শিশুদের নিয়ে দেখতে পারেন যে ১০ সিনেমা

ছুটির দিনে বা অবসরে দলবেঁধে সিনেমা দেখতে কার না ভালো লাগে! তবে ছুটির দিনগুলোতে পরিবারের সবাই মিলে দেখা যায় এমন ছবি খুঁজে বেড়ান অনেকে, বিশেষ করে সন্তানের দেখার উপযোগী এমন মানসম্মত সিনেমার খোঁজ করেন বাবা-মায়েরা।
বিশ্বজুড়ে পরিচিত, জনপ্রিয় কিছু শিশুতোষ ও পরিবারবান্ধব চলচ্চিত্র নিয়ে এ লেখা।
ফ্যান্টাস্টিক মি. ফক্স (২০০৯)

প্রখ্যাত ব্রিটিশ শিশু সাহিত্যিক রোয়াল্ড ডালের একই নামের বই অবলম্বনে সিনেমাটি নির্মাণ করেন হালের জনপ্রিয় হলিউডি নির্মাতা ওয়েস অ্যান্ডারসন। স্টপ মোশন অ্যানিমেশনের ধারায় বানানো ছবিটি 'মি. ফক্স' নামে এক শেয়ালকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে। পত্রিকার কলামিস্ট মি. ফক্স তার স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে বেশ ভালো জীবনযাপন করলেও মনের গহীনে চৌর্যবৃত্তির পুরোনো অভ্যাস ঘুরপাক খেতে থাকে। একদিন মি. ফক্স তার কাছের বন্ধুকে নিয়ে হানা দেন পাশের খামারে, চুরি করেন মুরগিসহ ক্ষেতের নানারকম শস্য। খামারি কৃষকরা এই শেয়ালকাণ্ডের পর মি. ফক্স ও তার পরিবারকে ধরতে দুর্ধর্ষ অভিযান চালায়।
এদিকে মি. ফক্সের নেতৃত্বে বিভিন্ন গর্তবাসী প্রাণিরা শুরু করে দুর্দান্ত প্রতিরোধ। চমৎকার এই দর্শকপ্রিয় ছবিটি হয়ে যেতে পারে আপনার সন্তানের প্রিয় ছবিগুলোর একটি।
মাই নেইবার তোতোরো (১৯৮৮)

স্টুডিও জিবলি তরুণ চলচ্চিত্রপ্রেমীদের কাছে জনপ্রিয় একটি নাম। এর অ্যানিমেশনধর্মী সিনেমাগুলো শিশুর মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রেও হতে পারে গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক। হায়াও মিয়াজাকি নির্মিত এই ছবিতে দেখা যায়, স্কুলছাত্রী সাতসুকি আর তার ছোট বোন তাদের গ্রামের বাড়িতে তোতোরো নামের এক বিশাল নাদুসনুদুস আদুরে প্রাণির দেখা পায়। তাদের বন্ধুত্বকে ঘিরে এগিয়ে যায় সিনেমাটির গল্প। ফ্যান্টাসি ঘরানার এই ছবি যেমন জাপানি অ্যানিমেশন ধারার অন্যতম জনপ্রিয় ছবিতে পরিণত হয়েছে, তেমনি বিশ্বের সেরা শিশুতোষ চলচ্চিত্রের তালিকায় প্রায়শই এটিকে স্থান করে নিতে দেখা যায়।
পথের পাঁচালী (১৯৫৫)

সত্যজিৎ রায়ের পথের পাঁচালী বাংলা ও বিশ্ব চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ধ্রুপদী ছবির কাতারে জায়গা করে নিয়েছে মুক্তির পরপরই। সত্যজিতের অনবদ্য মুন্সিয়ানায় বিভূতিভূষণের অপু-দূর্গা পর্দায় এতটা হৃদয়গ্রাহী হয়ে ওঠে যে, যে কেউ তৎক্ষণাৎ নিজেকে সঁপে দেবেন ছবির ভেতরে, মায়ায় পড়ে যাবেন হরিহর-সর্বজয়ার সংসারে। পরিবারসহ যথাযথ সময় কাটাতে চাইলে অবশ্যই দেখে ফেলা উচিত ছবিটি।
গুপি গাইন বাঘা বাইন (১৯৬৯)

সেরা বাংলা চলচ্চিত্রের তালিকায় এ বিখ্যাত সিনেমা সবসময় জায়গা করে নেয়। গুপি ও বাঘা দুই বন্ধু। ভূতের রাজার বর পেয়ে দুই বন্ধু বেরিয়ে পড়ে রোমাঞ্চকর অভিযানে। শিশুসাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর গল্প অবলম্বনে ছবিটি নির্মাণ করেন তার প্রপৌত্র সত্যজিৎ রায়। শিশুদের উপযোগী ফ্যান্টাসিধর্মী ছবিটি নির্মল বিনোদনের নিশ্চিত খোরাক হবে আপনার সন্তানের জন্যও।
দীপু নাম্বার টু (১৯৯৬)

বাংলাদেশি শিশুতোষ চলচ্চিত্রের তালিকায় "দীপু নাম্বার টু" বেশ সুপরিচিত একটি নাম। কথাসাহিত্যিক মুহম্মদ জাফর ইকবালের বই অবলম্বনে চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেন মোরশেদুল ইসলাম। নতুন স্কুলে আসা কিশোর দীপু ও তার আপাত শত্রু তারেকের বন্ধুত্ব এবং দুজন মিলে শুরু করা টানটান রোমাঞ্চকর অভিযানকে ঘিরে তৈরি ছবিটি আপনার পারিবারিক সময়কে বেশ উপভোগ্য করে তুলবে।
ইটস আ ওয়ান্ডারফুল লাইফ (১৯৪৬)

