ইরানে পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংসের ক্ষমতা ইসরায়েলের নেই, যুক্তরাষ্ট্রের সক্ষমতা কতটুকু?

স্যাটালাইট থেকে নেওয়া ইরানের ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনা। ছবি: এএফপি

ইরানের ফোরদোয় পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংসের কোনো সক্ষমতা ইসরায়েলের নেই। এই কাজটি কেবলমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের দ্বারাই সম্ভব বলে মনে করছেন সামরিক বিশেষজ্ঞরা।

ধারণা করা হয়, ফোরদোর পারমাণবিক স্থাপনা ভূপৃস্থ থেকে ৮০ বা ৯০ মিটার গভীরে। অর্থাৎ, এর গভীরতা প্রায় ৩০তলা ভবনের সমান। এত গভীরতায় কোনো স্থাপনা ধ্বংস করার জন্য যে ধরনের বোমা প্রয়োজন এবং সেই বোমা বহন করার জন্য যে ধরনের উড়োজাহাজ প্রয়োজন তা কেবল যুক্তরাষ্ট্রের আছে।

তবে অনেক সামরিক বিশ্লেষক মনে করছেন, সেই বোমাতেও কাজ না হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।

ইরানের 'পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংসে' ইসরায়েলি হামলার আজ পঞ্চম দিন। দুটি দেশই পাল্টাপাল্টি হামলা অব্যাহত রেখেছে। ওয়াশিংটন ডিসির স্টিমসন সেন্টার থিঙ্ক ট্যাঙ্কের বিশিষ্ট ফেলো বারবারা স্লাভিন আল-জাজিরাকে বলেছেন, মার্কিন সহায়তা ছাড়া ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস করতে পারবে না।

তিনি বলেছেন, 'ইসরায়েলের ঘোষিত লক্ষ্য হচ্ছে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস করা এবং স্পষ্টতই তারা যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা ছাড়া সেটা করতে পারবে না।'

এমনকি যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত বলেছেন, কেবল মার্কিন বিমান বাহিনীর কাছেই এমন অস্ত্র আছে যা দিয়ে ইরানে মাটির গভীরে নির্মিত পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস করা সম্ভব।

ফোরদো পারমাণবিক প্ল্যান্টের অবস্থান ইরানের উত্তরাঞ্চলে, মাটির গভীরে। যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ইয়েচিয়েল লেইটার বলেছেন, 'আকাশ থেকে বোমা ফেলে ফোরদো ধ্বংস করতে পারে একমাত্র যুক্তরাষ্ট্র।'

তিনি 'জিবিইউ-৫৭/বি' বোমার কথা উল্লেখ করেছেন, যা 'বাঙ্কার বাস্টার' নামে খ্যাত। এই বোমার ওজন এত বেশি যে কেবল বি-২ বোমারু বিমান থেকেই এটি ফেলা যায়।

মার্কিন সামরিক তথ্যপত্রের বরাতে সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই বোমাটি বিশেষ উচ্চ-কার্যক্ষমতা সম্পন্ন ইস্পাত দিয়ে তৈরি। এটি মাটির গভীরে প্রবেশ করে শক্ত বাঙ্কার ও টানেল ধ্বংস করতে পারে।

এই বোমার ওজন প্রায় ৩০ হাজার পাউন্ড বা সাড়ে ১৩ হাজার কেজি। প্রায় দুইতলা ভবনের সমান লম্বা এই বোমা জিপিএসের মাধ্যমে গাইড করা হয়।

রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জিবিইউ-৫৭/বি বোমাটি মাটির ৬১ মিটার বা ২০০ ফুট গভীরতা পর্যন্ত প্রবেশ করতে পারে। অর্থাৎ, মাটির নিচে সর্বোচ্চ ২০তলা ভবনের সমান দূরত্বে আঘাত করতে পারে এই বোমা।

ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনা মাটির ঠিক কতটা গভীরে রয়েছে, তার সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না। তবে, ধারণা করা হয় যে, এটি ভূপৃষ্ঠ থেকে ৮০ বা ৯০ মিটার গভীরে রয়েছে। এই অনুমান সঠিক হলে জিবিইউ-৫৭/বি বোমা দিয়েও নাগাল পাওয়া যাবে না ইরানের এই পারমাণবিক স্থাপনার।

তবে, এটি ধ্বংস করতে চাইলে একই লক্ষ্যস্থলে একাধিক বোমা ফেলতে হবে বলে উল্লেখ করছেন সামরিক বিশেষজ্ঞরা।

সিএনএনের সামরিক বিশ্লেষক ও সাবেক মার্কিন বিমান বাহিনীর কর্নেল সেড্রিক লেইটন বলেছেন, ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস করতে হলে আমি একই জায়গায় বারবার হামলার ওপর নির্ভর করব।

রয়্যাল অস্ট্রেলিয়ান বিমান বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা পিটার লেটন বলেছেন, 'বারবার হামলায় কাজ হতে পারে, কিন্তু অনিশ্চিত।'

তিনি বলেছেন, বারবার এখানে আঘাত করা হলেও 'সফলতার কোনো নিশ্চয়তা দেওয়া যাবে না বা ফোরদো ধ্বংস হয়ে গেছে, তা প্রমাণিত হবে না।'

জিবিইউ-৫৭ বোমা ইসরায়েলকে কখনো দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। জেনারেল ম্যাকেঞ্জি বলেছেন, এমনকি ট্রাম্প যদি আমেরিকান বি-২ স্টিলথ বোমারু বিমান দিয়ে এই বোমা ফেলার অনুমতি দেনও, তারপরও এই ধরনের হামলায় সমন্বয় করার জন্য অনেক প্রযুক্তিগত ও গোপনীয় নানা চ্যালেঞ্জ থাকবে।

জেনারেল ভোটেল মনে করেন, আমেরিকান বাঙ্কার বাস্টার ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে তার বড় প্রভাব পড়বে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে। প্রথমত, এই ধরনের বোমা হামলায় পারমাণবিক দূষণ হতে পারে, যার ফলে বেসামরিক নাগরিকরা বিপদে পড়বেন। দ্বিতীয়ত, এই হামলা হলে আন্তর্জাতিকভাবে ধারণা হবে যে, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের সঙ্গে যোগ দিয়ে ইরানের সার্বভৌমত্বের ওপর হস্তক্ষেপ করেছে।

২০২৩ সালের মার্চে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা জানিয়েছে, তারা ফোরদোতে ৮৩.৭ শতাংশ বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম পেয়েছে, যা পারমাণবিক অস্ত্রের জন্য প্রয়োজনীয় ৯০ শতাংশ বিশুদ্ধ ইউরেনিয়ামের অনেক কাছাকাছি।

ইরাকে পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়ে সেটি ধ্বংস করে দেওয়ার ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়েছে ইরান। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে নিজেদের পারমাণবিক কার্যক্রমের জন্য স্থাপনা বানিয়েছে পাহাড়ের নিচে মাটির অনেক গভীরে।

 

Comments

The Daily Star  | English

DUCSU polls set for Sept 9

Draft voter list to be published on July 30; results on election day

47m ago