নোয়াখালীতে ২০৮ মিলিমিটার বৃষ্টি, খোলা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র

গত তিন দিনের টানা বর্ষণে নোয়াখালী জেলা শহর ও বিভিন্ন উপজেলায় তীব্র জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। আজ সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ২০৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বলে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে।
বৃষ্টির পানি সরতে না পারায় জেলা শহরের মাইজদির বিভিন্ন রাস্তাঘাট দেড় থেকে দুই ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে জেলার সুবর্ণচর, কবিরহাট, কোম্পানীগঞ্জ ও সেনবাগ উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চলমান অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করেছে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস। বসতবাড়িতে পানি প্রবেশ করায় সুবর্ণচর, কবিরহাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
নোয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী জামিল আহমেদ জানান, মেঘনা নদীর পানি বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। হাতিয়া উপজেলার বেড়িবাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন।
টানা ভারী বর্ষণে নোয়াখালী জেলা শহরের জেলা প্রশাসক কার্যালয়, পুলিশ সুপার কার্যালয়, আল-ফারুক একাডেমি, সার্কিট হাউজ, নোয়াখালী সরকারি কলেজ, মহিলা কলেজ, জেলা ও দায়রা জজ আদালত সড়ক এবং মাইজদি হাউজিং আবাসিক এলাকার বালুর মাঠ দুই-তিন ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার বসতবাড়িতে পানি প্রবেশ করায় স্থানীয় বাসিন্দারা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
বৃষ্টির কারণে দিনভর অফিসগামী কর্মজীবী ও শ্রমজীবী মানুষ দুর্ভোগ পোহান। শহরের লক্ষ্মী নারায়ণপুর এলাকার বাসিন্দা মো. মিজানুর রহমান বলেন, টানা বর্ষণে তাদের এলাকা হাঁটু পরিমাণ পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। শহরের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত খাল ও নালাগুলো পরিষ্কার না করায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
শহরের হাউজিং এলাকার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা মফিজুর রহমান (৭০) বলেন, টানা বৃষ্টির কারণে সকাল থেকে এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এতে মোবাইলে চার্জ দেওয়া ও মোটর দিয়ে ভবনে পানি তোলা যাচ্ছে না, ফলে বহুতল ভবনের বাসিন্দারা দুর্ভোগে পড়েছেন।
নোয়াখালী পৌর প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মো. জালাল উদ্দিন বলেন, ডুবে যাওয়া সড়কগুলো থেকে পানি নিষ্কাশনে পৌরসভার কর্মীরা নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর শামীম বলেন, গত তিন দিনের অবিরাম বৃষ্টির কারণে উপজেলার মুছাপুর, চরপার্বতী ও চরএলাহী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ছোট ফেনী নদীর জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। সিরাজপুর, চরকাঁকড়া ও চরএলাহী ইউনিয়নের বাসিন্দাদের মাঝে শুকনো খাবার ও পানি বিতরণ করা হয়েছে। সিরাজপুর ইউনিয়নে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং উপজেলা প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে।
কবিরহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার পুদম পুষ্প চাকমা বলেন, গত তিন দিনের বৃষ্টিতে উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বিশেষ করে ধানশালিক ও ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের বসতঘরে পানি ঢুকেছে। ওই দুই ইউনিয়নে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং গতকাল রাত পর্যন্ত ৮১ জন আশ্রয় নিয়েছেন।
সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাবেয়া আসফার সায়মা বলেন, উপজেলার উপকূলীয় ইউনিয়ন মোহাম্মদপুর, চরজব্বর, চর আমানউল্লাহ ইউনিয়নে আশ্রয়কেন্দ্র খোলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ওই সকল ইউনিয়নের নিচু এলাকার ঘরবাড়িতে পানি ঢুকেছে।
নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, টানা বর্ষণে জেলা শহরে অস্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। পৌরসভার ড্রেনগুলোতে ময়লা-আবর্জনা ও পলিথিন জমে পানি নিষ্কাশন ব্যাহত হওয়ার কারণেই মূলত জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চল বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বৃষ্টি কমে গেলে পানি নেমে যাবে। বন্যা ও দুর্যোগ মোকাবিলা প্রস্তুতি কমিটির সভা আজ ডাকা হয়েছে। সভায় বিস্তারিত আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
Comments