ইসরায়েল-হামাস সংঘাত: চতুর্থ দিনের গাজা পরিস্থিতি
ইসরায়েল–হামাস সংঘাতের চতুর্থ দিন আজ। গতকাল সোমবার থেকে গাজা উপত্যকা সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ করে রেখেছে ইসরায়েল। রাতভর ২০০ এর বেশি লক্ষ্যবস্তুতে তীব্র হামলা চালানো হয়েছে।
গতকাল হামাস অধ্যুষিত গাজার সর্বাত্মক নিয়ন্ত্রণ নিতে বিদ্যুৎ, খাবার, পানি ও গ্যাস সব বন্ধ থাকবে বলে ঘোষণা দেয় ইসরায়েল।
ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী গাজা উপত্যকার দৈর্ঘ্য ৪১ কিলোমিটার, এটি ১০ কিলোমিটার প্রশস্ত। সীমান্তের বড় অংশ রয়েছে ইসরায়েলের সঙ্গে, বাকিটা মিশরের সঙ্গে।
এই ঘোষণার আগেও গাজা উপত্যকার আকাশ, স্থল ও সমুদ্রপথ ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণেই ছিল। অন্যদিকে গাজা-মিশর সীমান্ত ক্রসিংয়ে লোকজনের আসা–যাওয়া নিয়ন্ত্রণ করে মিশর। গতকাল সর্বাত্মক অবরোধের ঘোষণার পর গাজা-মিশর সীমান্ত ক্রসিং পুরোপুরি বন্ধ করা হয়েছে বলে জানায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী।
গাজা উপত্যকায় ২০০৭ সাল থেকে ইসরায়েলের অবরোধ ও নিয়ন্ত্রণ চলছে। এর ফলে এ অঞ্চলের ২ লাখেরও বেশি মানুষ বিদ্যুৎ ও পানি সংকটে ছিলেন। এ ছাড়া, চিকিৎসা সেবা ও ওষুধের অপ্রতুলতাও আছে।
গতকাল সর্বাত্মক ঘোষণার পর গাজায় রাতভর বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী।
আজ মঙ্গলবার ইসরায়েলি বিমান বাহিনী জানায়, গাজার পাশে রিমাল এবং খান ইউনিসসহ গাজা উপত্যকার ২০০টিরও বেশি স্থানে হামলা চালানো হয়েছে।
সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, যেসব স্থানে আঘাত করা হয়েছে তার মধ্যে একটি মসজিদের ভেতরে অস্ত্র রাখার জায়গা এবং হামাসের অ্যান্টিট্যাঙ্ক গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র বাহিনীর ব্যবহৃত একটি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে।
মঙ্গলবার ইসরায়েলের সামরিক মুখপাত্র রিচার্ড হেশট জানান, গাজা উপত্যকার আশেপাশে ইসরায়েলের ভেতর প্রায় দেড় হাজার হামাস সদস্যের মরদেহ পাওয়া গেছে। সামরিক বাহিনী গাজা সীমান্ত মোটামুটি পুনরুদ্ধার করতে পেরেছে।
'গত রাত থেকে আমাদের জানামতে গাজা থেকে কেউ প্রবেশ করেনি। তবে অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে,' বলেন তিনি। সীমান্তের আশেপাশের বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার কাজ 'প্রায় শেষ' বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ইসরায়েলি বিমান বাহিনী জানিয়েছে, জরুরি ভিত্তিতে ইউরোপ থেকে সামরিক বাহিনীর রিজার্ভ সদস্যদের ফিরিয়ে আনা হচ্ছে।
ইসরায়েলের এই ভয়াবহ হামলায় ১ লাখ ৮০ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
এক্সে (টুইটার) ইউনাইটেড নেশনস রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্কস এজেন্সি ফর প্যালেস্টাইন রিফিউজি (ইউএনআরডব্লিউএ) জানায়, গাজা উপত্যকা জুড়ে গত ২৪ ঘণ্টায় লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এ সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা জানিয়েছে সংস্থাটি।
এদিকে 'স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা হুমকির মুখে' উল্লেখ করে ওই অঞ্চলের হাসপাতালগুলোতে জরুরি চিকিৎসা সহায়তা প্রবেশ নিশ্চিত করতে একটি নিরাপদ করিডোর খোলার আহ্বান জানিয়েছে গাজার ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
আজ মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ আহ্বান জানায়।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা পরিচালনার জন্য বিদ্যুৎ নেই। এতে অসুস্থ ও আহত সব মানুষ হুমকির মুখে পড়বে বলে।'
গত শনিবার গাজা থেকে ইসরায়েলের দিকে অন্তত ৫ হাজারের বেশি রকেট ছুড়েছে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাস। পাশাপাশি ইসরায়েলের ভেতরে ঢুকেও হামলা চালায় তারা। এর জবাবে শনিবার থেকে গাজায় পাল্টা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল।
Comments