ধর্মঘটে হলিউডের দেড় লাখের বেশি অভিনয়শিল্পী, ‘চলতে পারে বছরজুড়ে’

নায্য পারিশ্রমিকসহ অন্যান্য দাবিতে চিত্রনাট্যকারদের সঙ্গে ধর্মঘটে যোগ দিয়েছেন হলিউডের অভিনেতাদের ইউনিয়ন।
কার্লিফোনিয়ার লস এঞ্জেলসে অভিনয়শিল্পীদের সংগঠন দ্য স্ক্রিন অ্যাক্টর গিল্ড (সেগ-আফট্রা) ও লেখকদের সংগঠন রাইটার্স গিল্ড অব আমেরিকার (ডব্লিউজিএ) সদস্যদের বিক্ষোভ। রয়টার্স ফাইল ফটো

নায্য পারিশ্রমিকসহ অন্যান্য দাবিতে চিত্রনাট্যকারদের সঙ্গে ধর্মঘটে যোগ দিয়েছেন হলিউডের অভিনেতাদের ইউনিয়ন।

রাইটার্স গিল্ড অফ আমেরিকা (ডব্লিউজিএ) এর সাড়ে ১১ হাজার সদস্যের সঙ্গে ধর্মঘটে যোগ দিয়েছে ছোট ও বড় পর্দার প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার অভিনয়শিল্পী। ধর্মঘট চলাকালে তারা কোনো সিনেমার শুটিং করবেন না বা সিনেমার প্রচারেও অংশ নেবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

বিবিসি জানায়, অভিনয়শিল্পীদের যোগ দেওয়ার ফলে গত ৬০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় অচলাবস্থার পরিস্থিতি তৈরি হতে যাচ্ছে হলিউডে।

সর্বশেষ জেসন সুদেকিস, সুজান সারান্ডনের মতো বড় বড় শিল্পীদেরও প্ল্যাকার্ড হাতে রাস্তায় নেমে আসতে দেখা গেছে।

এইচবিওর 'সাকসেশন' সিরিজের প্রধান অভিনেতা ব্রায়ান কক্স বলেছেন, ধর্মঘট 'বছরের শেষ পর্যন্ত' চলতে পারে। তিনি বলেন, 'পুরো স্ট্রিমিং ব্যবস্থা ইন্ডাস্ট্রির চিত্র পাল্টে দিয়েছে। তারা আমাদের উপেক্ষা করার চেষ্টা করছে এবং আমাদের হাত-পা বেঁধে মাটিতে ফেলে দিতে চাইছে। স্ট্রিমিংয়ে তারা প্রচুর অর্থ উপার্জন করতে চায় এবং তারা এর ভাগ লেখক বা অভিনয়শিলীদের দিতে চায় না।'

গত বৃহস্পতিবার ধর্মঘট ঘোষণার সময় ‘ওপেনহাইমার’ ছবির প্রচারণা চলছিল। ঘোষণা আসা মাত্রই অনুষ্ঠান থামিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে যান কিলিয়ান মর্ফি, এমিলি ব্লান্ট ও ফ্লোরেন্স পিউ। ছবি: রয়টার্স

গত বৃহস্পতিবার ধর্মঘট ঘোষণার সময় 'ওপেনহাইমার' ছবির প্রচারণা চলছিল। ঘোষণা আসা মাত্রই অনুষ্ঠান থামিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে যান কিলিয়ান মর্ফি, এমিলি ব্লান্ট ও ফ্লোরেন্স পিউ। এরপরই ধর্মঘট নতুন রূপ পায়।

অভিনয়শিল্পীদের এই ধর্মঘটের কারণে বছরজুড়ে মুক্তি পেতে যাওয়া সিনেমা ও টিভি শো প্রভাবিত হতে যাচ্ছে। প্রভাব পড়তে পারে 'অ্যাভাটার', 'ডেডপুল' 'গ্ল্যাডিয়েটরে'র সিক্যুয়েলসহ বড় বাজেটের সিনেমা কিংবা 'স্ট্রেঞ্জার থিংস', 'ফ্যামিলি গাই' এবং 'দ্য সিম্পসনে'র আসন্ন সিজনে।

অভিনয়শিল্পীরা রেড-কার্পেট প্রিমিয়ার, মিডিয়ায় প্রচার-প্রচারণা ইতোমধ্যেই বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। এমি ও কমিক-কনের মতো বড় বড় অনুষ্ঠানের আয়োজন পিছিয়ে নেওয়া হচ্ছে বা পরিসরে ছোট করা হচ্ছে।

