৪৩ জেলা হাসপাতালে ৩ বছরেও আইসিইউ স্থাপনের নির্দেশনা বাস্তবায়ন হয়নি

২০২০ সালের এপ্রিলে ৫১২ কোটি টাকার প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়।
প্রতীকী ছবি

তিন বছর আগে প্রতিটি জেলা হাসপাতালে একটি করে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ৪৩টি জেলা হাসপাতাল ও ১০টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০ শয্যার আইসিইউ চালুর একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।

তবে এখনো সেইসব হাসপাতালে কোনো আইসিইউ সেবা চালু হয়নি।

২০২০ সালের এপ্রিলে ৫১২ কোটি টাকার প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়। চলতি বছরের ৩০ জুনের মধ্যে আইসিইউ স্থাপনের কথা ছিল। কর্মকর্তারা বলছেন, ১০টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউ সরঞ্জাম স্থাপন করা হয়েছে, তবে সেগুলো এখনো চালু হয়নি।

প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক শাহ গোলাম নবী তুহিন জানান, বর্তমানে ১৩টি জেলা হাসপাতালে আইসিইউ স্থাপনের কাজ চলছে।

তিনি দাবি করেন, লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) খোলার সমস্যা, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সরবরাহ শৃঙ্খলে সমস্যা হওয়ায় প্রকল্পটি বিলম্বিত হয়েছে।

তবে দেরির কারণগুলো সন্তোষজনক নয় বলে জানিয়েছেন এক বিশেষজ্ঞ।

কর্তৃপক্ষ প্রকল্পটি সংশোধন করে ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর নতুন সময়সীমা দিয়ে আরও ৩০১ কোটি টাকা চেয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় এখনো এই সংশোধনের অনুমোদন দেয়নি।

বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও গণপূর্ত অধিদপ্তর 'কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস' শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ।

প্রকল্প পরিচালক শাহ গোলাম নবী তুহিন বলেন, ২০২০ সালে মহামারি শুরুর সময় ৬৪টি জেলা হাসপাতালের কোনোটিতে আইসিইউ ছিল না।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক রশিদ-ই-মাহবুব বলেন, জেলা হাসপাতালে আইসিইউ না থাকায় গুরুতর অসুস্থ অনেক রোগী ঢাকায় আনার সময় অ্যাম্বুলেন্সে মারা যান।

চোখের সামনে এ ধরনের মৃত্যু চিকিৎসকদের জন্য খুবই মর্মান্তিক যোগ করেন তিনি।

ধীর অগ্রগতি

৬ মাস আগে দায়িত্ব নেওয়া প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক তুহিন বলেন, 'আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগে কাজের খুব কম অগ্রগতি হয়েছে।'

তার মতে, পিডব্লিউডি তাদের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় নির্মাণ কাজ শেষ করতে পারেনি।

অধ্যাপক তুহিন বলেন, 'টাকার অবমূল্যায়নের কারণে সরঞ্জাম আমদানিতে অসুবিধা হচ্ছে এবং সরঞ্জামের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ঠিকাদাররা সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন।

তিনি বলেন, অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দের পর ঠিকাদাররা সরঞ্জাম আমদানি শুরু করেছে।

বিএসএমএমইর সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম প্রকল্প বাস্তবায়নে কর্তৃপক্ষের গাফিলতির সমালোচনা করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে জেলা হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ সংকটের কারণে ঢাকাগামী রোগীদের ওপর চাপ কমবে। জেলা পর্যায়ে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান হবে।

হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালের কনসালটেন্ট জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ লেলিন চৌধুরী বলেন, বিলম্বের যে কারণ বলা হয়েছে তা সন্তোষজনক নয়। জেলা হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০ শয্যার আইসিইউ স্থাপন করা কঠিন কাজ নয়।

তার মতে, আইসিইউ স্থাপনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো অক্সিজেন ব্যাংক তৈরি করা, যা ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যে করা যেতে পারে।

বেশ কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, বেসরকারি হাসপাতালগুলো ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যে আইসিইউ স্থাপন করে।

তিনি বলেন, সরবরাহ শৃঙ্খলে সমস্যা এক্ষেত্রে কিছুটা প্রভাব ফেলতে পারে, তবে বিলম্বের জন্য এটিকে দোষারোপ করা যায় না। তিনি অবহেলা ও বিলম্বের জন্য কর্মকর্তাদের জবাবদিহি করার কথাও জানান।

প্রকল্প পরিচালক বলেন, প্রথমে ১৩টিতে আইসিইউ স্থাপন করা হবে। দ্বিতীয় ধাপে আরও ১৪টি জেলা হাসপাতালে বাকি ১৬টি হাসপাতাল পরে আইসিইউ পাবে।

তিনি বলেন, যে ১০টিতে আইসিইউ স্থাপন করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে আছে, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সিলেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

তিনি বলেন, মুন্সীগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতাল, ফেনী-২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল ও লক্ষ্মীপুর জেনারেল হাসপাতাল প্রথম ১৩টি হাসপাতালের মধ্যে আছে যারা আইসিইউ পাবে।

এসএমসিএইচের পরিচালক খলিলুর রহমান জানান, ইতোমধ্যে সেখানে ১০টি আইসিইউ শয্যা স্থাপন করা হয়েছে।

মুন্সীগঞ্জের সিভিল সার্জন মনজুরুল আলম বলেন, 'অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। জেলা হাসপাতালে জনবলও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যে কোনো দিন এসব সরঞ্জাম আসতে পারে।'

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কর্মকর্তারা কঠোর পরিশ্রম করছেন।

আইসিইউ পরিচালনার জন্য জনবল নিয়োগের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রকল্পের আওতায় কিছু লোক নিয়োগ দেওয়া হবে এবং বাকিদের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সোসাইটি অব অ্যানেস্থেসিওলজিস্টের সভাপতি অধ্যাপক দেবব্রত বণিক বলেন, আইসিইউ পরিচালনার জন্য তারা আড়াই হাজারেরও বেশি চিকিৎসক, নার্স ও কর্মীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।

অনুবাদ করেছেন সুমন আলী

Comments