কে এই ‘আল-আকসা ফ্লাড’ এর মাস্টারমাইন্ড মোহাম্মদ দেইফ

মোহাম্মদ দেইফ খুব কমই কথা বলেন। কখনও জনসমক্ষে উপস্থিত হন না। গত শনিবার যখন হামাসের টিভি চ্যানেল থেকে ঘোষণা করা হয়: আর কিছুক্ষণের মধ্যেই দেইফ বক্তব্য রাখবেন; ফিলিস্তিনিরা জানত বড় কিছু ঘটছে।
হামাসের ওয়েবসাইটে ২০০৫ সালে মোহাম্মদ দেইফের পোস্ট করা ভিডিও থেকে নেওয়া স্ক্রিনশট। ছবি: এপি

তাকে হত্যা করতে পাঁচ বার গুপ্ত হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে ইসরায়েল। একবার অল্পের জন্য বেঁচে গেলেও এক পা ও এক চোখ হারান। এর পর থেকে চলাফেরা করেন হুইল চেয়ারে। সর্বশেষ ২০২১ সালেও তাকে হত্যার চেষ্টা ব্যর্থ হয়। ইসরায়েলের বিমান হামলায় সাত মাসের ছেলে, তিন বছরের মেয়ে ও স্ত্রীকে হারিয়েছেন। তিনি হামাসের সামরিক শাখা আল-কাশিম ব্রিগেডের প্রধান মোহাম্মদ দেইফ।

মোহাম্মদ দেইফ গত শনিবার ইসরায়েলে অতর্কিত হামলার মূল পরিকল্পনাকারী। গত কয়েক দশক ধরে ইসরায়েলের 'মোস্ট ওয়ান্টেড' ব্যক্তিদের তালিকায় সবার ওপরে আছে তার নাম।

দেইফ খুব কমই কথা বলেন। কখনও জনসমক্ষে উপস্থিত হন না। গত শনিবার যখন হামাসের টিভি চ্যানেল থেকে ঘোষণা করা হয়: আর কিছুক্ষণের মধ্যেই দেইফ বক্তব্য রাখবেন; ফিলিস্তিনিরা জানত বড় কিছু ঘটছে।

রেকর্ড করা বক্তব্যে দেইফকে বলতে শোনা যায়, 'আজ আল-আকসার ক্রোধ, আমাদের জাতির ক্রোধ বিস্ফোরিত হচ্ছে। আমাদের যোদ্ধারা আজ দিনটা আপনাদের—আজ এই অপরাধীকে বোঝানোর দিন যে তাদের সময় ফুরিয়ে গেছে।'

ফিলিস্তিনি সূত্রের বরাতে রয়টার্স জানায়, গাজায় চলমান ইসরায়েলি বিমান হামলায় যেসব বাড়ি ধ্বংস হয়েছে, এর একটি দেইফের বাবার। হামলায় দেইফের ভাই ও পরিবারের আরও দুই সদস্য নিহত হয়েছেন।

মোহাম্মদ দেইফ সম্পর্কে নতুন করে বিশেষ কিছু জানা যায় না। তার জন্ম ১৯৬৫ সালে গাজার খান ইউনিস শরণার্থী শিবিরে। জন্মের পর তার নাম রাখা হয় মোহাম্মদ মাসরি। গাজা তখন মিসরের নিয়ন্ত্রণে ছিল।

১৯৮০-এর দশকের শেষ দিকে ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতার সংগ্রাম 'ইন্তিফাদা' শুরুর পর হামাস প্রতিষ্ঠিত হলে মোহাম্মদ মাসরি তাতে যোগ দেন। হামাসে তিনি মোহাম্মদ দেইফ নামে পরিচিত হন। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ দেইফ দ্রুত হামাসের সামরিক ইউনিট, আল-কাশিম ব্রিগেডে জনপ্রিয়তা পান।

ধারণা করা হয় মোহাম্মদ দেইফের এটাই একমাত্র ছবি। ছবিটি ২০০০ সালের আশপাশে কোনো এক সময়ের তোলা।