ধ্রুপদী হলিউডি ছবির ক্ষেত্রে বেশ পরিচিত ও জনপ্রিয় নাম "ইটস আ ওয়ান্ডারফুল লাইফ"। নিউইয়র্কে শহরে কোনো এক ক্রিসমাসের সময়ে সবাই যখন আনন্দঘন সময় পার করছে তখন দেখা যায় ব্যবসায়ী জর্জ বেইলি আত্মহত্যার পরিকল্পনায় ব্যস্ত। স্বর্গ থেকে তখন এক ফেরেশতা এসে তাকে বাধা দেয়, অতীতে নিয়ে দেখায় সে না থাকলে কারা অসুবিধায়-দুর্ঘটনায় পড়ত নানা সময়ে। ২ ঘণ্টা ১০ মিনিটের এই ছবিটিতে এক মূহুর্তও আপনার মনোযোগ হারাবেনা, সময় কাটবে আনন্দে।
স্পিরিটেড অ্যাওয়ে (২০০১)

হায়াও মিয়াজাকি নির্মিত স্টুডিও গিবলির ব্যাপক আলোচিত ছবিটিকে আর আট-দশটা সরল শিশুতোষ ছবির মতো ভাবলে ভুল হবে। এটি যেকোনো বয়সের দর্শককে গভীরভাবে ভাবাতে বাধ্য। জাপানি লোকসংস্কৃতি ও দর্শন দ্বারা গভীরভাবে অনুপ্রাণিত এ ছবিকে একুশ শতকের অন্যতম প্রধান ছবি হিসেবে ধরা হয়। দশ বছরের ছোট্ট মেয়ে চিহিরো তার বাবা মায়ের সাথে নতুন বাড়িতে যাওয়ার পথে একটি পুরোনো পার্কে থামে। পার্কে ঘুরতে গিয়ে এক পর্যায়ে সে আবিষ্কার করে এক অলৌকিক জগতে তারা আটকা পড়েছে, যেখানে বিচরণ করে অতিপ্রাকৃত আত্মারা। শুরু হয় তার ফিরে আসার সংগ্রাম। পশ্চিমা আধুনিকায়নের ফলে জাপানি সমাজ-সংস্কৃতির যে ব্যাপক রূপান্তর ঘটেছে তা ছবিতে তুলে ধরা হয়েছে বলে অনেক দাবি করেন।
চিলড্রেন অব হেভেন (১৯৯৭)

ইরানীয় চলচ্চিত্রকার মাজিদ মাজিদি নির্মিত এই চলচ্চিত্রটি ভাই-বোনের মধুর সম্পর্কের দারুণ চিত্রায়ণ করেছে। তেহরানের এক দরিদ্র পরিবারের ছোট্ট ছেলে আলি তার ছোট বোন জাহরার জুতা হারিয়ে ফেলে। বাড়িতে এসে বকা খাবার ভয়ে বলতেও পারে না সে কথা। আবার জুতা না পেলে বোন স্কুলে যাবে কী করে? হারানোর জুতাকে কেন্দ্র করে দুই ভাইবোনের এক সুন্দর করুণ গল্প বুনে চলেন নির্মাতা। কালজয়ী ছবিটি আপনার পরিবারের ছোটবড় সকলেরই হৃদয় ছুঁয়ে যাবে নিশ্চিত।
হোয়ার ইজ দ্য ফ্রেন্ডস হাউজ? (১৯৯৭)

প্রখ্যাত ইরানীয় চলচ্চিত্রকার আব্বাস কিয়ারোস্তামির প্রথম দিককার ছবি এটি। দুই স্কুলবন্ধুকে নিয়ে ছবিটি। আহমেদ স্কুল শেষে বাড়িতে ভুল করে তার বন্ধুর নোটখাতা নিয়ে চলে আসে। এদিকে সে জানে নোটখাতায় বাড়ির কাজ না করলে পরদিনই বহিষ্কার করা হবে তার বন্ধুকে। অগত্যা আহমেদ লুকিয়ে বেরিয়ে পড়ে বন্ধুর বাসা খোঁজার উদ্দেশ্যে। নানা বাধাবিপত্তি পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত বাসা খুঁজে পায় কিনা জানতে দেখে ফেলুন বিখ্যাত এই ছবিটি।
রাতাতুয়ি (২০০৭)

পিক্সার অ্যানিমেশন স্টুডিওজের তৈরি ছবিটির প্রধান চরিত্র একটি ইদুর, যে কিনা প্যারিসের বিখ্যাত রেঁস্তোরার শেফ হতে চায়। কিন্তু রাঁধুনি যদি ইদুর হয় তাহলে আর কে খেতে চাইবে? শেষ পর্যন্ত ওই রেস্তোরার এক কর্মীর সহায়তায় কীভাবে ইদুর রেমি তার স্বপ্নকে সফল করে তার অভিনব কাহিনি উঠে এসেছে এই ছবিতে। বেস্ট অ্যানিমেটেড ফিচার বিভাগে অস্কার জেতা রাতাতুয়ি নিঃসন্দেহে আপনার সময়কে তুমুল আনন্দে ভরিয়ে তুলবে।
গ্রন্থনা: আসিফ করিম চৌধুরী
Comments