গোত্র-বর্ণ নয়, যোগ্য প্রার্থী হিসেবেই জিততে চান কমলা

ওয়াশিংটনে কৃষ্ণাঙ্গদের কংগ্রেশনাল ককাস ফাউন্ডেশন আয়োজিত নৈশভোজে কমলা হ্যারিস। ছবি: রয়টার্স
ওয়াশিংটনে কৃষ্ণাঙ্গদের কংগ্রেশনাল ককাস ফাউন্ডেশন আয়োজিত নৈশভোজে কমলা হ্যারিস। ছবি: রয়টার্স

নভেম্বরের নির্বাচনে জয়ী হলে তিনিই হবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম অশ্বেতাঙ্গ ও দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত নারী প্রেসিডেন্ট। তবে নির্বাচনী প্রচারণার সময় এ বিষয়গুলোতে তেমন জোর দিচ্ছেন না কমলা হ্যারিস। বরং নিজের দক্ষতা-অভিজ্ঞতা ও পরিকল্পিত নীতিমালা নিয়ে কথা বলছেন।

আজ রোববার এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এপি।

ভোটারদের মনোযোগ আকর্ষণে প্রেক্ষাপট বুঝে নিজের পূর্বপুরুষের কথা উল্লেখ করলেও, বিষয়টিকে কখনোই বক্তব্যে প্রাধান্য দেন না কমলা। বরং তার পরিকল্পিত নীতিমালা, দক্ষতা ও ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের সাফল্যের বিষয়গুলো উল্লেখ করেন তিনি।

আগামী দিনগুলোতে তিনি কিছু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সামনে নির্বাচনী প্রচারণা চালাবেন।

শনিবার ওয়াশিংটনে কৃষ্ণাঙ্গদের কংগ্রেশনাল ককাস ফাউন্ডেশন আয়োজিত নৈশভোজে তিনি উপস্থিত জনতাকে বলেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে তিনি মধ্যবিত্তদের জন্য আরও শক্তিশালী অর্থনীতি তৈরিতে কাজ করবেন,  ভোটাধিকার নিশ্চিত করবেন এবং নারীরা যাতে তাদের শারীরিক বিষয়গুলো নিয়ে নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিতে পারেন, সেটা নিয়ে কাজ করবেন।

তবে একই সভায় তার পূর্বসূরি ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কমলাকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম অশ্বেতাঙ্গ নারী ও দক্ষিণ এশীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, 'সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হতে পারেন।'

ওয়াশিংটনে কৃষ্ণাঙ্গদের কংগ্রেশনাল ককাস ফাউন্ডেশন আয়োজিত নৈশভোজে জো বাইডেন ও কমলা হ্যারিস। ছবি: রয়টার্স
ওয়াশিংটনে কৃষ্ণাঙ্গদের কংগ্রেশনাল ককাস ফাউন্ডেশন আয়োজিত নৈশভোজে জো বাইডেন ও কমলা হ্যারিস। ছবি: রয়টার্স

আগামী মঙ্গলবার তিনি ফিলাডেলফিয়ায় কৃষ্ণাঙ্গ সাংবাদিকদের জাতীয় সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।

বৃহস্পতিবার তিনি প্রখ্যাত টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব অপরাহ উইনফ্রেহ'র লাইভ অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। এ অনুষ্ঠানের সঙ্গে কিছু সংখ্যালঘু সংগঠনও যুক্ত থাকবে, যেমন 'উইন ইউথ ব্ল্যাক ওম্যান', 'হোয়াইট ওম্যান: আনসার দ্য কল' ও 'সাউথ এশিয়ানস ফর হ্যারিস।'

শুক্রবার উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যে যাবেন কমলা।

২০১০ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল পদে নিয়োগ পান কমলা। সে সময় তার প্রচারণার দায়িত্বে ছিলেন ব্রায়ান ব্রোকাও। তিনি বলেন, 'কমলা হ্যারিসের জীবনের গল্প, তার পরিচয়, তার উঠে আসার পেছনের কাহিনী ও চাকুরিতে অর্জিত দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা—এ সবই তার নির্বাচনী প্রচারণার গুরুত্বপূর্ণ অংশ'।

