পাঁচ তারকার বৈশাখ স্মৃতি

পহেলা বৈশাখ মানেই আনন্দ।

পহেলা বৈশাখ মানেই মধুর স্মৃতি, মেলায় যাওয়া, দিনভর ঘুরে বেড়ানো, আর কত কী খাওয়া। পহেলা বৈশাখ মানেই আনন্দ। সবার মতোই তারকাদের জীবনেও পহেলা বৈশাখ আসে রঙিন হয়ে।

পাঁচজন তারকা দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলেছেন ফেলে আসা বৈশাখ নিয়ে।

ফাহমিদা নবী

ছোটবেলায় কাটানো পহেলা বৈশাখের স্মৃতি কখনোই ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়। একজীবনে হয়তো অনেক স্মৃতি ভুলে যেতে পারব। কিন্তু বাংলা নতুন বছরের প্রথম দিনের স্মৃতিগুলো উজ্জ্বল হয়ে থাকবে। ছোটবেলায় বাংলা নতুন বছরের প্রথম দিনে রমনায় যেতাম। রমনা পার্ক জমজমাট থাকত। মানুষের ভিড় থাকত। ওখানে গিয়ে এটা-সেটা খেতাম। মজা করতাম খুব। ওখান থেকে যেতাম বাংলা একাডেমিতে। ওখানেও দারুণ সময় কাটাতাম। তারপর যেতাম ধানমন্ডিতে। সেই সময় মোহাম্মদপুরে বাসা ছিল। ওদিকেও মেলা হতো। শাড়ি পরতাম আমি ও সামিনা চৌধুরী। সাজগোজও করতাম। কয়েকদিন আগে থেকেই পরিকল্পনা করতাম বিশেষ দিনটিতে কী কী করব। আবার আরও ছোটবেলায় এই দিনে আব্বা গান করতেন। সেখানেও যেতাম। কাজেই দিনটি আমার কাছে আজও স্মরণীয় হয়ে আছে।

অরুণা বিশ্বাস

আমার স্কুলজীবন কেটেছে ভারতেশ্বরী হোমসে। সেটা টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুরে। ওখানে পড়ার সময় দারুণ দারুণ কিছু স্মৃতি আছে পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে। প্রতিবছর বৈশাখ আসত, আমরা মেলায় যেতাম। নদীর ওপার মেলা বসত। সেখানে চুড়ি, ফিতা, চিনি দিয়ে নানারকম মিষ্টি জাতীয় খাবার বিক্রি হতো। মনে পড়ে, মেলায় গিয়ে চুড়ি কিনতাম। ফিতা কিনতাম। মিষ্টি খেতাম। সেই দিনগুলো সত্যি সুন্দর ছিল। তারপর যখন স্কুল পাস করে কলেজে পড়ি ঢাকা শহরে এসে, তখন আরেক ধরনের বৈশাখ উদযাপন করি। আমার মা-বাবা সংস্কৃতিমনা ছিলেন। তারা যাত্রা ভালোবাসতেন। তাদের কাছে পহেলা বৈশাখ ছিল অনেক আনন্দের। আমিও পরিবার থেকে এটা শিখেছি। বাবা-মা কখনোই এই দিনটি নিজেরা পালন করতেন না। অনেক মানুষদের নিয়ে উৎসবের মতো করে দিনটি কাটাতেন। ৭০ থেকে ৮০ জন মানুষ বাবা-মার সঙ্গে থাকতেন। সবাইকে নিয়ে উদযাপন করতেন পহেলা বৈশাখ। আমিও সেই দলের একজন। খুব ভালো লাগত। আজও মিস করি দিনগুলো।

