কৃতজ্ঞতাবোধ কতটা শক্তিশালী
এক ফরাসি রাষ্ট্রনায়ক বলেছিলেন, 'অকৃতজ্ঞতা সকল কল্যাণের ঝর্ণা শুকিয়ে দেয়'। বাস্তবে, কখনো কখনো অকৃতজ্ঞতা প্রতিশোধের চেয়েও ভয়ংকর হতে পারে।
এই কারণেই বলা হয় যে কৃতজ্ঞতা হচ্ছে সর্বোত্তম মনোভাব। কেননা, এটি আমাদেরকে সুখী করে এবং অপরের প্রতি আরও সদয় হতে সাহায্য করে। কিন্তু কৃতজ্ঞতাবোধ কি সত্যিই শক্তিশালী?
প্রকৃতপক্ষে, আমাদের জীবনের সবকিছুর ভিত্তি হচ্ছে মনোভাবের গুরুত্ব। কৃতজ্ঞতার স্নায়ুবিজ্ঞান ও মস্তিষ্কে এর প্রভাব সম্পর্কে গবেষণা রয়েছে। গবেষকরা দেখেছে, মস্তিষ্কের ভেন্ট্রোমেডিয়াল প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স কৃতজ্ঞতা নিয়ন্ত্রণ করে, যা মানসিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত।
মস্তিষ্কে আমাদের আবেগ নিয়ন্ত্রণের জন্য দায়ী ২টি গুরুত্বপূর্ণ নিউরোট্রান্সমিটার ডোপামিন ও সেরোটোনিন বাড়ায় কৃতজ্ঞতা। এটি আমাদের মেজাজ ভালো রাখে, ভেতরে থেকে আনন্দ ও সুস্থতার ইতিবাচক অনুভূতি দেয়। কৃতজ্ঞতা মানুষকে আরও সুখী ও আশাবাদী বোধ করতে, সুন্দরভাবে প্রতিকূলতা মোকাবিলা করতে এবং শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ে তুলতে সহায়তা করে।
হান্টসম্যান মেন্টাল হেলথ ইনস্টিটিউটের মতে, কৃতজ্ঞতার মনস্তাত্ত্বিক, শারীরিক ও সামাজিক সুবিধা রয়েছে। সুখ বোধ কৃতজ্ঞতা নিয়ে আসে না, বরং কৃতজ্ঞতাবোধ সুখ নিয়ে আসে। অপরকে বা নিজেদেরকে, প্রকৃতিকে বা সর্বশক্তিমানকে ধন্যবাদ জানানোর চেয়েও বেশি কিছু হচ্ছে কৃতজ্ঞতা। এটি মনকে আলোকিত করে, সন্তুষ্ট রাখে।
আমরা অনেকেই 'কৃতজ্ঞ মানসিকতার' সুবিধা উপলব্ধির চেষ্টা করি না। ভালো ও মন্দের মিশ্রণে এগিয়ে চলা প্রযুক্তিগত এবং বস্তুবাদী অনুভূতিগুলো আমাদেরকে জীবনের সহজ আনন্দ ও সুখের দিকে নিয়ে যায়। কিন্তু কৃতজ্ঞতা মনে প্রকৃত সুখ বাড়ায়। এটি সেই স্ফুলিঙ্গ যা আমাদের মনে আনন্দের চেতনা জাগিয়ে তোলে, শরীরে ছড়িয়ে দেয়।
সুখের মালিকানা প্রাকৃতিকভাবে হতে পারে না। 'দান, ক্ষমা ও কৃতজ্ঞতা'র সঙ্গে প্রতিদিন বেঁচে থাকার অভিজ্ঞতার মাধ্যমে সুখের বিকাশ হয় এবং সুখ অর্জন করতে হয়। এই সবগুলোকে একসঙ্গে বলা যায় 'উদারতা'।
ই-মেইল: [email protected]
Comments