ইসরায়েলের পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি সম্পর্কে যা জানা যায়

অন্য দেশের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে উদ্বিগ্ন, নিজেদের বেলায় মুখে কুলুপ
ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত ডিমোনা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। ছবি: এএফপি

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনার ওপর ক্রমাগত হামলার মধ্যেই এবার পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে হুমকি দিয়েছেন ইসরায়েলের সাবেক উপ–প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও লেবার পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মেইর মাসরি।

আরবি ও উর্দু ভাষায় এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, 'ইরানের পর এবার আমরা পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধের চিন্তা করছি।'

পোস্টে মাসরি আরও লেখেন, 'পাকিস্তান ইরান থেকে দূরে নয়। এতটুকু বুঝলেই যথেষ্ট।'

অপরদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তিন দশকের বেশি সময় ধরে বারবার একটি কথা বলে আসছেন, ইরান শিগগিরই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করে ফেলবে।

নেতানিয়াহু কখনো বলেছেন কয়েক বছর, কখনো বলেছেন কয়েক মাসের মধ্যে ইরান পরমাণু বোমা তৈরির সক্ষমতা অর্জন করে ফেলবে। কিন্তু কখনোই তার সেই কথার সত্যতা পাওয়া যায়নি।

জাতিসংঘসহ অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা—বিশেষ করে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) এখন পর্যন্ত এর কোনো প্রমাণ পায়নি।

সিএনএন বলছে, ইসরায়েলেরও সুপরিকল্পিত পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি রয়েছে এবং অন্য দেশের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ইসরায়েলের মাথাব্যথা থাকলেও নিজেদের ব্যাপারে বরাবরই মুখে কুলুপ এঁটে থাকে দেশটি।
 
ইসরায়েলের পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি

ইসরায়েল কখনো তার পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচির কথা স্বীকার করেনি, যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন- এটি মধ্যপ্রাচ্যের 'সবচেয়ে জানা গোপন বিষয়'। 

আন্তর্জাতিক কৌশলগত গবেষণা ইনস্টিটিউটের মতে, ইসরায়েল পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র ব্যতিক্রম, যারা তাদের পারমাণবিক সক্ষমতা স্বীকারও করে না, অস্বীকারও করে না।

স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মতে, ইসরায়েল হলো নয়টি দেশের একটি, যাদের পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে, যেমন: যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন, ভারত, পাকিস্তান এবং উত্তর কোরিয়া।

ইসরায়েল ১৯৭০ সালের পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তিতে (এনপিটি) সই করেনি এবং মধ্যপ্রাচ্যে একটি গণবিধ্বংসী অস্ত্রমুক্ত অঞ্চল গঠনের কূটনৈতিক প্রচেষ্টারও বিরোধী। তবে তারা ১৯৬৩ সালের সীমিত পারমাণবিক পরীক্ষা নিষিদ্ধ চুক্তিতে সই ও অনুমোদন করেছে, যা সইকারী দেশগুলোকে বায়ুমণ্ডল বা মহাসাগরে পারমাণবিক বিস্ফোরণ না করার বাধ্যবাধকতা দেয়।

ইসরায়েলের কাছে কতদিন ধরে পারমাণবিক অস্ত্র আছে?

ইসরায়েল ১৯৪৮ সালে নিজেদের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আগে থেকেই পারমাণবিক অস্ত্র বিকাশের সম্ভাবনা অনুসন্ধান শুরু করে, পরে ১৯৫৮ সালে দক্ষিণাঞ্চলের শহর ডিমোনার কাছে একটি গোপন স্থানে কর্মসূচি শুরু করে।

ধারণা করা হয়, ১৯৬৬ বা ১৯৬৭ সালের দিকে ইসরায়েল প্রথম পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করে। ১৯৬৮ সালে সিআইএ জানায় যে, ইসরায়েল সফলভাবে পারমাণবিক অস্ত্র উৎপাদন শুরু করেছে।

বিশ্বাস করা হয়, ইসরায়েল ১৯৭৯ সালে একটি গোপন বায়ুমণ্ডলীয় পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছিল, যদিও তারা তা অস্বীকার করেছে।

ইসরায়েলের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার কত বড়?

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এনজিও নিউক্লিয়ার থ্রেট ইনিশিয়েটিভ জানায়, ইসরায়েলের কাছে আনুমানিক ৯০টি পারমাণবিক ওয়ারহেড আছে এবং তাদের কাছে প্রায় ৩০০টি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির মতো যথেষ্ট তেজস্ক্রিয় উপাদান আছে।

ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট বলছে, ইসরায়েল তার অস্ত্রভাণ্ডারের আধুনিকায়ন অব্যাহত রেখেছে। ২০২৪ সালে তারা একটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রপালশন সিস্টেমের পরীক্ষা চালায়, যা তাদের জেরিকো শ্রেণির পারমাণবিক ওয়ারহেড বহনে সক্ষম ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে।

এছাড়া ইসরায়েল ডিমোনার প্লুটোনিয়াম উৎপাদন রিঅ্যাক্টর স্থাপনাটিরও আধুনিকায়ন করছে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

Comments

The Daily Star  | English

Govt publishes gazette of 1,558 injured July fighters

Of them, 210 have been enlisted in the critically injured "B" category, while the rest fall under the "C" category of injured fighters

4h ago