'তবে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ/অশ্বেতাঙ্গ বা দক্ষিণ এশীয় নারী হিসেবে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর হওয়ার যুক্তিতেই তাকে নির্বাচিত করা উচিত, এমন কথা তিনি কখনোই বলেন না', যোগ করেন তিনি।

২০১৬ সাকে ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী হিসেবে সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের স্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের নির্বাচনী প্রচারণার ধরন থেকে এই দৃষ্টিভঙ্গি পুরোপুরি ভিন্ন। প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে 'প্রথা ভাঙার' সম্ভাবনার ওপর অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন হিলারি। সেদিন দিয়ে কমলা ব্যতিক্রমী কৌশল অবলম্বন করছেন বলেই বিশ্লেষকরা মত দিয়েছেন।

কমলা হ্যারিসকে অনেক আগে থেকেই চেনেন হিলারি ক্লিনটন। ফাইল ছবি: হিলারির ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া
কমলা হ্যারিসকে অনেক আগে থেকেই চেনেন হিলারি ক্লিনটন। ফাইল ছবি: হিলারির ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া

কমলার সহযোগী ও মিত্ররা সতর্ক করেছেন, নির্বাচনের আগের এই অল্প সময়ে নিজের বিষয়ে বেশি কথা না বলে বরং ভোটাররা কি চাইছেন, সেটার দিকে নজর দেওয়া উচিত তার।

নর্থ ক্যারোলাইনার বাসিন্দা ক্রিস্টাল ম্যাকলফলিন গত সপ্তাহে তার একটি প্রচারণা সভায় যোগ দেন। তিনি বলেন, কমলা হ্যারিসের প্রার্থিতা একটি 'ঐতিহাসিক মুহূর্ত', তবে শেষ পর্যন্ত 'কে সঠিক কাজটি করতে প্রস্তুত, সেটা বুঝতে পারা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।'

তবে অশ্বেতাঙ্গ নারী হিসেবে কমলার ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ, যোগ করেন কৃষ্ণাঙ্গ নারী ক্রিস্টাল (৫৩)।

এখন পর্যন্ত গায়ের রঙ নিয়ে কথাবার্তা ট্রাম্পই বেশি বলছেন। তিনি বারবার দাবি করেছেন, অতি সম্প্রতি 'কৃষ্ণাঙ্গ হয়েছেন কমলা'।

'আমি পড়েছিলাম তিনি কৃষ্ণাঙ্গ নন, কিন্তু পরে দেখলাম তিনি আসলে কৃষ্ণাঙ্গ', কমলা প্রসঙ্গে ট্রাম্পের দাবি।

কমলা হ্যারিস এ মন্তব্যের সরাসরি জবাব না দিলেও মন্তব্য করেন, 'এটা খুবই মর্মান্তিক যে আমাদের মাঝে এমন একজন ব্যক্তি আছেন যিনি প্রেসিডেন্ট হতে চান, কিন্তু তার ক্যারিয়ারজুড়ে বারবার মার্কিনীদের বর্ণ-গোত্রের ভিত্তিতে বিভাজিত করতে চেয়েছেন।'

বাইডেন প্রার্থিতা থেকে সরে যাওয়ার পর এপির জরিপে দেখা যায়, ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রতি কৃষ্ণাঙ্গদের আগ্রহ বেড়েছে।

লাস ভেগাসে নির্বাচনী প্রচারণায় ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
লাস ভেগাসে নির্বাচনী প্রচারণায় ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

জুলাই মাসে এপির গবেষণা জরিপে দেখা যায়, ৭০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক কৃষ্ণাঙ্গ ভোটার বলছেন তারা ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী হিসেবে কমলাকে বেছে নেওয়ায় সন্তুষ্ট।

এর আগের জরিপে বাইডেনের বিষয়ে সন্তোষের হার ছিল মাত্র ৫০ শতাংশ।

 

Comments

The Daily Star  | English

Eid meat: Stories of sacrifice, sharing and struggle

While the well-off fulfilled their religious duty by sacrificing cows and goats, crowds of people -- less fortunate and often overlooked -- stood patiently outside gates, waiting for a small share of meat they could take home to their families

13h ago