জেসন সুদেকিস, সুজান সারান্ডনের মতো বড় বড় শিল্পীদেরও প্ল্যাকার্ড হাতে রাস্তায় নেমে আসতে দেখা গেছে। ছবি: সংগৃহীত

যে দাবিতে ধর্মঘট

১ লাখ ৬০ হাজার সদস্যের অভিনয়শিল্পীদের সংগঠন দ্য স্ক্রিন অ্যাক্টর গিল্ড (সেগ-আফট্রা) ও লেখকদের সংগঠন রাইটার্স গিল্ড অব আমেরিকা (ডব্লিউজিএ) একাধিক দাবি জানিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- বেতন বৃদ্ধি, অনলাইন স্ট্রিমিং সার্ভিস থেকে অভিনয়শিল্পীদের বেশি পারিশ্রমিক দেওয়া ও তাদের কাজ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবে না এমন নিশ্চয়তা দেওয়া।

চিত্রনাট্যকার ও অভিনয়শিল্পীরা বলছেন, মুদ্রাস্ফীতির কারণে তাদের চুক্তিগুলো ছোট করে ফেলা হচ্ছে, তারা আগের তুলনায় অনেক কম অর্থ পাচ্ছেন।

অভিনয়শিল্পীদের সংগঠন বলছে, আগে একটি চরিত্রে অভিনয় করে যে পারিশ্রমিক পাওয়া যেত এখন সেই পারিশ্রমিক পেতে কয়েকটি চরিত্রে অভিনয় করতে হচ্ছে।

লেখকদের জন্য পারিশ্রমিকের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। গল্পে কোনো সংশোধন বা নতুন কিছু যোগ করলে সেজন্য কোনো অর্থ প্রদানের বিধান রাখা হচ্ছে না।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার নিয়ে উদ্বেগের বিষয়ে এএমপিটিপি বলেছে, তারা এ নিয়ে একটি 'যুগান্তকারী প্রস্তাবে' একমত হয়েছে, যা অভিনয়শিল্পীদের ডিজিটাল প্রতিলিপি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সুরক্ষা দেবে এবং কোনো শিল্পীর ডিজিটাল রেপ্লিকা ব্যবহার করা হলে তার সম্মতি নিতে হবে।

তবে সেগ-আফট্রার পক্ষে থাকা প্রধান আলোচক ডানকান ক্রাবট্রি- আয়ারল্যান্ড বলেছেন, এ প্রস্তাব 'যথেষ্ট' নয়।

অনলাইন স্ট্রিমিং সার্ভিসগুলোর বিষয়ে অভিনয়শিল্পীদের দাবি ছিল, চলচ্চিত্র বা অনুষ্ঠান পুন:প্রচার হলে সেজন্য শিল্পীদের অর্থ দিতে হবে।

এসব সমস্যা নিয়ে মার্কিন সময় বুধবার রাতে স্টুডিওগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসে এই দুই সংগঠন।

তাদের অভিযোগ, অ্যালায়েন্স অফ মোশন পিকচার অ্যান্ড টেলিভিশন প্রডিউসারস (এএমপিটিপি) কোনো 'ন্যায্য চুক্তি করতে ইচ্ছুক না'। আলোচনায় ব্যর্থ হওয়ার পর শুক্রবার দুপুরের দিকে এই দুই ইউনিয়নের সদস্য এবং তাদের সমর্থকরা লস অ্যাঞ্জেলেস, নিউ ইয়র্ক এবং অন্যান্য শহরে বড় স্টুডিও এবং স্ট্রিমিং সার্ভিসের অফিসের বাইরে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করে।

অন্যদিকে, জুন মাসে সফলভাবে প্রযোজকদের সঙ্গে চুক্তির আলোচনার পর, ধর্মঘটে যোগ দেয়নি পরিচালকদের ইউনিয়ন ডিরেক্টরস গিল্ড অফ আমেরিকা (ডিজিএ)। তবে তারা এই আন্দোলনে 'দৃঢ়ভাবে সমর্থন' জানিয়েছে।

নায্য পারিশ্রমিকের দাবিতে গত মে মাস থেকে হলিউডের সাড়ে ১১ হাজার লেখক ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করছেন। ১৯৬০ সালের পর হলিউডে এমন ধর্মঘট হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধর্মঘট চলতে থাকলে ইন্ডাস্ট্রি স্তব্ধ হয়ে যেতে পারে।

Comments

The Daily Star  | English
Impact of poverty on child marriages in Rasulpur

The child brides of Rasulpur

As Meem tended to the child, a group of girls around her age strolled past the yard.

12h ago