রাফা: যেখানে চরম ভয় আর অন্তহীন উদ্বেগ

রাফায় ইসরায়েলি বোমা হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে এক শিশু। ছবি: এএফপি

ফিলিস্তিনের গাজার রাফা শহরে বিমান হামলার সাথে সাথে স্থল হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। গতকাল বুধবার সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্ল্যানেট ল্যাবস থেকে পাওয়া স্যাটেলাইট ইমেজ থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর গাজায় ইসরায়েলের স্থল হামলার সঙ্গে এসব ছবির ব্যাপক সাদৃশ্য রয়েছে।

গত ৫ থেকে ৭ মে পর্যন্ত এসব স্যাটেলাইট ইমেজে দেখা যায়, কিছু ভবন বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী -আইডিএফ রাফাহ ক্রসিং গেট থেকে ফিলিস্তিনের এক মাইলের বেশি ভেতরে ঢুকে পড়েছে।

এদিকে, ইসরায়েলের হামলার জেরে রাফায় আশ্রয় নেওয়া মানুষেরা তীব্র আতঙ্কের মধ্যে দিন পার করছে বলে জানিয়েছে আল জাজিরা ও এএফপি।

বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি মারওয়ান আল-মাসরি বলেন, রাফাতে নাগরিক জীবন বলতে আর কিছু নেই। ৩৫ বছর বয়সী মাসরি এএফপিকে বলেন, শহরের পশ্চিমাঞ্চলের রাস্তাগুলো সব ফাঁকা হয়ে গেছে।

'আমরা সবাই হামলার ভয়ে আছি,' বলেন মাসরি।

তিনি বলেন, আমি আমার আত্মীয় সবাই আমরা গুলি আর বোমা হামলার ভয়ে ভীত, আতঙ্কিত। ধীরে ধীরে এগুলো আমাদের আরও কাছে এগিয়ে আসছে।

মধ্য গাজার আল-বুরেইজ শরণার্থী শিবিরে ছিলেন আল বারুকি। ইসরায়েলের হামলায় সব হারিয়ে রাফায় আশ্রয় নিয়েছিলেন তিনি। বলেন, আবারও গৃহহীন হয়ে গেলাম।

'আমরা আল বুরেইজে আমাদের ঘরের ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে বেরিয়ে এসেছিলাম। এখন রাফায় তীব্র গোলাবর্ষণে আমি আমার সন্তানেরা আবার পথে এসে দাঁড়িয়েছি।'

৩৯ বছর বয়সী এই নারী জানান, মাত্র দুই সপ্তাহ আগে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তার সন্তানের জন্ম দেন তিনি।

বারুকি বলেন, আমরা জানি না কোথায় যাব আমরা। কোনো নিরাপদ জায়গা আর নেই।

রাফার পশ্চিমাঞ্চলেও ইসরায়েলি হামলা শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে এএফপি।

বারুকি ও মাসরি দুজনই জানান, অবিরাম গুলি ও বোমায় ধুলা ও ধোঁয়ায় সেখানে শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে তাদের।

২৯ বছর বয়সী মুহানাদ আহমেদ কিশতা বলেন, 'আমরা রাফায় চরম ভয় ও সীমাহীন উদ্বেগের মধ্যে বসবাস করছি।'

তিনি বলেন, 'ইসরায়েলি সেনাবাহিনী যেসব স্থানকে নিরাপদ বলে দাবি করছে, সেগুলোতেও বোমা হামলা চালানো হচ্ছে।

রাফা এবং খান ইউনিসে কর্মরত একজন চিকিৎসক জেমস স্মিথ বলেন, মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে না পারায় স্বাস্থ্য পরিস্থিতি বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে।

তিনি বলেন, গত কয়েকদিন ধরে অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে।

রাফায় দাতব্য সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডারের (এমএসএফ) মেডিকেল কো-অর্ডিনেটর মোহাম্মদ আবু মুঘাইসিব বলেন, রাফা পরিস্থিতি জটিল।

তিনি বলেন, লোকজন তাদের জিনিসপত্র, তোশক, কম্বল, রান্নাঘরের জিনিসপত্র যা পাচ্ছে সব নিয়ে পূর্ব রাফা থেকে পালিয়ে যাচ্ছে।

কিন্তু রাফার পশ্চিমে আর কোনো জায়গা নেই, বলেন মুঘাইসিব।

গত সোমবার রাফায় হামলা চালানো হবে জানিয়ে ফিলিস্তিনিদের এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেয় ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী।

এই নির্দেশের পর ইসরায়েলি বোমা হামলার ভয়ে রাফা ছেড়ে যেতে মরিয়া ফিলিস্তিনি পরিবারগুলো।

'তারা আমাদের ওপর বোমা ফেলছে, আমাদের হুমকি দিচ্ছে, চলে যেতে বলছে - কিন্তু আমাদের আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই,'  আল জাজিরাকে বলেন মোহাম্মদ ওয়েদা।

ওয়েদা বলেন, 'ব্যক্তিগতভাবে আমি কারও কাছে যেতে পারি এমন কেউ নেই। আমার মা মারা গেছেন। আমার আর কেউ নেই। আমরা কেবল এখানেই ঘুরছি। আর আমার কাছে কোনো অর্থও নেই যা দিয়ে অন্য কোথাও যেতে পারি।'

ইসরায়েলের হামলার প্রায় দেড় মাস পর গাজার উত্তরে বেইত হানুন থেকে রাফায় পালিয়ে এসেছিলেন ওয়েদা। তিনি বলেন, যদি সেখানে থাকতাম তাহলে সন্তানদের নিয়ে মারা যেতাম।

তিনি বলেন, আমার এক ছেলে ও দুই মেয়ে আছে। আমার তিন মাস বয়সী ছেলে জাইন বোমার ধোঁয়ায় মারা গেছে।

এই যে তার পরিচয়পত্র, চোখের পানি আটকে বলেন ওয়েদা।

গত সাত মাসে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর গুলি ও বোমা হামলায় ৩৪ হাজার ৯০৪ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ৭৮ হাজারের বেশি মানুষ। হামলা থেকে বাঁচতে রাফায় আশ্রয় নিয়েছে নারী শিশুসহ ১৪ লাখ মানুষ।

Comments

The Daily Star  | English

No price too high for mass deportations

US President-elect Donald Trump has doubled down on his campaign promise of the mass deportation of illegal immigrants, saying the cost of doing so will not be a deterrent.

5h ago