‘এন্ড্রু কিশোরের সঙ্গে যদি দেখা হতো, হাত ধরে বাসায় নিয়ে আসতাম’

এন্ড্রু কিশোর । স্টার ফাইল ফটো

কিংবদন্তি প্লেব্যাক সম্রাট এন্ড্রু কিশোরের পঞ্চম প্রয়াণ দিন আজ। ২০২০ সালের এদিনে থেমে যায় তার সুরের পথচলা। বেঁচে থাকতে চার দশকের বেশি সময় ধরে বাংলা গানে রাজত্ব করেছেন এই কণ্ঠশিল্পী। অসংখ্য কালজয়ী গান উপহার দিয়েছেন তিনি।

এন্ড্রু কিশোরকে নিয়ে বরেণ্য কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'একজন বড় মাপের শিল্পী বলতে যা বুঝি সেটা ছিলেন তিনি। এমন শিল্পী চলচ্চিত্রে আর আসবে না। চলচ্চিত্রের গানের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে তার নাম।'

তার ভাষ্য, 'এখন যদি এন্ড্রু কিশোরের সঙ্গে দেখা হতো কিছুই বলতাম না। হাত ধরে বাসায় নিয়ে আসতাম। আমার সংগীত জীবনে অসংখ্য স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই মানুষটার সাথে। কতো যে গান গেয়েছি দুজনে তার হিসাব নাই। এমন শিল্পী যুগে যুগে আসে না।'

১৯৫৫ সালের ৪ নভেম্বর রাজশাহী জেলায় জন্মগ্রহণ করেন এন্ড্রু কিশোর। তার পিতা ক্ষীতিশ চন্দ্র বাড়ৈ এবং মাতা মিনু বাড়ৈ। শৈশব ও কৈশোর কেটেছে রাজশাহীতে। সেখানেই গানের ওস্তাদ আবদুল আজিজ বাচ্চুর অধীনে 'সুরবাণী' গানের স্কুলে প্রাথমিকভাবে সংগীত শিক্ষা নেন।

গুণী এই শিল্পী চার দশক ধরে সিনেমার গানে জড়িয়ে ছিলেন। ১৯৭৭ সালে আলম খানের সুরে 'মেইল ট্রেন' সিনেমায় 'অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তার কেউ' গান দিয়ে আত্মপ্রকাশ করেন এন্ড্রু কিশোর। এরপর মুকুল চৌধুরীর কথায় ও আলম খানের সুরে 'এক চোর যায় চলে' গানের পর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

বাংলা সিনেমায় সর্বাধিক ১৫ হাজার গানে প্লেব্যাক করেছেন। চলচ্চিত্রে তার চেয়ে বেশি জনপ্রিয় গান আর কারো নেই। এজন্য তিনি পেয়েছেন প্লেব্যাক সম্রাট উপাধি।

তার গাওয়া উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে রয়েছে, আমার সারা দেহ খেও গো মাটি, আমার বুকের মধ্যেখানে, হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস, আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন, ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে, আমার গরুর গাড়িতে, তোমায় দেখলে মনে হয়, পড়ে না চোখের পলক, প্রেমের সমাধি ভেঙে, সবাই তো ভালোবাসা চায়, ভালো আছি ভালো থেকো, ভালোবেসে গেলাম শুধু ভালোবাসা পেলাম না, বেদের মেয়ে জোছনা আমায়, তুমি ছিলে মেঘে ঢাকা চাঁদ, পৃথিবীর যত সুখ আমি তোমার মাঝে খুঁজে পেয়েছি, আমি একদিন তোমায় না দেখিলে, জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প, তুমি আজ কথা দিয়েছ, কী যাদু করেছো বলো না, এক বিন্দু ভালোবাসা দাও ইত্যাদি।

আট বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন এন্ড্রু কিশোর। ১৯৮২ সালে 'বড় ভালো লোক ছিল' চলচ্চিত্রের 'হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস' গানের জন্য তিনি প্রথম জাতীয় পুরস্কার পান। সৈয়দ শামসুল হকের কথায় গানটির সুরকার ছিলেন আলম খান। এরপর একে একে ক্ষতিপূরণ (১৯৮৯) চলচ্চিত্রে 'আমি পথ চলি একা এই দুটি ছোট্ট হাতে', পদ্মা মেঘনা যমুনা (১৯৯১) চলচ্চিত্রে 'দুঃখ বিনা হয় না সাধনা', কবুল (১৯৯৬) চলচ্চিত্রে 'এসো একবার দুজনে আবার', আজ গায়ে হলুদ (২০০০) চলচ্চিত্রে 'চোখ যে মনের কথা বলে', সাজঘর (২০০৭) চলচ্চিত্রে 'সাজঘর', কী জাদু করিলা (২০০৮) চলচ্চিত্রে 'কী জাদু করিলা' গানের জন্য শ্রেষ্ঠ গায়ক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।

ভারতের খ্যাতিমান সংগীত পরিচালক আর ডি বর্মণের সুরে 'সুরজ' সিনেমায় এন্ড্রু কিশোর হিন্দি গান গেয়েছিলেন। এ ছাড়া তার সুরে আরও দুটি বাংলা গান করেছেন।

Comments

The Daily Star  | English

Will resign if any pressure from govt regarding polls: CEC

He has issued a stern warning against any kind of irregularity ahead of the polls

11m ago