বসুধৈব কুটুম্বকম: ভারতীয় ঐতিহ্য ও বিশ্ব সৌহার্দ্যের বাণীতে জি-২০

ছবি: এএফপি

একই পৃথিবীর ছায়াতলে আমাদের সকলের বসবাস। বসুধৈব কুটুম্বকম– অর্থাৎ পৃথিবীতে সকলেই সকলের আত্মীয়। এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ— ভারতের ঐতিহ্যকে সঙ্গে নিয়ে বিশ্ব সৌহার্দ্যের বাণীতে বলিয়ান এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখেই ভারতের দিল্লিতে এ বছরের জি-২০ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

জি-২০ বা গ্রুপ অব টোয়েন্টি মূলত ১৯টি দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমন্বয়ে গঠিত। দেশগুলো হচ্ছে আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, জাপান, কোরিয়া, মেক্সিকো, রাশিয়া, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র।

সদস্য দেশগুলোর নাম দেখেই আন্দাজ করে নেওয়া যায়, কতটা শক্তিশালী এই জোট। আদতে বিশ্ব জিডিপির সিংহভাগ, তথা শতকরা ৮৫ ভাগই এই দেশগুলোর আওতাধীন।

এছাড়াও বিশ্ব বাণিজ্যের শতকরা ৭৫ ভাগও এই দেশগুলোতেই পরিচালিত হয়। বিশ্ব মানচিত্রের কাঠামো নির্মাণ, জোরদারকরণ এবং সেইসঙ্গে প্রধান সব আন্তর্জাতিক অর্থনীতি বিষয়ক কার্যক্রম পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে এই জোট।

কেন জি-২০

জি-২০ এর যাত্রা শুরু হয়েছিল বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায়। এর যাত্রায় প্রথম মাইলফলক স্থাপিত হয়েছিল ১৯৯৯ সালে। তৎকালীন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সংকট মোকাবেলায় অর্থমন্ত্রী এবং বিভিন্ন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরদের সমন্বয়ে এটি একটি ফোরাম হিসেবে গঠন করা হয়।

পরবর্তীতে ২০০৭ সালের বিশ্বমন্দার সূত্র ধরে ২০০৯ সালে এটিকে 'প্রিমিয়ার ফোরাম ফর ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন' মর্যাদায় উন্নীত করা হয়। প্রতি বছর এর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর উদ্যোগে জি-২০ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। প্রতি বছর ভেন্যুবদলও হয়।

যে দেশ 'হোস্ট' ভূমিকায় থাকে, মূলত তাদের ওপরই বিশ্ব অর্থনীতির পরিপ্রেক্ষিতে অন্যান্য রাষ্ট্রের সঙ্গে অধিকাংশ এজেন্ডা আলোচনার দায়িত্ব বর্তায়। এ বছর এই ভূমিকায় রয়েছে ভারত সরকার। 'ম্যাক্রো অর্থনীতি' এ বছর আলোচনার মূল বিষয় হলেও এ সম্মেলনের আলোচ্যসূচিতে ধীরে ধীরে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বাণিজ্য, টেকসই উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, কৃষিখাত, জ্বালানি, পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্নীতি দমনের মতো অন্যান্য আবশ্যক বিষয়ও।

প্রেক্ষাপট: ২০২৩

আজ ৯ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়েছে জি-২০ সম্মেলন। দুদিন ব্যাপী এ সম্মেলনটি আয়োজিত হচ্ছে নয়াদিল্লির প্রগতি ময়দান সংলগ্ন ভারত মন্ডপম ইন্টারন্যাশনাল এক্সিবিশন-কনভেনশন সেন্টারে।

ভারত, এমনকি দক্ষিণ এশিয়ায় অনুষ্ঠিত হওয়া প্রথম জি-২০ সম্মেলন এটি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই সম্মেলন উপলক্ষে বিভিন্ন রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ১৫টিরও বেশি দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় অংশ নেবেন। এরই জেরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার হবার আভাসও দেখা যাচ্ছে।

গত শুক্রবার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এক্স (টুইটার) অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে বলেন, 'আজ এবং পুরো জি-২০ সম্মেলন জুড়ে আমরা যুক্তরাষ্ট্র-ভারত এর অংশীদারিত্ব আরও জোরদারকরণে প্রচেষ্টা চালাব এবং ইতিহাসের অন্য যেকোনো সময়ের চাইতে তা অনেক বেশি শক্তিশালী হবে।'

জি-২০ প্ল্যাটফরমে বাংলাদেশ 

এবারের জি-২০ সম্মেলনে বাংলাদেশকে অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমন্ত্রিত হিসেবে এটি দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র দেশ। বাংলাদেশ ছাড়াও সম্মেলনের অন্যান্য অতিথিরা হলো– নেদারল্যান্ডস, স্পেন, নাইজেরিয়া, ওমান, সিঙ্গাপুর, মরিশাস এবং সংযুক্ত আরব-আমিরাত।

ধারণা করা হচ্ছে, এ সম্মেলনে বহুল প্রতীক্ষিত তিস্তা চুক্তি নিয়ে আলাপের সম্ভাবনা রয়েছে। সম্মেলনের পরে ঢাকা সফরে আসতে যাচ্ছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁখো। গত ৩০ বছরে এই প্রথম বাংলাদেশে কোনো ফরাসি রাষ্ট্রপ্রধানের আগমন ঘটবে।

গ্রন্থনা: অনিন্দিতা চৌধুরী  

Comments

The Daily Star  | English

Blockade at Shahbagh demanding AL ban

The demonstration follows a sit-in that began around 10:00pm last night in front of the Chief Adviser's residence

2h ago