ফ্রান্সে দ্বিতীয় ধাপের ভোটের আগে কট্টর ডানপন্থীদের বিরুদ্ধে ঐক্য গঠনের উদ্যোগ
ফ্রান্সে রোববারের নির্বাচনে কট্টর ডানপন্থী ন্যাশনাল র্যালি (আরএন) দলের সাফল্যের পর দ্বিতীয় পর্যায়ের ভোটের আগে একতাবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করছে মধ্য ও বামপন্থী জোট ৷
আজ মঙ্গলবার এই তথ্য জানিয়েছে এএফপি।
কট্টর ডানপন্থীদের ক্ষমতা থেকে দূরে রাখতে অনেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করছেন ৷
মেরিন লা পেনের ডানপন্থী ন্যাশনাল র্যালি পার্টি রোববারের প্রথম দফা নির্বাচনে দুর্দান্ত জয় পেয়েছে । এ নির্বাচনে মাখোঁর মধ্যপন্থী জোট বামপন্থী জোটের পেছনে থেকে তৃতীয় হয়েছে । গত রোববারের প্রথম দফা নির্বাচনের প্রাথমিক ফল অনুযায়ী, মেরিন লা পেনের আরএন ৩৩ শতাংশ ভোট পেয়েছে। বামপন্থী নিউ পপুলার ফ্রন্ট জোট ২৮ শতাংশ ভোট পেয়েছে। আর মাখোঁর মধ্যপন্থী জোট পেয়েছে ২০ শতাংশ ভোট।
কিন্তু ৭ জুলাই দ্বিতীয় দফা ভোটের আগে দেখার বিষয় থাকছে, আরএন জাতীয় পরিষদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারে কি না। আরএন সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে সরকার গঠন করতে পারবে এবং লা পেনের মনোনীত জর্ডান বারদেলাকে (২৮) প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করতে পারবে।
কোনো জোট সরাসরি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় দ্বিতীয় পর্যায়ে আবার ভোটগ্রহণ হবে ৷
ফ্রান্সের সাম্প্রতিক ইতিহাসে প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচনে এই দ্বিতীয় সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে আসছে বাকি দলগুলো৷ কট্টর ডানপন্থী শক্তির উত্থান রুখতে তারা মতবিরোধ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ভোটারদের সামনে উপস্থিত হয়েছে ৷ এবারও সেই চেষ্টা শুরু হয়েছে ৷
প্রেসিডেন্ট মাখোঁর মধ্যপন্থী জোট ও বাম দলগুলোর জোট সোমবার পার্লামেন্ট নির্বাচনের আগামী ৭ জুলাই দ্বিতীয় পর্যায়ের ভোটের জন্য রণকৌশল স্থির করার উদ্যোগ শুরু করেছে ৷
রোববারের নির্বাচনে বাম জোট দ্বিতীয় ও মাখোঁর জোট তৃতীয় স্থান দখল করেছে৷ একাধিক জনমত সমীক্ষা অনুযায়ী বিরোধী ঐক্য সম্ভব হলে আরএন দল ২৮৯ আসনে জয়লাভ করে পার্লামেন্টে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না ৷ রোববার ফল প্রকাশের পর মাখোঁ কট্টর ডানপন্থীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক গণতান্ত্রিক জোট গড়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন৷ মঙ্গলবার সন্ধ্যার মধ্যে প্রার্থীরা দ্বিতীয় পর্যায়ের ভোটের জন্য মনোনয়ন প্রত্যাহার করার সুযোগ পাচ্ছেন ৷ সংবাদ সংস্থা এএফপির সূত্র অনুযায়ী ইতোমধ্যেই মধ্যপন্থী ও বাম জোটের দেড়শোরও বেশি প্রার্থী সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ৷
আরএন দল ভোটারদের উদ্দেশ্যে দ্বিতীয় পর্যায়েও জোরালো সমর্থনের আহ্বান জানিয়েছে ৷
প্রথম পর্যায়ে পার্লামেন্টে ৭৬টি আসনে চূড়ান্ত ফল স্থির হয়ে গেছে ৷ বাকি আসনগুলো দখলের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে সেই দল ৷ কাঙ্ক্ষিত ফল পেলে ফ্রান্সের আধুনিক ইতিহাসে এই প্রথম কোনো কট্টর ডানপন্থী দল ক্ষমতায় আসবে ৷
মাখোঁ ২০২৭ পর্যন্ত নিজের কার্যকাল শেষ করলে তাঁকে এমন এক সরকারের সঙ্গে কাজ করতে হবে৷ আগাম নির্বাচন ডাকার কারণে তাঁর বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় উঠেছে ৷ আগামী রোববার আরএন চূড়ান্ত সাফল্য পেলে তাঁর পদত্যাগের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না ৷
ফ্রান্সে এমন পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দুশ্চিন্তা দেখা দিচ্ছে৷ জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক বলেন, 'ফ্রান্সে কট্টর ডানপন্থীদের সাফল্য উদ্বেগের কারণ ৷'
'আরএন দল ইউরোপকে সমাধানের বদলে সমস্যা হিসেবে দেখে', যোগ করেন তিনি।
পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টুস্ক এই ফলকে ফ্রান্স ও ইউরোপের জন্য 'অত্যন্ত বিপজ্জনক' হিসেবে বর্ণনা করেছেন ৷ তবে ইতালির কট্টর ডানপন্থী প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি ও হাঙ্গেরির কট্টর জাতীয়তাবাদী প্রধানমন্ত্রী ফ্রান্সের নির্বাচনের ফলকে স্বাগত জানিয়েছেন ৷
এএফপি, ডিপিএ
Comments