মাটি রক্ষার বার্তা নিয়ে সাইকেলে চড়ে বগুড়ায় ভারতীয় ২ যুবক

অতিরিক্ত সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে মাটি হারাচ্ছে উর্বরতা শক্তি। ফলে কমছে ফসল উৎপাদন যা ভবিষ্যতের জন্য খাদ্য সংকট তৈরি করতে পারে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের মানুষের বিশেষ করে কৃষকদের মাঝে সচেতনতা তৈরি করতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাইসাইকেলে বাংলাদেশে এসেছেন ভারতের দুই যুবক—পলাশ পাই (৪০) এবং গৌতম কর্মকার (৪৫)।
বাংলাদেশের মানুষের বিশেষ করে কৃষকদের মাঝে সচেতনতা তৈরি করতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাইসাইকেলে বাংলাদেশে এসেছেন ভারতের দুই যুবক—পলাশ পাই (৪০) এবং গৌতম কর্মকার (৪৫)। ছবি: মোস্তফা সবুজ/স্টার

অতিরিক্ত সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে মাটি হারাচ্ছে উর্বরতা শক্তি। ফলে কমছে ফসল উৎপাদন যা ভবিষ্যতের জন্য খাদ্য সংকট তৈরি করতে পারে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের মানুষের বিশেষ করে কৃষকদের মাঝে সচেতনতা তৈরি করতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাইসাইকেলে বাংলাদেশে এসেছে্ন ভারতের দুই যুবক—পলাশ পাই (৪০) এবং গৌতম কর্মকার (৪৫)।

কলকাতার বেলেঘাটার গৌতম পেশায় একজন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক এবং নদিয়ার কৃষ্ণনগরের পলাশ পাইক চিত্র অঙ্কনের একজন শিক্ষক।

গত ১৬ মে যশোরের বেনাপোল বন্দর দিয়ে তারা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। প্রতিদিন একটি থেকে দুইটি জেলা তারা সাইকেল নিয়ে অতিক্রম করছেন।

পথে-ঘাটে যেখানে কৃষকদের সঙ্গে দেখা হচ্ছে তাদের সঙ্গে মাটির উর্বরতা শক্তি কী, কীভাবে সেটা নষ্ট হচ্ছে এবং কী উপায়ে মাটির জৈবিক গুণাগুণ বাড়ানো যায় সেই বিষয়ে কথা বলছেন। আজ বিকেলে বগুড়ায় পৌঁছেছেন পলাশ এবং গৌতম।

তারা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, সম্পূর্ণ নিজেদের খরচে তারা প্রকৃতি রক্ষার এই আন্দোলনে নেমেছেন। ভারতের ঈশা ফাউন্ডেশনের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে তারা এই আন্দোলনে নেমেছেন বলে জানিয়েছেন।

গৌতম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ভারতের ঈশা ফাউন্ডেশন নামের একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গত বছর মার্চ থেকে সারা পৃথিবীতে এই আন্দোলন শুরু করে। তাদের এই কাজ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আমরা নিজেরা এই সচেতনতা তৈরি করতে বাংলাদেশে এসেছি। তবে এটা প্রথমে আমরা কলকাতায় শুরু করেছি।'

পলাশ পাইক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বর্তমানে সারা দুনিয়ায় চাষযোগ্য মাটির অবস্থা খুবই খারাপ। আমেরিকা এবং ইউরোপের অনেক জায়গায় মাটির উর্বরতা শক্তি ৫০ শতাংশ কমে এসেছে। একটা গবেষণায় বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন যে আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে পৃথিবীর খাদ্য উৎপাদন ৪০ শতাংশ কমে যাবে। খাদ্যের জন্য অনেক জায়গায় মারামারি-হানাহানি, যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে। কারণ এই সময়ে পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা গিয়ে দাড়াঁবে ৯২০ কোটি। চাহিদার তুলনায় তখন খাবার কম উৎপাদন হবে।'

'অতিরিক্ত কীটনাশক এবং রাসায়নিক সার ব্যবহারের জন্য মাটিতে উপকারী অনেক অণুজীব, ব্যকটেরিয়া মারা পড়ছে। ফলে মাটি ইতিমধ্যে অনেক জায়গায় বালিতে পরিণত হচ্ছে। আর মাটি বালি হয়ে গেলে খাদ্য উৎপাদন অনেক কমে যাবে এবং ব্যয়বহুল হবে,' বলেন পলাশ।

'বাংলাদেশের কৃষকরা কিন্তু বুঝতে পারেন এবং জানেন যে কীটনাশক এবং অতিরিক্ত সার ব্যবহারের ফলে মাটির ক্ষতি হচ্ছে এবং আগের থেকে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে কিন্তু তাদের হাতে অন্য কোনো বিকল্প নেই বলে অনেক কৃষক আমাদের বলেছেন। আবার মুন্সিগঞ্জের অনেক কৃষকের মধ্যে ভুল ধারণা রয়েছে। কেঁচো নাকি ফসলের ক্ষতি করছে বলে তারা ঔষুধ দিয়ে কেঁচো মেরে ফেলছেন বলেও জানিয়েছেন কৃষকরা,' যোগ করেন গৌতম।

মাটিকে বাঁচানোর জন্য কী পরামর্শ দিচ্ছেন জানতে চাইলে পলাশ বলেন, 'আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছি যে রাসায়নিক সারের ওপর কম গুরুত্ব দিয়ে জৈব সারের ওপর বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। তাহলে মাটিতে উপকারী অণুজীবের সংখ্যা বাড়বে। পাশাপাশি জমির আইলে কিছু ছায়াকম হয় এমন গাছ লাগাতে হবে। এতে করে পাতা মাটিতে মিশে সার হবে অন্যদিকে গাছের কারণে মাটির পানিধারণ ক্ষমতা বাড়বে ফলে মাটি আর বালিতে পরিণত হবে না।'

বাংলাদেশে আসার বিষয়ে জানতে চাইলে গৌতম বলেন, 'আমরা বাঙালি। তাছাড়া বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশ। আমাদের উভয় দেশে মাটির সঙ্গে কৃষকের একই রকমের সম্পর্ক একই রকমের সংস্কৃতি। আবার একই রকমের ফসল আমরা উৎপাদন করে থাকি। সেই কারণে বাংলাদেশে এসেছি।'

সাইকেল চালিয়ে আসার প্রসঙ্গে গৌতম বলেন, 'সাইকেল পরিবেশ বান্ধব। তাছাড়া সাইকেল চালিয়ে সহজে কৃষকের কাছে যাওয়া যাবে। এতে খরচ ও কম সেই কারণে সাইকেল নিয়ে এসেছি।'

১৫ দিনের বাংলাদেশ সফরে এসেছেন গৌতম এবং পলাশ। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বেলাপোল স্থল বন্দর দিয়েই আপাতত বাংলাদেশ ভ্রমণ শেষ করবেন বলে জানিয়েছেন এই দুই পরিবেশ আন্দোলনকারী।

Comments

The Daily Star  | English

Floods cause Tk 14,421 crore damage in eastern Bangladesh: CPD study

The study highlighted that the damage represents 1.81 percent of the national budget for fiscal year (FY) 2024-25

2h ago