‘মাঘের জারে’ কাবু লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের মানুষ

মাঘের শীত
লালমনিরহাট সদর উপজেলার উত্তরসাপ্টানা গ্রামে হাড় কাঁপানো ঠান্ডায় অতিষ্ঠ জনজীবন। ২৪ জানুয়ারি ২০২৪। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

স্থানীয় প্রবাদ আছে 'মাঘের জারে বাঘ কাঁন্দে'। এমন অবস্থাই হয়েছে উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামে। মাঘ মাসে ঠান্ডার প্রকোপ অনেক বেড়ে গেছে এই দুই জেলায়। কনকনে হাড় কাঁপানো ঠান্ডায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন।

সেই সঙ্গে আছে হিমেল বাতাস ও ঘন কুয়াশা। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাড়ির বাইরে বের হচ্ছে না। তবে খেটে খাওয়া মানুষজনকে কনকনে ঠান্ডা আর ঘন কুয়াশার মধ্যেই কাজের সন্ধানে বাইরে যেতে হচ্ছে।

'জারোত হামরাগুলা মরি যাবার নাইকছি বাহে। মাঘের জারোত হামরাগুলা কাহেল হয়া পড়ছি,' বলছিলেন লালমনিরহাট সদর উপজেলার উত্তর সাপ্টানা গ্রামের দিনমজুর কান্দ্রি বালা।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে আরও বলেন, 'জারের ঠ্যালায় ঘর থাকি বাইরোত বেরবার পাবার নাইকছি না। কাজ কইরবার না পায়া টাকাও কামাই হবার নাইকছে না। গেল কয়েক থাকি হামারগুলার দশা করুন হয়া গ্যাইছে। এ্যালা প্যাটের ভাত যোগাই নাকি গরম কাপড় যোগাই। দিশকুল হারে গ্যাইছে হামারগুলার।'

একই গ্রামের কৃষি শ্রমিক মনসুর আলী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জারের ঠ্যালায় ঘর থাকি বাইরোত যাবারে মন চাবার নাইকছে না। কাম না করিয়াও কোনো উপায় নাই। কাম না করলেও চলে না। জারোত কষ্ট সহা হামরাগুলা কাম করির বেরবার নাইকছি। কাম না করলে বউ ছওয়া নিয়া উপাস থাকা নাইকবে।'

একই অবস্থা কুড়িগ্রামেরও।

স্টার ফাইল ছবি

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার শিমুলবাড়ি গ্রামের কৃষক দেলোয়ার হোসেন ডেইলি স্টারকে জানান, কনকনে ঠান্ডার কারণে কৃষি শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। কোনো শ্রমিক জমিতে কাজ শুরু করলেও ঠান্ডার কারণে বেশিক্ষণ টিকতে পারছেন না। ঠান্ডা আর কুয়াশার কারণে কৃষিকাজ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

চিলমারী উপজেলার জোরগাছ গ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ের মাঝি শফিকুল ইসলাম জানান, ঠান্ডা আর কুয়াশার কারণে তিনি এবং অন্যরা নৌকা চালাতে পারছেন না। কেউ কেউ ঠান্ডা উপেক্ষা করে নৌকা চালাতে প্রস্তুত হলেও তেমন যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। কনকনে ঠান্ডায় তারা কাবু হয়ে পড়েছেন।

কুড়িগ্রামের রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গতকাল বুধবার সকাল ৯টায় কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে আট দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কনকনে ঠান্ডার সঙ্গে আছে হিমেল বাতাস ও ঘন কুয়াশা।'

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস সূত্র জানায়, কুড়িগ্রামের নয় উপজেলায় ৬৬ হাজার কম্বল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সেগুলো বিতরণ করা হচ্ছে। গত সোমবার আরও ২০ হাজার কম্বলের চাহিদা জানিয়ে মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলায় বরাদ্দ দেওয়া ২৯ হাজার কম্বল বিতরণ করা হচ্ছে। এ জেলাতেও গত সোমবার আরও ২০ হাজার কম্বলের চাহিদা জানিয়ে মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হামিদুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এমন ঠান্ডা আগামী ৪-৫ দিন থাকলে কৃষিতে ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। কয়েকটি স্থানে বোরো বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঠান্ডায় কৃষক ও কৃষি শ্রমিকরা ঠিকমতো কাজ করতে না পারায় বোরো ধানের চারা রোপণে দেরি হচ্ছে।'

Comments

The Daily Star  | English

BANGLADESH POLICE: Designed to inflict high casualties

A closer look at police’s arms procurement records reveals the brutal truth behind the July killings; the force bought 7 times more lethal weapons than non-lethal ones in 2021-23

1h ago