শারীরিক নিষ্ক্রিয়তায় ১৮০ কোটি মানুষ রোগের ঝুঁকিতে

জীবনযাপনে শারীরিক নিষ্ক্রিয়তায় হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের মতো কার্ডিওভাসকুলার রোগ, টাইপ-টু ডায়াবেটিস, ডিমেনশিয়া এবং স্তন ও কোলন ক্যানসারের মতো রোগাক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বব্যাপী প্রাপ্তবয়স্কদের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ (৩১ শতাংশ)—১৮০ কোটি মানুষ—প্রয়োজনীয় পরিমাণ হাঁটাচলা বা এমন শারীরিক কার্যক্রম করেন না। ২০২২ সালের এই ফলাফল বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষের এমন নিষ্ক্রিয় জীবনধারার একটি উদ্বেগজনক প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, যা ২০১০ সালের তুলনায় পাঁচ শতাংশ বেশি।

এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে এই মাত্রা আরও ৩৫ শতাংশ বেড়ে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন তারা। যদিও ইতোমধ্যেই শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা কমানোর যে বৈশ্বিক লক্ষ্যমাত্রা, তা থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে বিশ্ব।

এ বিষয়ে বৈশ্বিক লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে, ২০৩০ সালের মধ্যে শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা ১৫ শতাংশ কমিয়ে আনা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) সুপারিশ হচ্ছে, প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি সপ্তাহে ১৫০ মিনিট মাঝারি অথবা ৭৫ মিনিট জোরালো শারীরিক কার্যক্রম করতে হবে। তা না হলে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের মতো কার্ডিওভাসকুলার রোগ, টাইপ-টু ডায়াবেটিস, ডিমেনশিয়া এবং স্তন ও কোলন ক্যানসারের মতো রোগাক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

সম্প্রতি দ্য ল্যানসেট গ্লোবাল হেলথ জার্নালে প্রকাশিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসাস বলেন, 'এই গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেছে যে শারীরিক কার্যক্রম বৃদ্ধি করলে তা ক্যানসার ও হৃদরোগ কমানো এবং মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখা ও সুস্থ থাকার সুযোগ করে দেবে।'

তিনি বলেন, 'আমাদের অবশ্যই শারীরিক কার্যকলাপ বাড়ানোর প্রত্যয় আরও দৃঢ় করতে হবে। সেইসঙ্গে এই উদ্বেগজনক প্রবণতা কমানোর জন্য শক্তিশালী নীতি ও বর্ধিত তহবিল প্রয়োজন।'

মানুষের সবচেয়ে বেশি নিষ্ক্রিয় জীবনযাপনের হার এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের উচ্চআয়ের দেশগুলোতে ৪৮ শতাংশ এবং দক্ষিণ এশিয়ায় ৪৫ শতাংশ। এই হার পশ্চিমা দেশগুলোতে ২৮ শতাংশ এবং ওশেনিয়া মহাদেশে ১৪ শতাংশ পর্যন্ত।

উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, শারীরিক নিষ্ক্রিয়তার ক্ষেত্রেও লিঙ্গ ও বয়সের পার্থক্য রয়েছে। বিশ্বব্যাপী এখনো পুরুষের তুলনায় নারীদের নিষ্ক্রিয়তার হার বেশি। প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের নিষ্ক্রিয় জীবনযাপনের হার যেখানে ৩৪ শতাংশ, পুরুষের ক্ষেত্রে তা ২৯ শতাংশ। কোনো কোনো দেশে নারী ও পুরুষের মধ্যে নিষ্ক্রিয় জীবনযাপনের হারের পার্থক্য ২০ শতাংশ পর্যন্ত রয়েছে। এ ছাড়া ষাটোর্ধ্বরা অন্যদের চেয়ে বেশি নিষ্ক্রিয়। ফলে তাদের মাঝে এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা খুবই জরুরি।

এই সমীক্ষার ফলাফল উদ্বেগজনক হলেও বিশ্বের বেশ কিছু দেশে উন্নতির লক্ষণও রয়েছে। সমীক্ষায় দেখা গেছে, বিশ্বের প্রায় অর্ধেক দেশ গত এক দশকে বেশ উন্নতি করেছে এবং ২২টি দেশের বৈশ্বিক লক্ষ্যমাত্রা পূরণের সম্ভাবনা রয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই ফলাফলের আলোকে আহ্বান জানিয়েছে, প্রতিটি দেশ যেন তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত নাগরিকদের শারীরিক কসরত হয় এমন কার্যক্রমে উদ্বুদ্ধ করতে নীতি বাস্তবায়ন জোরদার করে। এর মধ্যে থাকতে পারে খেলাধুলা, হাঁটা, সাইকেল চালানো, এমনকি চলাচলের ক্ষেত্রে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফিজিক্যাল অ্যাকটিভিটি ইউনিটের প্রধান ড. ফিওনা বুল বলেন, 'শারীরিক কার্যক্রম বৃদ্ধির এই প্রচার কেবল ব্যক্তিকেন্দ্রিক হলে হবে না। এর জন্য পুরো সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি এবং পরিবেশ তৈরি করা প্রয়োজন। এতে করে সবাই আরও সক্রিয় হতে পারবে এবং তাদের জন্য বিষয়টি সহজ ও নিরাপদ হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh Bank to rescue problem banks

The Bangladesh Bank is set to rescue problem banks including some Shariah-based banks controlled by S Alam Group by managing liquidity or merging a few.

1h ago