উপকূলের আরও কাছে মোখা, ঢাকায় কাল থেকে বাড়বে বৃষ্টি

আগামীকাল থেকে ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেড়ে যাবে।
ছবি: প্রবীর দাশ/স্টার

উপকূলের আরও কাছে চলে এসেছে ঘূর্ণিঝড় মোখা। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে বিকেল ৩টায় সাইক্লোন বডি স্থলভাগ স্পর্শ করবে।

আজ রোববার সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমকে এই তথ্য জানিয়েছেন।

ঝড়ের প্রভাবে বাতাসের গতিবেগ বাড়ছে জানিয়ে তিনি বলেন, '১১টা ৩৫ মিনিটে টেকনাফে ৮২ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়া বয়ে গেছে। দুপুর ১টায় সেন্টমার্টিনের বাতাসের গতি ছিল ১০০ কিলোমিটার।'

'ঝড়ের কেন্দ্র আঘাত হানবে মিয়ানমারের সিটুয়ে দিয়ে কিন্তু সেন্টমার্টিন কেন্দ্রে আওতায় পড়বে। যেহেতু কেন্দ্রের পরিধি ৭৪ কিলোমিটার, সেন্টমার্টিন থেকে সিটুয়ের দূরত্ব ৫০ কিলোমিটার,' বলেন আজিজুর রহমান।

সেন্টমার্টিন আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমীরুল টেলিফোনে যুক্ত হয়ে বলেন, 'বাতাস বাড়ছে, ৩ তলা ভবন কাঁপছে। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে।'

তিনি বলেন, 'এই মুহূর্তে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় প্রায় ১০০ কিলোমিটার।'

আজিজুর রহমান বলেন, 'আমরা ১১টা ৫০ মিনিটে সেন্টমার্টিনে বাতাসের গতিবেগ পেয়েছিলাম ৮০ কিলোমিটার। ১টায় সেটা বেড়ে হয়েছে ১০০ কিলোমিটার। ‍বিকেল ৩টায় ঝড়ের কেন্দ্র উপকূল স্পর্শ করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত বাতাসের গতিবেগ বাড়তে থাকবে, এরপর কমতে শুরু করবে। বিকেল ৪টা পূর্ণ জোয়ারের সময়, তখন সেন্টমার্টিন ও আশে পাশের এলাকায় জোয়ারের পানি বাড়বে।'

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'ঝড় যখন স্থলভাগে উঠে পড়বে তখন বাতাসের গতিবেগ কমে ঘণ্টায় ১২০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার হবে।'

'আগামীকাল থেকে ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেড়ে যাবে। চট্টগ্রাম এবং এই অঞ্চলে আগামীকাল থেকে বৃষ্টি আরও বাড়বে। সাইক্লোনের বডি আমাদের উপকূল থেকে দূরে এবং মিয়ানমারের দিকে অগ্রসর হচ্ছে, তাই সব এনার্জি সেন্টারের দিকে পুঞ্জিভূত হচ্ছে। যে কারণে দেশে বৃষ্টিপাত কমে গেছে। সাইক্লোনের বডি যখন স্থলভাগে উঠে যাবে তারপরে বৃষ্টিপাত বাংলাদেশে বেড়ে যাবে,' বলেন তিনি।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে (ক্রমিক নম্বর ২০) জানিয়েছে, উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা ঘণ্টায় ১৭ কিলোমিটার বেগে এগোচ্ছে। আজ দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ২৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার থেকে ২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে, মোংলা থেকে ৪৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে ও পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে অবস্থান করছিল।

কক্সবাজার-উত্তর মায়ানমার উপকূল অতিক্রমরত ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র আজ বিকেল ৩টা নাগাদ উপকূল এবং সম্পূর্ণ ঘূর্ণিঝড়টি সন্ধ্যা নাগাদ সিটুয়ের (মিয়ানমার) কাছ দিয়ে কক্সবাজার-উত্তর মায়ানমার উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করতে পারে।

অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত, চট্টগ্রাম ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৮ নম্বর মহাবিপৎসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার ও অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেতের আওতায় থাকবে এবং চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা ও জেলাগুলোর অদূরবর্তী দ্বীপ এবং চরগুলো থাকবে ৮ নম্বর মহাবিপৎসংকেতের আওতায়।
 
কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর ও বরগুনা জেলার নদী বন্দরগুলোকে ৪ নম্বর নৌ-মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮ থেকে ১২ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

এছাড়া ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চলে ৫ থেকে ৭ ফুটের বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।

অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল বিভাগে ভারী (৪৪-৮৮ মিমি) বর্ষণ হতে পারে। অতি ভারী বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে।

Comments

The Daily Star  | English
pharmaceutical industry of Bangladesh

Pharma Sector: From nowhere to a lifesaver

The year 1982 was a watershed in the history of the pharmaceutical industry of Bangladesh as the government stepped in to lay the foundation for its stellar growth in the subsequent decades.

14h ago