বায়ুদূষণ কমাতে পরিকল্পনা থাকলেও বাস্তবায়নে পিছিয়ে সরকার

দূষিত বাতাস
স্টার ফাইল ফটো

২০১৯ সালে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা ছিল ২০২৫ সালের মধ্যে মাটির ইট ব্যবহার পর্যায়ক্রমে পুরোপুরি বন্ধ করা৷ কিন্তু সম্প্রতি লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন না হওয়ায় ২০২৫ সালের পরিবর্তে ২০২৮ সাল পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে।

গত বছর মে মাসে যাত্রীবাহী বাস-মিনিবাসের ২০ বছর এবং পণ্যবাহী ট্রাক-কাভার্ড ভ্যানের ২৫ বছর অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল নির্ধারণ করে সরকার। তবে আগস্টে এ প্রজ্ঞাপণ স্থগিত করা হয়।

এর অর্থ হলো কয়েক হাজার পুরোনো যানবাহন, যা বায়ু দূষণের একটি প্রধান উত্স সেগুলোকে রাস্তায় চলাচলের অনুমতি দেওয়া হলো।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাতাসের মান দিনদিন খারাপ হচ্ছে এবং কর্তৃপক্ষ তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন না করায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে।

বাতাসের মানের একটি প্রধান সূচক হলো বাতাসে পিএম ২.৫ এর পরিমাণ। পিএম অর্থ পার্টিকুলেট ম্যাটার এবং ২.৫ অর্থ এর আকার।

পরিবেশ অধিদপ্তরের মতে, ২০১৮ সাল থেকে, বাতাসে পিএম ২.৫ এর বার্ষিক গড় ঘনত্ব প্রতি ঘনমিটার ৮৩.২৪ থেকে ১০৪.২০ মাইক্রোগ্রামের মধ্যে রয়েছে।

ছোট আকারের কারণে পিএম ২.৫ মানুষের শ্বাসতন্ত্রের গভীরে প্রবেশ করতে পারে এবং সেখান থেকে পুরো শরীরে ছড়িয়ে স্বল্প থেকে দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করে।

জানতে চাইলে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, 'বায়ু দূষণ রোধে আমরা কিছু ব্যবস্থা নিয়েছিলাম, কিন্তু সেগুলো বাস্তবায়নে ফাঁক ছিল।'

'সরকার শিগগিরই বায়ু দূষণের উত্স চিহ্নিত করতে এবং এটি মোকাবেলার পরিকল্পনা করতে ১০০ দিনের কর্মসূচি চালু করবে', বলেন তিনি।

সম্প্রতি শিকাগো ইউনিভার্সিটি প্রকাশিত এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্স ২০২৩ অনুসারে, বাংলাদেশে গড় পিএম ২.৫ মাত্রা প্রতি ঘনমিটারে ৭৪ মাইক্রোগ্রাম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, যদি এই মাত্রাটি প্রতি ঘনমিটারে ৫ মাইক্রোগ্রামে নামিয়ে আনা হয় তবে বাংলাদেশের মানুষের আয়ু ৬.৮ বছর বাড়বে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রুত নগরায়ন, ইটভাটা, জৈবশক্তি পোড়ানো, অনিয়ন্ত্রিত নির্মাণ, পুরোনো যানবাহন চলাচল, নিম্নমানের জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার এবং আন্তঃসীমান্ত বায়ুর গুণমান বাংলাদেশে বাতাসের মান নিম্ন হওয়ার প্রধান কারণ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আবদুস সালাম বলেন, 'আমরা সবাই দূষণের উৎস কী জানি, কিন্তু আমরা এ বিষয়ে কিছু করি না। এ কারণেই পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে। এখন সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার সময় এসেছে।'

সরকার সুপরিকল্পিত ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না বলেও জানান তিনি।

পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, বৃষ্টি হলে বাতাসের মান উন্নত হয়। তবে গত বছর কম বৃষ্টি হয়েছিল।

২০১৭ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে বায়ু দূষণ মোকাবেলায় বাংলাদেশ ২.৩ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে। দ্য স্টেট অব গ্লোবাল এয়ার কোয়ালিটি ফান্ডিং ২০২৩ অনুসারে, চীন এবং ফিলিপাইনের পরেই বায়ু দূষণ রোধে আন্তর্জাতিক তহবিলের তৃতীয় শীর্ষ গ্রহীতা ছিল বাংলাদেশ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের জন্য অর্থায়ন কোনো সমস্যা নয়। বরং সঠিক পদক্ষেপের অভাবই মূল সমস্যা।

পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (বায়ুমান ব্যবস্থাপনা) জিয়াউল হক বলেন, 'আমরা বেশ কিছু ব্যবস্থা নিয়েছি। কিন্তু সমস্যা হলো কেউ আমাদের নির্দেশ মানছে না।'

তিনি আরও জানান, পরিবেশ অধিদপ্তর বেশ কিছু দীর্ঘমেয়াদী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সেসবের ফলাফল আসতে কিছুটা সময় লাগবে। দেশে সাড়ে সাত হাজারের বেশি ইটভাটা রয়েছে। এ সংখ্যা দুই হাজারে নামিয়ে আনলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

'পুরোনো যানবাহন চলাচল বন্ধ করা উচিত। এছাড়াও, বিভিন্ন সরকারি সংস্থাকে অবশ্যই সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে কারণ ধূলাবালিও দূষণের একটি মূল উৎস,' বলেন তিনি।

দক্ষিণ এশিয়ার চারটি দেশ—বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল এবং পাকিস্তান ২০৩০ সালের মধ্যে বার্ষিক গড় পিএম ২.৫ থেকে ৩৫ মাইক্রোগ্রাম প্রতি ঘনমিটারে নামিয়ে আনতে সম্মত হয়েছে।

বিশ্বব্যাংক ২০২২ সালের ডিসেম্বরে দক্ষিণ এশিয়ায় বায়ু দূষণ এবং জনস্বাস্থ্য নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়, উত্তর-পশ্চিম থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বাতাসের প্রভাবের কারণে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনার বায়ুদূষণে ৩০ শতাংশ ভূমিকা রাখে ভারত থেকে আসা দূষিত বায়ু।

Comments

The Daily Star  | English

Ex-CEC Habibul Awal calls 2024 polls ‘farcical’

‘If I am not allowed to justify myself, then shoot me,’ Awal lashes out in court

48m ago