হামাসের একটি সূত্র জানায়, দেইফ ১৯৮৯ সালে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন। ওই দফায় প্রায় ১৬ মাস কারাবন্দি থাকেন তিনি। হামাসের নেতা হয়ে ওঠার পর দেইফ বোমা তৈরি ও মাটির নিচে সুড়ঙ্গের জাল বিস্তারের কাজ শুরু করেন।

দেইফ গাজার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি থেকে বিজ্ঞানে স্নাতক। পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও জীববিজ্ঞান নিয়ে পড়ালেখা করেছেন। শিল্পকলার অনুরাগী দেইফ তার বিশ্ববিদ্যালয়ে বিনোদন সংক্রান্ত কমিটির প্রধান ছিলেন এবং মঞ্চে অভিনয় করতেন।

হামাসের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রের বরাতে রয়টার্স জানায়, আল-কাশিম ব্রিগেডের কমান্ডার দেইফ এবং গাজায় হামাসের নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার যৌথভাবে এই হামলার ছক কষেন। তবে এক্ষেত্রে দুই জনের মস্তিষ্ক কাজ করলেও মাস্টারমাইন্ড ছিলেন একজনই।

হামাসের বৈদেশিক সম্পর্ক বিভাগের প্রধান আলী বারাকা বলেন, আমরা দুই বছর ধরে এই যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি।

রেকর্ড করা বক্তব্যে শান্ত কণ্ঠে দেইফকে বলতে শোনা যায়, ফিলিস্তিনিদের ওপর যে অপরাধ চলছে, হামাস তা বারবার বন্ধ করতে বলেছে। ফিলিস্তিনের দখলদারিত্বের অবসান এবং বন্দিদের মুক্তি দিতে ইসরায়েলকে আহ্বান জানানো হয়েছে।

'ইসরায়েলি দখলদাররা প্রতিদিন পশ্চিম তীরে আমাদের গ্রাম-শহরে হামলা চালায়। আমাদের বাড়িতে হামলা করে হতাহত করা হয়, অথবা আটক করা হয়। আমাদের হাজার হাজার একর জমি তারা দখল করেছে। আমাদের জনগণকে বাস্তুচ্যুত করে অবৈধ বসতি নির্মাণ করা হয়েছে। তারা অবৈধভাবে গাজাকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে।'

১৯৬৭ সালে তৃতীয় আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর পশ্চিম তীরে প্রায় ৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা বেদখল করে ইসরায়েল। এর পর থেকে এই এলাকাটি ফিলিস্তিন সংকটের কেন্দ্রবিন্দুতে আছে।

এই প্রসঙ্গে দেইফ বলেন, দখলদারিত্ব বন্ধ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে হামাস। কিন্তু ইসরায়েল তার উসকানিমূলক কাজ চালিয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, ফিলিস্তিনিদের মুক্তি দিতে একটি চুক্তিতে আসার জন্য ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে হামাস। কিন্তু ইসরায়েল তা প্রত্যাখ্যান করেছে।

দেইফ বলেন, আন্তর্জাতিক আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ইসরায়েলি দখলদারিত্বের মহোৎসব এবং তাতে যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্রদের নীরবতা অবসানের সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা।'

ফিলিস্তিনিদের কাছে মোহাম্মদ দেইফ একজন লোকনায়ক। ভিডিও বার্তায় তাকে মুখোশ পরা অবস্থায় দেখা যায়। কখনো শুধু তার ছায়া দেখানো হয়।

হামাসের একটি সূত্র জানায়, দেইফ স্মার্ট ফোনের মতো আধুনিক ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করেন না।

তিনি অধরা। তিনি ছায়ার মধ্যে থাকা মানুষ।

Comments

The Daily Star  | English

Three difficult choices to heal economy

Bangladesh yesterday made three major decisions to cushion the economy against critical risks such as stubborn inflation and depletion of foreign currency reserves.

5h ago