ছোট যমুনায় ফুলবাড়ী পৌরসভার বর্জ্য

নদীতে শহরের বর্জ্য
ফুলবাড়ী পৌরসভার ‘লাইফলাইন’ ছোট যমুনা নদীতে ফেলা হচ্ছে বর্জ্য। ছবি: স্টার

অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলা শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ও ফুলবাড়ী পৌরসভার 'লাইফলাইন' ছোট যমুনা নদী। পৌরসভার সব বর্জ্য নদীতে ফেলায় হুমকির মুখে রয়েছে জলজ প্রাণীও।

প্রায় ৪১ বছর আগে যাত্রা শুরু করলেও আজ পর্যন্ত একটি বর্জ্য ফেলার ভাগার তৈরি করতে পারেনি ফুলবাড়ী পৌরসভা।

ছোট যমুনার পাশে ১৩ দশমিক ৫৯ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় গঠন করা করা হয় ফুলবাড়ী পৌরসভা। পরে এর আয়তন বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ দশমিক শূন্য চার বর্গ কিলোমিটারে। বর্তমান এই পৌরসভার জনসংখ্যা ৩৫ হাজারের বেশি।

স্থায়ী ময়লার ভাগারের জন্য চার বছর আগে উদ্যোগ নেওয়া হলেও আজও তা আলোর মুখ দেখেনি। ফলে পৌর এলাকায় ময়লা ফেলা হতো যেখানে-সেখানে।

গত কয়েক বছর ধরে এসব বর্জ্য নিয়ে ফেলা হচ্ছে ছোট যমুনায়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, নদীর পৃথক তিনটি স্থানে এসব বর্জ্য ফেলা হচ্ছে।

গত ৭ ফেব্রুয়ারি ফুলবাড়ি শহর ঘুরে দেখা যায়, শহরের দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ মহাসড়কে ছোট যমুনার ওপর যে সেতু, এর নিচে ফেলা হচ্ছে পৌরসভার বর্জ্য। এ ছাড়া, শহরের অপর প্রান্তে বাজারে কাছে নদীর ওপর ফুটওভার ব্রিজের নিচেও ফেলা হচ্ছে বর্জ্য।

নদীতে শহরের বর্জ্য
ফুলবাড়ী পৌরসভার ‘লাইফলাইন’ ছোট যমুনা নদীতে ফেলা হচ্ছে বর্জ্য। ছবি: স্টার

স্থানীয়রা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ফুলবাড়ী পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মীরা প্রতিদিন দুবার নদীতে এসব বর্জ্য ফেলছেন।

নদীর ওপর ৪০০ মিটারে মধ্য তিনটি সেতু আছে। দুইটি সেতু পাশাপাশি। সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতিটি সেতুর নিচেই ময়লা ফেলা হচ্ছে।

স্থানীয়রা আরও জানান, তিন-চার বছর আগে স্বল্প পরিসরে এই সেতু দুটির নিচে বর্জ্য ফেলা শুরু হলেও বর্তমানে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ তাদের সংগ্রহ করা সব বর্জ্য এখানেই ফেলে। ছোট যমুনার সেতুর নিচে গৃহস্থালি ও কাঁচাবাজারের বর্জ্য ফেলা হয় নিয়মিত।

ফুলবাড়ী পৌরসভার বাসিন্দা মো. আব্দুল আউয়াল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পৌর কর্তৃপক্ষ আগে অন্যস্থানে বর্জ্য ফেললেও এখন এর জন্য নদীকে উৎকৃষ্ট স্থান হিসেবে বেছে নিয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'ফুলবাড়ী শহরে এটি একমাত্র নদী। ইতোমধ্যে নানা কারণে এর পানিপ্রবাহ কমে গেছে। বর্জ্য ফেলায় নদীর পানি নোংরা ও দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে গেছে। নদীটি সরু হয়ে যাচ্ছে।'

ফুলবাড়ী পৌরসভার সাবেক মেয়র গোলাম মর্তুজা মানিক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পৌরসভার বর্জ্য ফেলার জন্য ফুলবাড়ী-আফতানগঞ্জ সড়কে তিন একর জমি কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। বিদেশি তহবিলও পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু আমার মেয়াদ শেষ হওয়ায় সেটি আর তখন বাস্তবায়ন করতে পারিনি।'

ফুলবাড়ী পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী লুৎফুল হুদা চৌধুরী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সাবেক মেয়র গোলাম মর্তুজা মানিক যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন সেটা পরিবেশ অধিদপ্তরের জটিলতায় ছাড়পত্র পায়নি। এ কারণে উদ্যোগটি বাস্তবায়ন করা যায়নি।'

পরবর্তীতে এ বিষয়ে আরও উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা নানান কারণে বাতিল হয়ে যায় বলে তিনি জানান।

নদীতে বর্জ্য ফেলার বিরুদ্ধে নিজের অবস্থানের কথা জানিয়ে লুৎফুল হুদা চৌধুরী বলেন, 'মেয়রের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে। আমরা বর্জ্য ফেলার জন্য নতুন করে জায়গাও খুঁজছি।'

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) রাজশাহী কার্যালয়ের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী তন্ময় সান্যাল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আইনগতভাবে কোনো পৌরসভারই নদীতে বর্জ্য ফেলার অধিকার নেই। বর্জ্য ফেলায় নদীর জলজ জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।'

'এটা নদীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। এভাবে প্রথমে নদী সরু করে ফেলবে এবং শেষ পর্যন্ত নদী ভরাট হয়ে গেলে দখল করে নেবে। আর নদীতে বর্জ্য ফেলায় এর প্রভাব পড়ছে পানিপ্রবাহের ওপরও। নদীর পানিও দূষিত হচ্ছে,' মন্তব্য করেন তিনি।

পৌরসভার বর্জ্যের প্রায় ৮০ শতাংশই পলিথিন উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'এসব পলিথিন পানি ও কৃষি জমিতে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে।'

আজ মঙ্গলবার সকালে ফুলবাড়ী পৌরসভার মেয়র মাহমুদ আলম লিটন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পৌরসভার ময়লা ফেলার জন্য জমি অধিগ্রহণের চেষ্টা করা হলেও সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে ভূমি অধিগ্রহণের অনুমতিপত্র না পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি।'

তিনি আরও বলেন, 'অতীতে ফুলবাড়ীর পৌর এলাকায় কয়েকটি জায়গায় ময়লা ফেলা হলেও এখন আর সম্ভব হচ্ছে না বলে নদীতে ফেলা হচ্ছে। এতে পৌরবাসীর নানান সমস্যা হচ্ছে। এ বিষয়ে সরকারের সহযোগিতা দরকার।'

Comments

The Daily Star  | English

Threat of fresh Rohingya influx looms as clashes erupt in Myanmar

Gunfire and explosions were heard late Friday night from villages across the border in Myanmar opposite Whykong union in Teknaf upazila of Cox’s Bazar. Residents, gripped by panic, reported that this was the most intense gunfire they had heard in months.

7h ago