হলিউড ২০২৩: কম বাজেটে হিট, বড় বাজেটে ফ্লপ যেসব সিনেমা
অন্যান্য বছরের তুলনায় চলতি বছর হলিউডের জন্য ছিল কিছুটা ব্যতিক্রম। এ বছর যেমন ব্যবসাসফল সিনেমার যেমন নতুন রেকর্ড হয়েছে, তেমনি বড় বাজেটের সুপারহিরো সিনেমায় হার মেনেছে বক্স অফিসে।
আবার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিরুদ্ধে আন্দোলনও করেছে সিনেমার কলাকুশলীরা। তবে এসবের মাঝেও কম বাজেটের অনেক সিনেমা হয়েছে ব্যবসাসফল আবার এর বিপরীত চিত্রও রয়েছে।
২০২৩ সালে হলিউডের এমন কয়েকটি চমক নিয়ে এ লেখা।
বাজেট কম তবে ব্যবসা সফল
কম বাজেটের ব্যবসা সফল সিনেমার তালিকায় আছে সুপার মারিও ব্রোস, বার্বি ও ওপেনহেইমার। এরমধ্যে গত ৫ এপ্রিল মুক্তি পেয়েছে ইউনিভার্সাল পিকচার্সের সুপার মারিও ব্রোস। ১০০ মিলিয়ন ডলারে নির্মিত এই সিনেমাটি বক্স অফিসে আয় করে ১.৩৬ বিলিয়ন বা ১৩৫ কোটি মার্কিন ডলার। অ্যানিমেটেড সিনেমার ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি আয় করা সিনেমার মাঝে এটি দ্বিতীয়।
তবে সবকিছু ছাপিয়ে ২০২৩ এর ট্রেন্ড সেট করে দেয় দুটি ভিন্ন ধারার সিনেমা। ২১ জুলাই একদিকে গ্রেটা গারউইগের সামাজিক-সমালোচনাভিত্তিক সিনেমা 'বার্বি', অপরদিকে মুক্তি পায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে নির্মিত 'ওপেনহেইমার'।
'বার্বি' ও 'ওপেনহেইমারে'র বাজেট ছিল যথাক্রমে ১৪৫ ও ১০০ মিলিয়ন ডলার। 'বার্বি' বক্স অফিসে ১.৪৪ বিলিয়ন ডলার আয় করে। এটিই বছরের সবচেয়ে বেশি আয় করা সিনেমা। অন্যদিকে, 'ওপেনহেহইমার' আয় করে ৯৫০ মিলিয়ন ডলার।
হরর সিনেমার শুভদিন
বড় বাজেটের অনেক সিনেমা প্রত্যাশামতো ব্যবসা করতে না পারলেও প্রেক্ষাগৃহ ও ওটিটিতে মুক্তি পাওয়া বেশ কয়েকটি অল্প বাজেটের হরর সিনেমা প্রশংসা কুড়িয়েছে। 'দ্য পোপ'স এক্সোরসিস্ট' ও 'ইভিল ডেড রাইজ' এই দুই হরর সিনেমার বাজেট ছিল যথাক্রমে ১৮ ও ১৯ মিলিয়ন ডলার। তবে বক্সঅফিসে এই স্বল্প বাজেটের দুটি সিনেমা প্রত্যাশার চেয়ে বেশি আয় করে। প্রায় ৭৭ মিলিয়ন ডলার আয় করে 'দ্য পোপ'স এক্সোরসিস্ট'। 'ইভিল ডেড রাইজ' আয় করেছে প্রায় ১৪৭ মিলিয়ন ডলার।
এছাড়া জনপ্রিয় হরর ফ্র্যাঞ্চাইজি ইনসাইডিয়াসের 'ইনসাইডিয়াস: দ্য রেড ডোর' ১৬ মিলিয়ন ডলার বাজেটের বিপরীতে আয় করেছে ১৮৯ মিলিয়ন ডলার। আরেক দর্শকপ্রিয় ফ্র্যাঞ্জচাইজি দ্য নানের, 'নান টু' ৩৮ মিলিয়ন ডলারের বিপরীতে আয় করেছে প্রায় ২৬৮ মিলিয়ন ডলার।
বড় বাজেটের যেসব সিনেমা দর্শক পায়নি
