গাছ কেটে চিংড়ি প্রকল্প, ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে কক্সবাজারের উপকূলীয় বন

ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলায় ম্যানগ্রোভ ফরেস্টের বেশিরভাগ এলাকায় উজাড় করে হয়েছে চিংড়ি প্রকল্প ও লবণ মাঠ।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বছরের পর বছর আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত নেতা ও স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সিন্ডিকেটের হাতে প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে এই প্যারাবন।

কক্সবাজারের একটি হোটেলে আজ মঙ্গলবার উপকূলীয় বন সংরক্ষণ এবং পুনরুদ্ধার শীর্ষক এক গণশুনানির আয়োজন করে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা)। স্থানীয় বাসিন্দারা গণশুনানিতে অংশ নিয়ে এই অভিযোগ করেন।

'উপকূলীয় মানুষের রক্ষাকবচ হিসেবে পরিচিত এই প্যারাবনের ধ্বংসযজ্ঞ চলছে সোনাদিয়া ও এর আশেপাশে এলাকায়। প্রশাসনের নাকের ডগায় বসে একটি মহল ধ্বংসযজ্ঞ চলালেও বনখেকোদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এভাবে চলতে থাকলে সোনাদিয়ার পুরো প্যারাবন ধ্বংস হয়ে যাবে,' বলেন তারা।

নেচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্টের (নেকম) প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তন ম্যানেজার মো. আব্দুল কাইয়ুম বলেন, কক্সবাজার শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার উত্তরে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় সোনাদিয়া দ্বীপটির ম্যানগ্রোভ এলাকায় প্রায় ২৫০ প্রজাতির মাছ, ১৫০ প্রজাতির শামুক ঝিনুক, ৫০ প্রজাতির কাঁকড়া, ৪০ প্রজাতির চিংড়ি, ১৭০ প্রজাতির পাখি, ৫০ প্রজাতির বালিয়াড়ি ও ১৫ প্রজাতির ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ, তিন প্রজাতির ডলফিন, সামুদ্রিক কাছিম, মেছো বাঘ, শিয়াল, সাপ এবং বিভিন্ন প্রজাতির অমেরুদণ্ডী ও মেরুদণ্ডী প্রাণীর বাস।

ছবি: সংগৃহীত

তিনি আরও বলেন, গত বছরের জানুয়ারি থেকে দিনরাত এক্সকাভেটর দিয়ে প্রায় ৩৫টি জায়গায় অবৈধ চিংড়ি ঘের করার জন্য কোটি কোটি গাছ কেটে পেট্রল ঢেলে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে।

'পরিবেশ অধিদপ্তর মাত্র দুটি মামলা করেছে, যার মধ্যে মাত্র আট থেকে ১০টি এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। মামলায় অনেক রাঘব-বোয়ালদের নাম আসেনি।'

মহেশখালীর বাসিন্দা এখতিয়ার উদ্দিন জানান, সোনাদিয়ায় তারাবন রক্ষায় কাজ করার কারণে দখলকারীরা তার নামে একাধিক মামলা দায়ের করেছে।

এছাড়া, বন রক্ষায় কাজ করেন এমন আরও কয়েকজন জানান, সোনাদিয়ায় বন রক্ষা করতে গিয়ে তারা এখন বাড়িছাড়া।

চকরিয়া উপজেলার বদরখালী থেকে গণশুনানিতে অংশ নিতে এসেছিলেন পরিবেশকর্মী নুরুল আমিন। তিনি বলেন, চকরিয়ায় সুন্দরবনের ধ্বংসযজ্ঞ শুরু হয়েছে ১৯৭৭ সালে। বর্তমানে খুবই নগণ্য পরিমাণ জায়গায় এই প্যারাবন টিকে আছে। সরকারি কর্মকর্তাদের ছত্রছায়ায়, রাজনীতিবিদ ও প্রভাবশালীদের মাধ্যমে দখল হয়ে গেছে সব।

চট্টগ্রাম উপকূলীয় বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, 'প্রভাবশালীদের সহযোগিতা ও পলিটিক্যাল কমিটমেন্ট না থাকলে বন ধ্বংসের এই কার্যক্রম প্রতিরোধ করা কঠিন।'

তবে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. সালাউদ্দিন বলেন, 'সোনাদিয়ায় বন ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। প্যারাবনকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

Comments

The Daily Star  | English

Rooppur, MRT-1, Matarbari to get special focus

Three mega projects will get special focus in the upcoming development budget with the view to providing cheaper electricity, easing Dhaka dwellers’ transportation problem and enhancing international trade for Bangladesh.

13h ago