বয়ঃসন্ধিকালীন গর্ভধারণে পরিবারের ভূমিকা

ঢাকায় দ্য ডেইলি স্টার সেন্টারে যৌথভাবে গোলটেবিলের আয়োজন করে রেডঅরেঞ্জ ও দ্য ডেইলি স্টার। ছবি: প্রবীর দাশ/স্টার

বয়ঃসন্ধিকালীন গর্ভধারণের হার দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে এখনো বাংলাদেশে সর্বোচ্চ। দেশে কিশোরী বয়সে গর্ভধারণের হার ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ছিল ২৭ দশমিক ৭ শতাংশ যা ১৯৯৩-৯৪ অর্থবছরে ছিল ৩৩ শতাংশ।

টোটাল ফার্টিলিটি রেট (টিএফআর) কমানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতি হলেও বয়ঃসন্ধিকালে গর্ভধারণের ক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশগুলির তুলনায় এখনও পিছিয়ে আছে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা যায়, বয়ঃসন্ধিকালীন গর্ভধারণের হার ভারতে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ, পাকিস্তানে ৮ দশমিক ১ শতাংশ এবং আফগানিস্তানে ১২ দশমিক ১ শতাংশ।

সমীক্ষায় আরও দেখা গেছে, বাংলাদেশে বয়ঃসন্ধিকালে গর্ভধারণের মূল কারণ বাল্যবিবাহ। 

এ ছাড়াও, গর্ভনিরোধকের ভুল ব্যবহার (পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে পাওয়া) এবং বিয়ের আগে ও পরে প্রজনন স্বাস্থ্য তথ্য প্রাপ্তিতে ঘাটতি এ ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে কাজ করে।

২০ বছর বয়স না হওয়া পর্যন্ত গর্ভধারণ না করতে সরকারি প্রচারণা থাকলেও নববিবাহিত কিশোরী মেয়েদের দ্রুত গর্ভধারণে পরিবারের সদস্যদের চাপ থাকে। অনেক সময় একটি মেয়েকে সন্তান জন্ম দিয়ে তার সক্ষমতা প্রমাণ করতে হয়।

জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণে পরিবারের ভেতর থেকে বাধার ব্যাপারে গোলটেবিল বৈঠকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন তার গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। বাংলাদেশে স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে আসা কম বয়সী মেয়েদের গর্ভধারণের কারণ, এ সংক্রান্ত ঝুঁকি ও প্রশমনের উপায় তার গবেষণায় উঠে এসেছে।

রেজিলিয়েন্স থ্রু ইনফরমেশন অন সেক্সুয়াল অ্যান্ড রিপ্রোডাক্টিভ হেলথ অ্যান্ড রাইটস অ্যান্ড এমপাওয়ারমেন্ট প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে এই গবেষণাটি সমন্বয় করেছে রেডঅরেঞ্জ মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন। নেদারল্যান্ডসের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে এটি বাস্তবায়ন করেছে আইএসডিই বাংলাদেশ, ফ্যামিলি প্লানিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, সিমাভি ও কেআইটি রয়াল ট্রপিক্যাল ইনস্টিটিউট।

রাজধানীর দ্য ডেইলি স্টার সেন্টারে মিডিয়া পার্টনার হিসেবে দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে যৌথভাবে গোলটেবিলের আয়োজন করে রেডঅরেঞ্জ।

অধ্যাপক ড. বিল্লাল গবেষণায় দেখা গেছে, শ্বশুরবাড়িতে বিবাহিত তরুণীদের প্রতিনিধিত্বের অভাব, গর্ভনিরোধক বড়িতে বন্ধ্যাত্বের ভয়, সন্তানের মাধ্যমে দাম্পত্য সম্পর্ককে দৃঢ় করার ইচ্ছা, গর্ভনিরোধক বড়ি সম্পর্কে ভুল ধারণা ও গর্ভপাত বাংলাদেশে বয়ঃসন্ধিকালীন গর্ভধারণের জন্য দায়ী।

গর্ভধারণের ব্যাপারে শ্বশুর-শাশুড়ির ইচ্ছা অগ্রাধিকার পায়।

বয়ঃসন্ধিকালীন গর্ভধারণের ফলে অন্যান্য সমস্যার মধ্যে শারীরিক স্বাস্থ্যে প্রভাব, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা, সন্তান লালন-পালনে সমস্যা ও অর্থনৈতিক চাপে পড়ার কথা উঠে এসেছে। অল্প বয়সে গর্ভধারণের ফলে শারীরিক যেসব সমস্যা দেখা যায় তার মধ্যে আছে একলাম্পসিয়া, প্রসব পরবর্তী রক্তক্ষরণ, রক্তে সংক্রমণ এবং নির্ধারিত সময়ের আগেই প্রসব অন্যতম। এর সঙ্গে স্বল্প ওজনের নবজাতক প্রসব ও নবজাতকের মৃত্যুর সম্পর্ক রয়েছে।

এই গবেষণাটিতে আরও দেখা যায়, বয়ঃসন্ধিকালে গর্ভধারণে স্কুল থেকে ঝরে পড়া ও শ্রম বাজারে যুক্ত হওয়ার সুযোগ হ্রাস করে।

বয়ঃসন্ধিকালীন গর্ভধারণ প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে গবেষণায় বলা হয়, গর্ভধারণ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত মেয়েদের নিজেদের নিতে হবে। প্রজনন শিক্ষায় পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি শিক্ষক, স্বাস্থ্যকর্মী ও ধর্মীয় নেতাদের ভূমিকা রাখতে হবে।

বরিশাল, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও ঢাকায় সাম্প্রতিককালে ৫১ জন অন্তঃসত্ত্বা নারী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে এই গবেষণা করা হয়েছে।

গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা পরিবার পরিকল্পনা এবং প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে জ্ঞান ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য মূলধারার গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সম্পৃক্ততা এবং এ সংক্রান্ত নীতি বাস্তবায়নের সময় মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মধ্যে কার্যকর সমন্বয়ের বিষয়ে কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশে নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মুশফিকা জামান সাতিয়ার, রেড অরেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অর্ণব চক্রবর্তী, কেআইটি রয়্যাল ট্রপিক্যাল ইনস্টিটিউটের দলনেতা অ্যাঙ্কে ভ্যান ডের কোয়াক, পপুলেশন সার্ভিসেস অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক ড. নূর মোহাম্মদ, কেয়ার বাংলাদেশের পরিচালক ইখতিয়ার উদ্দিন খন্দকার, ব্র্যাকের প্রজেক্ট কোঅর্ডিনেটর রওশন আক্তার ঊর্মি প্রমুখ।

Comments

The Daily Star  | English
CSA to be repealed

CSA to be repealed within a week: Nahid Islam

About the election, Nahid said an election based on national consensus will be held after completing all necessary reforms.

2h ago