চুরি-পাচারসহ নানা অনিয়ম রোধে তেল কোম্পানিগুলোকে অটোমেশনে আনছে বিপিসি

বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশের জ্বালানি তেলের স্থাপনা অটোমেশনসহ আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর হলেও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তা ভিন্ন।
চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় বিপিসির একটি ডিপো। ছবি: স্টার

ব্যাংক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে বছরে ৭৩ লাখ মেট্রিক টন জ্বালানি তেল আমদানি করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। সেই তেল বিক্রির জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েল কোম্পানিকে বাকিতে দেয় বিপিসি। বছর শেষে দেখা যায়, তেল বিক্রি করে কোম্পানিগুলো লাভবান হলেও লোকসানের বোঝা থেকে যায় বিপিসির ঘাড়ে।

গত ২০২২-২৩ অর্থবছর পদ্মা অয়েল কোম্পানি লাভ করেছে প্রায় ৩৪৯ দশমিক ৫৩ কোটি টাকা, মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড লাভ করেছে ৪৪২ দশমিক ১৪ কোটি টাকা এবং যমুনা অয়েল কোম্পানি লাভ করেছে প্রায় ৩৪০ দশমিক ৮৬ কোটি টাকা।

একইভাবে ২০২১-২২ অর্থবছরে পদ্মা অয়েল ২৪০ দশমিক ৩৮ কোটি টাকা, মেঘনা পেট্রোলিয়াম ৩১৬ দশমিক ৫৩ কোটি টাকা এবং যমুনা অয়েল ১৮৬ দশমিক ৩৪ কোটি টাকা লাভ করেছিল।

চলতি বছরের শুরু থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমায় বর্তমানে কিছুটা লাভের মুখ দেখলেও অধিকাংশ সময় লোকসানের ঘানি টানতে হয় বিপিসিকে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০২২ ও ২০২৩ সালে বিপিসি জ্বালানি তেল আমদানি বাবদ বিপুল পরিমাণ লোকসান দিয়েছে।
   
জ্বালানি তেল বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আধুনিক মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকায় বিপিসি বছরের পর বছর লোকসানের ঘানি টানছে।  

গত ৬ মার্চ বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় পদ্মা অয়েলের প্রধান স্থাপনা পরিদর্শনে এসে বলেন, 'জ্বালানি তেল ব্যবস্থাপনায় অটোমেশন সময়ের দাবি। তেল কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবশ্যই আধুনিক ধ্যান-ধারণা সম্পন্ন হতে হবে। পাশাপাশি তেল পরিবহণ ব্যবস্থাও হতে হবে আন্তর্জাতিক মানের।'

বিপিসির কর্মকর্তারা জানান, জ্বালানি তেল খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি ও সিস্টেম লস কমাতে বিপিসি জ্বালানি তেল পরিবহন ও বিপণন ব্যবস্থা অটোমেশনের আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে। প্রাথমিকভাবে বিপিসির চট্টগ্রামের পতেঙ্গার প্রধান তেল স্থাপনাগুলোকে অটোমেশনের আওতায় আনা হবে। পর্যায়ক্রমে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েলের ডিপো পর্যায়েও সব কাজ অটোমেশনে চলবে। এতে বিপিসির লোকসান বন্ধ হবে, সাশ্রয় হবে কয়েকশ কোটি টাকা।

তারা আরও জানান, বিপিসি জ্বালানি তেল আমদানির পর পতেঙ্গায় পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েল কোম্পানির প্রধান তেল স্থাপনাগুলোতে মজুদ করা হয়। সেখান থেকে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে তেল বিক্রি হয়।

বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশের জ্বালানি তেলের স্থাপনা অটোমেশনসহ আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর হলেও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তা ভিন্ন। বর্তমানে দেশের প্রধান ডিপোগুলোতে জ্বালানি তেল গ্রহণ, মজুদ ও বিক্রি কার্যক্রম ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে চলে। এ পদ্ধতিতে তেল চুরি থেকে শুরু করে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ বিভিন্ন সময় উঠে আসে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের চেয়ারম্যান মো. আমিন উল আহসান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে জ্বালানি তেল সেক্টরেও আধুনিকায়ন প্রয়োজন।'

তিনি আরও বলেন, 'বিশ্বের প্রায় সব দেশেই জ্বালানি তেল সেক্টরে এমন আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার হয়।'

বিপিসির কর্মকর্তারা জানান, দেশের জ্বালানি তেল সেক্টরের অটোমেশনের জন্য ইতোপূর্বে চেষ্টা চালানো হয়েছিল। কিন্তু তা বিভিন্ন বাধার কারণে মাঝপথে আটকে যায়। সম্প্রতি জ্বালানি তেল চুরি ও পাচারের একাধিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিপিসির পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠানটির আওতাধীন পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েল কোম্পানিকে অটোমেশন দ্রুত কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে পদ্মা অয়েল কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক ও অটোমেশন অব ডিপোস অব থ্রি অয়েল মার্কেটিং কোম্পানিস ইন ডিফারেন্ট লোকেশনস অব বাংলাদেশ শীর্ষক প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আমিনুল হক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান (কনসালটেন্ট) নিয়োগ করা হয়েছে। তারা আগামী সেপ্টেম্বর মাসে প্রতিবেদন জমা দেবে। এরপর অক্টোবরে ঠিকাদার নিয়োগ করা হবে।'

কর্মকর্তারা জানান, অটোমেশন কার্যক্রমের অধীনে প্রধান স্থাপনায় জাহাজযোগে আসা তেল গ্রহণ, পাইপ লাইনযোগে ট্যাংকে পৌঁছানো, তেল গ্রহণ প্রক্রিয়ায় সব ক্ষেত্রে কম্পিউটারাইজড পদ্ধতি থাকবে। আবার টার্মিনাল থেকে পাইপযোগে অভ্যন্তরীণ রুটে তেলবাহী জাহাজে ডেলিভারি, তেলের লরি বা ট্যাংক, ট্রেনের ওয়াগনসহ যেকোনো ক্ষেত্রে ডেলিভারি পদ্ধতি কম্পিউটারাইজড হবে। অটোমেশনের ফলে বিপিসি কিংবা তেল কোম্পানিগুলোর মূল অফিস থেকে সার্বক্ষণিক আপডেট রিপোর্ট দেখা যাবে। এমনকি তেল গ্রহণ ও ডেলিভারি কার্যক্রমের পুরো বিষয়গুলো সচিত্র দেখা যাবে। 
 

Comments

The Daily Star  | English
Impact of esports on Bangladeshi society

From fringe hobby to national pride

For years, gaming in Bangladesh was seen as a waste of time -- often dismissed as a frivolous activity or a distraction from more “serious” pursuits. Traditional societal norms placed little value on gaming, perceiving it as an endeavour devoid of any real-world benefits.

17h ago