কেবল নির্মাণব্যয়ই একটি সিনেমার মূল বাজেট নির্ধারণ করে না। সিনেমার প্রচার-প্রচারণা, সঙ্গীত, প্রেক্ষাগৃহের শেয়ার ও সরকারি করসহ এমন আরও অনেকগুলো খাত যোগ হয়ে তৈরি হয় সিনেমার মূল বাজেটে। তাই ২০২৩ সালের অনেক বিগ বাজেট সিনেমা শত শত মিলিয়ন আয় করলেও ঠিক ব্যবসাসফল হয়ে ওঠতে পারেনি।
এমন সিনেমার তালিকায় ডিজনির সিনেমা 'এলিমেন্টালে'র নাম কিছুটা বেমানানই মনে হয়। কারণ সিনেমাটি বক্স অফিসে আয় করেছে প্রায় ৪৯৭ মিলিয়ন ডলার। আয় হিসেবে অংকটি বেশ বড় দেখালেও লাভের অংকটা বেশ বড় নয়। কারণ সিনেমাটির শুধু নির্মাণে খরচ হয়েছে প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলার। এটি কেবল প্রোডাকশন বা নির্মাণ খরচ, অন্যান্য খরচ হিসেব করলে এই অংকটি ৪০০ মিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। ফলে ৪৯৭ মিলিয়ন ডলার আয় করেও সার্বিকভাবে ব্যর্থ এই সিনেমা।
এই তালিকায় আরও দুটি নাম 'দ্য ফ্ল্যাশ' ও 'শ্যাজাম: ফ্যুরি অব গডস'। দুটি সিনেমাই ডিসি কমিকসের। সিনেমা দুটির বাজেট যথাক্রমে প্রায় ২০০ ও ১২৫ মিলিয়ন ডলার, যা বিশ্বজুড়ে বক্সঅফিসে আয় করেছে ২৭০ ও ১৩৪ মিলিয়ন ডলার। দুটি সিনেমাই বক্সঅফিসে ভরাডুবি দেখেছে।
ইয়াহু লাইফের এক প্রতিবেদনে সুপারহিরো ধারার সিনেমার ইতিহাসে 'দ্য ফ্ল্যাশ'কে সবচেয়ে ব্যর্থ সিনেমা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
সুপারহিরো ধারার বাইরে বিশাল বাজেটের আরো দুটি ফ্লপ সিনেমা 'ডানজেন্স অ্যান্ড ড্রাগনস: অনার এমাঙ্গ থিভস' ও 'ইন্ডিয়ানা জোনস অ্যান্ড দ্য ডায়াল অব ডেস্টিনি'। বিশ্বজুড়ে ব্যাপক জনপ্রিয় টেবিল ও ডাইস গেইম 'ডানজেন্স অ্যান্ড ড্রাগনস'। ২০২৩ সালে এই গেইমের গল্পের ওপর নির্মিত হয় সিনেমা 'ডানজেন্স অ্যান্ড ড্রাগনস: অনার এমাঙ্গ থিভস'। প্রায় ১৫০ মিলিয়ন ডলারে নির্মিত এই সিনেমা মাত্র ২০৮ মিলিয়ন ডলার আয় করে।
আবার হ্যারিসন ফোর্ড অভিনীত 'ইন্ডিয়ানা জোনসের' পঞ্চম কিস্তির নির্মাণব্যয় ৩০০ মিলিয়ন ডলার। বক্সঅফিসে সিনেমাটি আয় করে ৩৭৫ মিলিয়ন ডলার।
এদিকে টম ক্রজ অভিনীত 'মিশন ইম্পসিবল সেভেন'ও বক্স অফিসের পরীক্ষায় টেনেটুনে পাশ। ২৯১ মিলিয়ন ডলারে নির্মিত এই সিনেমার প্রচারণায় খরচ হয়েছে প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ মিলিয়ন ডলার। সে হিসেবে সিনেমার মোট বাজেট ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি। সিনেমাটি আয় করে প্রায় ৫৬৭ মিলিয়ন ডলার, যা আয়ের দিক থেকে বছরের ১২তম (লাভের দিক থেকে নয়)। কাজেই, 'মিশন ইম্পসিবল সেভেন' সিনেমাটি বক্স অফিসের পরীক্ষায় টেনেটুনে পাশ।
Comments