চঞ্চল চৌধুরী

ছোটবেলার বাংলা নববর্ষ কেটেছে গ্রামে। কী চমৎকার দিন পার করে এসেছি। গ্রামে মেলা বসত। সবাই মিলে মেলায় যেতাম। দল বেঁধে মেলায় যাওয়ার স্মৃতিটা সত্যিই অন্যরকম ছিল। গ্রামের মেলাগুলো, বিশেষ করে গ্রামের বৈশাখী মেলাটা সত্যি সুন্দর হতো সেসময়। এখনো গ্রামে মেলা হয়। কিন্তু আমরা অসাধারণ সময় পার করে এসেছি। তারপর মেলায় কত কী বিক্রি হতো! নানারকম খাবার-দাবারের সঙ্গে বাঁশের বাঁশিও বিক্রি হতো। অসংখ্য দোকান বসত। দূর-দূরান্ত থেকে মেলায় আসত মানুষজন। আমরাও যেতাম। তারপর ঢাকায় এসে চারুকলায় ভর্তি হই, সেখানে এসে আরেকজীবন পাই। মঙ্গল শোভাযাত্রা থেকে শুরু করে বর্ষবরণে অংশ নিই। কিন্তু আমার জীবনের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে ছোটবেলার পহেলা বৈশাখ। সবশেষে বলতে চাই, পহেলা বৈশাখ বাঙালির প্রাণের উৎসব। এই দিনটি সকল বাঙালির।

মীর সাব্বির

আমার ছেলেবেলা কেটেছে বরগুনা শহরে। শহরের শিমুলতলা নামের একটি জায়গায় মেলা বসত। প্রচুর মানুষ আসত সেখানে। আমি দাদার হাত ধরে বৈশাখী মেলায় যেতাম। দাদার কাছে যা যা চাইতাম সব কিনে দিতেন। এজন্যই এই সুন্দর স্মৃতিটা ভুলতে পারব না। আজও পহেলা বৈশাখ আসে, কিন্তু মনে মনে ফেলে আসা কৈশোরকে খুঁজি। তারপর দাদার সঙ্গে মেলায় গিয়ে নাগরদোলায় উঠতাম। কুমাররা মাটির তৈরি ঘোড়া, হাতি, নৌকাসহ অনেক কিছু বিক্রি করতেন। সেসবের প্রতি ভীষণ ঝোঁক ছিল আমার। প্রতি বছর পহেলা বৈশাখে কুমারের কাছ থেকে মাটির ঘোড়া, হাতি, নৌকা কেনা চাই আমার। দাদা কিনে দিতেন। আরও বড় হওয়ার পর খেলাঘর করতাম। খেলাঘর করার সময় বাংলা নতুন বছরের প্রথম দিনে কবিতা পড়তাম, রচনা লিখতাম। এসব জায়গায় আমি প্রতিবছর পুরস্কার পেতাম। তা ছাড়া বছরের প্রথম দিন দাদা হালখাতা খুলতে যেতেন আমাকে নিয়ে। দোকানে যাওয়ার পর দাদা টাকা পরিশোধ করতেন। তারপর আমাদের মিষ্টি খেতে দিত। এটা ছিল আমার কাছে খুব আনন্দের। আর এখন বৈশাখ আসে, আমি ফেলে আসা সেই দিনের মাঝে নিজেকে খুঁজি।

মম

ছোটবেলার পহেলা বৈশাখ ভীষণ রঙিন ছিল। মেলায় যাইরে—গানটির মতোই প্রতিবছর আমার মেলায় যাওয়া ছিল বাধ্যতামূলক। মেলায় না গিয়ে থাকতে পারতাম না। মামাবাড়ির সবার সঙ্গে মেলায় যেতাম। দলবলসহ যেতাম। অনেক মজা করতাম সবাই মিলে। এটা আমার নিজের জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। খুব করে অপেক্ষা করতাম কবে বাংলা নতুন বছর আসবে, কখন মেলায় যাব। মেলায় গিয়ে অনেক কিছু কিনতে হবে—এটা তো ছিলই। মজার মজার খাবার খেতে হবে—তাও ছিল। আমার কাছে ছোটবেলার বৈশাখী মেলা ছিল সত্যি অনেক অনেক রঙিন। এত কালারফুল মেলা পার করে এসেছি, যা মনে পড়লেই সেসব দিনে ফিরে যেতে ইচ্ছে করে। এ ছাড়া ওই দিনে আমি নানারকম কালচারাল অনুষ্ঠানে অংশ নিতাম। সেজন্য আরও ভালোলাগা কাজ করত।

Comments

The Daily Star  | English
World Press Freedom Day 2024

Has Bangladesh gained anything by a restrictive press?

The latest Bangladesh Bank restriction on journalists is anti-democratic, anti-free press and anti-public interest.

7h ago