ, আড়ং,
ফাইল ছবি

দুবাইয়ে বাংলাদেশিদের মালিকানাধীন বেশ কয়েক ডজন সম্পত্তি শনাক্ত করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

এ বিষয়ে অবগত এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বাংলাদেশি নাগরিকরা বিদেশি সম্পদের ওপর যথাযথভাবে কর দিচ্ছে কি না এবং বিদেশে তাদের সম্পদের উৎস শনাক্ত করতে সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) কর গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের দুটি দল পাঠানোর দুই মাস পর এ বিষয়টি সামনে এলো।

এক এনবিআর কর্মকর্তা বলেন, 'সাইট পরিদর্শনের সময় আমরা দুবাইয়ে বাংলাদেশিদের মালিকানাধীন বেশ কয়েক ডজন সম্পত্তি খুঁজে পেয়েছি।'

ইউরোপীয় ইউনিয়নের ট্যাক্স অবজারভেটরির ২০২১ সালের এক হিসাবে বলা হয়েছে, দুবাইয়ে বাংলাদেশিদের মালিকানাধীন সম্পত্তির পরিমাণ ২৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩ হাজার ১১৪ কোটি টাকা।

এর আগে দ্য ডেইলি স্টার নিজস্ব অনুসন্ধানে দুবাইয়ে ৪৬১ বাংলাদেশির নামে নিবন্ধিত ৯২৯টি সম্পত্তির খোঁজ পেয়েছে। এর মধ্যে ২৫৯টি সম্পত্তি রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও ব্যাংকারদের নামে।

এই ৪৬১ জনের নাম ও তাদের সম্পত্তির তালিকা ওয়াশিংটনভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা দ্য সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড ডিফেন্স স্টাডিজের ২০২০ ও ২০২২ সালের তথ্যের ভিত্তিতে প্রস্তুত করা হয়েছে।

এনবিআর কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তারা শুধু দুবাই নয়, লন্ডনসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোকেও পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। 'এটা বেশ বড় তদন্ত। শুধু দুবাইয়ে তদন্ত করেই কাজ শেষ হচ্ছে না। আমরা যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর ও অন্যান্য দেশেও কাজ করছি।'

এনবিআরের তদন্ত কার্যক্রমের তালিকায় রয়েছেন আল হারামাইন পারফিউমসের মালিক মোহাম্মদ মাহতাবুর রহমান নাসির। তার বিরুদ্ধে পারফিউম ব্যবসা ও আমদানি-রপ্তানির আড়ালে হুন্ডির মাধ্যমে অবৈধ অর্থ স্থানান্তর ও কর ফাঁকির অভিযোগ রয়েছে।

যদিও সিলেটের প্রভাবশালী এই ব্যবসায়ী সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

এনবিআরের এক কর্মকর্তা বলেন, 'আমরা তার সিলেটের বাসভবন "কাজী ক্যাসল"-এ অভিযান চালিয়েছি এবং গুরুত্বপূর্ণ নথি সংগ্রহ করেছি। এগুলোর সত্যতা যাচাই করা হচ্ছে।'

এসব নথির মধ্যে নাসির ও তার পরিবারের নামে ১০৪টি জমির দলিল পাওয়া গেছে।

এনবিআর জানতে পেরেছে, তার জমির বাজারমূল্য ও ট্যাক্স রিটার্নে ঘোষিত মূল্যের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।

কর গোয়েন্দারা দুবাই ও শারজাহতে নাসিরের নামে বেশ কয়েকটি সম্পত্তিরও সন্ধান পেয়েছেন, যার মধ্যে একটি বড় শোরুমও রয়েছে।

গত ২২ জানুয়ারি এনবিআর নাসির ও তার পরিবারের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করেছে।

তাদের কর দেওয়ার তথ্য পর্যালোচনা করা হচ্ছে এবং ভূমি রেজিস্ট্রি অফিসগুলোকে বিস্তারিত তথ্য সরবরাহ করতে বলা হয়েছে।

নাসির এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি বাংলাদেশের আইন মেনে বিনিয়োগ করেছেন।

সৌদি আরব থেকে টেলিফোনে দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'আমি দীর্ঘদিন ধরে মধ্যপ্রাচ্যে ব্যবসা করছি। আজ পর্যন্ত কোনো ব্যাংক থেকে ঋণ নেইনি এবং অবৈধ কোনো কর্মকাণ্ডে জড়াইনি। হুন্ডির বিষয়ে বলব, আমি এটাকে সবচেয়ে বড় শত্রু মনে করি।'

তিনি বলেন, 'মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব, ওমান, কুয়েত, কাতার, বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে আমরা ব্যবসা পরিচালনা করি। এ ছাড়া, আমাদের যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে অফিস রয়েছে।'

১০৪টি জমির দলিল প্রসঙ্গে নাসির বলেন, 'এসব জমির বেশিরভাগ আমার বাবা ২০০৮ সালে আমাদের গ্রামে কিনেছিলেন।'

তিনি বলেন, 'আমাদের বেশিরভাগ সম্পত্তি কর রেকর্ডে যথাযথভাবে ঘোষণা করা আছে। যদি কিছু না থেকে থাকে, আমি প্রয়োজনীয় সব তথ্য দিতে প্রস্তুত।'

এনবিআর শিগগির তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করবে।

Comments

The Daily Star  | English

Step up diplomacy as US tariff clock ticks away

Bangladesh must intensify trade diplomacy to protect garment exports from steep US tariffs as the clock runs down on a three-month reprieve, business leaders warned yesterday.

9h ago