সেন্টমার্টিন থেকে

‘মনে হচ্ছে ঝড় খুব কাছে চলে এসেছে’

এই মূহুর্তে তৈয়ব উল্লাহ পরিবারের সদস্য ও কিছু প্রতিবেশীদের নিয়ে তাদের নিজস্ব রিসোর্টে আছেন। আজ সকাল পৌনে ১১টার দিকে সেখানকার পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মনে হচ্ছে ঝড় খুব কাছে চলে এসেছে। হঠাৎ করেই বাতাসের গতি অনেকটা বেড়ে গেছে। সমুদ্র এমনিতেই উত্তাল ছিল। তা আরও বেড়েছে।
সেন্টমার্টিনে সকাল ১১টার পরিস্থিতি। ছবি: তৈয়ব উল্লাহ

ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে সেন্ট মার্টিনে গতকাল শনিবার রাত থেকেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ও বাতাসের প্রাবল্য ছিল। আজ সকাল সাড়ে ১০টার পর থেকে এই বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া আরও বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সেখানে অবস্থানরত পর্যটন ব্যবসায়ী তৈয়ব উল্লাহ।

এই মূহুর্তে তৈয়ব উল্লাহ পরিবারের সদস্য ও কিছু প্রতিবেশীদের নিয়ে তাদের নিজস্ব রিসোর্টে আছেন। আজ সকাল পৌনে ১১টার দিকে সেখানকার পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'মনে হচ্ছে ঝড় খুব কাছে চলে এসেছে। হঠাৎ করেই বাতাসের গতি অনেকটা বেড়ে গেছে। সমুদ্র এমনিতেই উত্তাল ছিল। তা আরও বেড়েছে। বেড়েছে বৃষ্টির পরিমাণও। কিন্তু জলোচ্ছ্বাস এখনো হয়নি।'

মোবাইলে কথা বলার সময় তৈয়ব তার কক্ষের জানালাটা খুলে দেন। এ সময় ফোনে তীব্র বাতাস বয়ে যাওয়ার পাশাপাশি সমুদ্রের গর্জনও শোনা যায়।

সমুদ্রের মাঝে যাদের জন্ম ও বসবাস, প্রাকৃতিক ঝড়-ঝঞ্ঝা যাদের নিত্যসঙ্গী সেই সেন্টমার্টিনের লোকেরা কেন এই ঘূর্ণিঝড় নিয়ে এত আতঙ্কিত হচ্ছেন- জানতে চাইলে তৈয়ব বলেন, 'আতঙ্কিত হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে- গত বছরের শেষের দিকে সিত্রাংয়ের সময় আমাদের দ্বীপে প্রচুর পানি উঠেছিল। চারপাশে। সিত্রাং তো এত প্রবল ছিল না। এর কেন্দ্রও এদিকে ছিল না। তখন যদি অতটা পানি ওঠে, তাহলে এবার কি হবে এটা ভেবেই সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন।

'বলা হচ্ছে মোখার গতিপথ এদিকেই। এদিক থেকেই টেকনাফের ওপর দিয়ে মিয়ানমারের দিকে চলে যাবে। আবার আগের মতো ন্যাচারাল প্রটেকশন তো নাই। বালিয়াড়ি ছিল, কেয়াবন ছিল। এগুলো তো শেষ হয়ে গেছে। এমনিতেই স্বাভাবিক জোয়ারের পানি এখন দ্বীপে চলে আসে। এখন মোখার প্রভাবে কতটা কী হবে সেটা ভেবেই সবাই বেশি ভয় পাচ্ছেন।'

এই ঝড়ের হাত থেকে বাঁচতে গত শুক্রবার দ্বীপের মসজিদে মসজিদে বিশেষ মোনাজাত হয়েছে বলেও জানান তিনি। বলেন, 'জুমার নামাজের পর ইমাম সাহেব যখন মোনাজাত ধরেছেন তখন সবাই হাউমাউ করে কান্না করেছেন। তা দেখে চোখের পানি ধরে রাখা কঠিন ছিল। দ্বীপবাসীর মধ্যে এত আতঙ্ক কখনো দেখিনি।

বঙ্গোপসাগরের মধ্যে ৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের প্রবালসমৃদ্ধ দ্বীপ সেন্ট মার্টিনের লোকসংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। এরমধ্যে শুক্রবার দুপুরের মধ্যেই প্রায় ২ থেকে আড়াই হাজার মানুষ দ্বীপ ছেড়ে টেকনাফে চলে গেছেন। বিভিন্ন সূত্রের খবর, বাকিদের মধ্যে সাড়ে ৪ হাজারের মতো মানুষ ৩টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রসহ দ্বীপের ৩৭টি হোটেল রিসোর্ট-কটেজে ঠাঁই নিয়েছেন।

তৈয়ব বলেন, 'গতকাল রাতের খবর যতটুকু জানি আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা লোকজন সবাই খাবার পাননি। খাবার ঠিকমতো রান্নাও হয়নি। বিতরণের ক্ষেত্রেও অব্যবস্থাপনা ছিল।'

তিনি আরও বলেন, 'গতকাল বিকেল ৩টা থেকে বিদ্যুৎ নেই। এক্ষেত্রে সাইক্লোন সেন্টারগুলোতে জেনারেটর দিয়ে বিকল্প বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা যেতে পারত। গরমে অস্থির হয়ে অনেকে আশ্রয়কেন্দ্র থেকে চলে গেছেন।

পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও এর পাশের এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের পিক আওয়ার দুপুর ১২টা থেকে ৩টা বলে মনে করছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

অধিদপ্তরের দেওয়া সর্বশেষ তথ্য থেকে জানা যায়, সেই সময় বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটারের চেয়ে বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ঝড়টি রাতে যখন উপকূলে আঘাত হানে তখন স্থলভাগের দিকে এর গতি ছিল ঘণ্টায় ২২ কিলোমিটার।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ঝড়ের উপকূলমুখী গতি কমে যদি বিকেল ৪টার দিকে কেন্দ্র স্থলভাগ অতিক্রম করে তাহলে জলোচ্ছ্বাস ১২ ফুট অতিক্রম করতে পারে।

 

Comments