বিপিসির বকেয়া এখন শূন্য

বেসরকারি ব্যাংকের সহযোগিতায় দুই মাসে সব বকেয়া পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। সেপ্টেম্বরের শুরুতেও বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো কাছে বিপিসির বকেয়ার পরিমাণ ছিল ৩৪৬ মিলিয়ন ডলার। গত ২৯ অক্টোবরের মধ্যে নিজেদের সব বকেয়া পরিশোধ করে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

বিপিসির কর্মকর্তারা জানান, বিদেশি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এতদিন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ছাড়া বেসরকারি ব্যাংকের এলসি (লেটার অব ক্রেডিট) গ্রহণ করত না। গত জুলাই ও আগস্ট থেকে দেশে ডলার সংকটের কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো জ্বালানি তেল আমদানির জন্য নতুন এলসি খুলতে পারছিল না। এ ছাড়া পুরোনো এলসির পেমেন্টও পরিশোধ করতে পারছিল না রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। এমন পরিস্থিতিতে বিদেশি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে বিপিসির বকেয়ার পরিমাণ দিনকে দিন বাড়ছিল।

বিপিসির শীর্ষ কর্মকর্তারা জানান, বিপিসির কাছে গত ১২ আগস্ট পর্যন্ত জ্বালানি তেল সরবরাহকারী বিদেশি আটটি প্রতিষ্ঠানের পাওনা ছিল ৪০৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২৭ আগস্ট সেই পাওনা বেড়ে ৪২০ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায়। ওই সময় কয়েকটি বিদেশি কোম্পানি তাদের পেমেন্টের জন্য জ্বালানি তেল খালাস বন্ধ রেখেছিল।

বিপিসি যেসব বিদেশি প্রতিষ্ঠান থেকে তেল আমদানি করে সেগুলো হলো—সিঙ্গাপুরের ভিটল এশিয়া প্রাইভেট লিমিটেড, পেট্রো চায়না লিমিটেড, মালয়েশিয়ার পেটকো ট্রেডিং লাবুয়ান কোম্পানি লিমিটেড (পিটিএলসিএল), আরব আমিরাতের অ্যামিরেটস ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানি (ইএনওসি), ইন্দোনেশিয়ার পিটি ভূমি ছিয়াক পোছাকো (বিএসপি), ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন লিমিটেড (আইওসিএল), ভারতের নুমালিগড় রিফাইনারি লিমিটেড এবং ইউনিপেক সিঙ্গাপুর প্রাইভেট লিমিটেড।

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে ডলার সংকটের কারণে বকেয়ার পরিমাণ দিনকে দিন বাড়তে থাকায় বিপিসি কর্তৃপক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে বেসরকারি ব্যাংকে এলসি খোলা শুরু করে। বেসরকারি ব্যাংকগুলো এলসির বিপরীতে পর্যাপ্ত ডলার সরবরাহ দিতে পারায় বিপিসির বকেয়া কমতে থাকে অক্টোবরের শুরু থেকেই।

বিপিসির কর্মকর্তারা জানান, সেপ্টেম্বরের শুরুতে বিপিসির কাছে বিদেশি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর পাওনা ছিল ৩৪৬ মিলিয়ন ডলার। অক্টোবরের শুরুতে এসে বিপিসির বকেয়ার পরিমাণ ১১০ মিলিয়নে নেমে আসে। বিপিসি কর্তৃপক্ষ ২৯ অক্টোবরের মধ্যে বিদেশি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সব বকেয়া পরিশোধ করে দেয়। বিপিসির ইতিহাসে এমন ঘটনা বিরল বলে উল্লেখ করেন সংশ্লিষ্টরা।

বিপিসির চেয়ারম্যান মো. আমিন উল আহসান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, বেসরকারি ব্যাংকগুলো এলসি খোলার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করায় আমরা দ্রুত বকেয়া পরিশোধ করতে পেরেছি। আমাদের পর্যাপ্ত ফান্ড থাকা সত্ত্বেও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে ডলার সংকটের কারণে আমরা বিদেশি কোম্পানিগুলোকে পেমেন্ট দিতে পারছিলাম না।

বিপিসি-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, প্রতি মাসে বিপিসি পরিশোধিত তেলের ১৫টি পার্সেল এবং ক্রুড অয়েলের একটি পার্সেল আমদানি করে থাকে। বিভিন্ন ধরনের জ্বালানি তেল আমদানির জন্য বিপিসির প্রতি মাসে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা রানিং ক্যাপিটাল প্রয়োজন হয়।

বর্তমানে যেসব বেসরকারি ব্যাংকে বিপিসি জ্বালানি তেল আমদানির এলসি খুলছে সেগুলো হলো—সিটি ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, মেঘনা ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক ও এবি ব্যাংক।

জানতে চাইলে সিটি ব্যাংক পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরিফিন ডেইলি স্টারকে বলেন, জুলাই-আগস্টে ডলার সংকটের কারণে সরকারি ব্যাংকগুলো যখন এলসি পেমেন্ট দিতে পারছিল না, তখন দেশে জ্বালানি তেল আমদানি বিঘ্নিত হচ্ছিল। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও বিপিসির চেয়ারম্যানের অনুরোধে সিটি ব্যাংকে জ্বালানি তেল আমদানির এলসি খোলা হয়। সংকটের মুহূর্তে দেশের সুনাম রক্ষার্থে আমরা বিপিসির ডাকে সাড়া দিই। এ পর্যন্ত আমরা ১৩২ মিলিয়ন ডলারের এলসি খুলেছি বিপিসির জন্য।

'সিটি ব্যাংকে রেমিট্যান্স প্রবাহ এবং এক্সপোর্ট এলসি বেশি থাকায় ফরেন এক্সচেঞ্জে আমাদের অবস্থান ভালো। এ ছাড়াও সিটি ব্যাংক অফশোর ব্যাংকিংয়ে ভালো অবদান রাখায় আমাদের ডলার ম্যানেজ করতে সমস্যা হয় না', বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Gazipur Police Commissioner Nazmul Karim withdrawn

He was withdrawn in the face of a controversy over closing one lane of a highway while travelling from Dhaka to his workplace

3h ago