যুক্তরাষ্ট্রের রণতরী ও ট্যাংকার বিমান মোতায়েন, সরাসরি যুদ্ধে জড়ানোর ইঙ্গিত?

আকাশে যুদ্ধবিমানে জ্বালানি স্থানান্তর করছে একটি ট্যাঙ্কার বিমান। রয়টার্স ফাইল ছবি

ইসরায়েল ও ইরানের যুদ্ধের মধ্যে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে সামরিক তৎপরতা শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত তিন দিনে ৩০টির বেশি মার্কিন সামরিক বিমান যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইউরোপের বিভিন্ন ঘাঁটিতে পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে দক্ষিণ চীন সাগর থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে পাঠানো হয়েছে একটি মার্কিন বিমানবাহী রণতরী।

ফ্লাইট ট্র্যাকিং ডেটা এবং বিশেষজ্ঞদের বরাতে বিবিসি ও রয়টার্স এই খবর জানিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা একে আসন্ন কোনো বড় সংঘাতের প্রস্তুতি হিসেবে দেখছেন।

ফ্লাইট ট্র্যাকিং ডেটা অনুযায়ী, গত তিন দিনে যেসব বিমান ইউরোপে পাঠানো হয়েছে, তার সবগুলোই মার্কিন বিমানবাহিনীর ট্যাংকার বিমান। এই বিমানগুলো যুদ্ধবিমান ও বোমারু বিমানে মাঝআকাশে জ্বালানি ভরার কাজে ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে অন্তত সাতটি কেসি-১৩৫ মডেলের ট্যাংকার বিমান স্পেন, স্কটল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যের মার্কিন বিমানঘাঁটিতে অবতরণ করেছে।

একই সময়ে মার্কিন নৌবাহিনীর বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস নিমিৎজকে দক্ষিণ চীন সাগর থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে যাত্রার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রয়টার্স জানিয়েছে, ভিয়েতনামে রণতরীটির একটি পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে। হ্যানয়ে মার্কিন দূতাবাস একে 'জরুরি অভিযানিক প্রয়োজন' বলে উল্লেখ করেছে। ইউএসএস নিমিৎজের সঙ্গে বহু যুদ্ধবিমান ও একাধিক গাইডেড মিসাইল ডেস্ট্রয়ার রয়েছে।

তিনজন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তার বরাত দিয়ে রয়টার্স আরও জানায়, যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন ঘাঁটিতে এফ-১৬, এফ-২২ ও এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানও পাঠিয়েছে। ইউরোপে পাঠানো ট্যাংকার বিমানগুলো এসব যুদ্ধবিমানকে জ্বালানি সহায়তা দেবে।

এই ব্যাপক সামরিক তৎপরতাকে সরাসরি ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের সঙ্গে যুক্ত কি না, তা নিশ্চিত না হলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিষয়টি 'অত্যন্ত অস্বাভাবিক'।

যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউট (রুসি) থিঙ্কট্যাংকের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক জাস্টিন ব্রঙ্ক বিবিসিকে বলেন, এই তৎপরতা জোরালোভাবে ইঙ্গিত দিচ্ছে যে যুক্তরাষ্ট্র আগামী সপ্তাহগুলোতে এ অঞ্চলে 'তীব্র যুদ্ধ পরিস্থিতি' মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।

তবে আয়ারল্যান্ডের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সাবেক প্রধান ভাইস অ্যাডমিরাল মার্ক মেলেটের মতে, এটি যুক্তরাষ্ট্রের 'কৌশলগত অস্পষ্টতা' নীতির অংশ হতে পারে। এর মাধ্যমে তেহরানকে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনায় ছাড় দিতে চাপ দেওয়া হতে পারে।

এদিকে, মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করতে 'আরও পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।'

'বাংকার বাস্টার' নিয়ে সম্ভাব্য হামলা

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরানের প্রধান দুটি ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক স্থাপনা হলো নাতাঞ্জ ও ফোরদো। এর মধ্যে নাতাঞ্জে ইসরায়েল ইতোমধ্যে হামলা চালালেও কোম শহরের কাছে পাহাড়ের গভীরে থাকা ফোরদো এখনো অক্ষত।

পশ্চিমা সামরিক কর্মকর্তাদের মতে, ফোরদোর মতো সুরক্ষিত স্থাপনা ধ্বংস করতে হলে যুক্তরাষ্ট্রকে জিবিইউ-৫৭ বা 'ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর' বোমা ব্যবহার করতে হবে। 'বাংকার বাস্টার' নামে পরিচিত ১৩ হাজার ৬০০ কেজি ওজনের এই বোমা ৬০ মিটার (প্রায় ২০০ ফুট) কংক্রিট ভেদ করতে সক্ষম। এই বিশাল বোমা কেবল বি-২ স্টিলথ বোমারু বিমানই বহন করতে পারে।

সম্প্রতি ভারত মহাসাগরে দিয়োগো গার্সিয়া দ্বীপে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বি-২ বোমারু বিমানের স্কোয়াড্রন মোতায়েন ছিল। সেখান থেকে ইরানে হামলা চালানো সম্ভব। তবে মার্চের শেষের দিকের স্যাটেলাইট ছবিতে বিমানগুলোকে দেখা গেলেও এখন আর দেখা যাচ্ছে না।

Comments

The Daily Star  | English

Iran's Khamenei rejects Trump's call for unconditional surrender

Israel army says struck Iran centrifuge production, weapons manufacturing sites

18h ago