ফিলিস্তিনি শিশুদের দুর্দশা সইতে পারছেন না ‘মা’ ম্যাডোনা, পোপকে গাজা সফরের অনুরোধ

কনসার্টে গান পরিবেশন করছেন ম্যাডোনা। ফাইল ছবি: এএফপি
কনসার্টে গান পরিবেশন করছেন ম্যাডোনা। ফাইল ছবি: এএফপি

গাজায় দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে ইসরায়েলের গণহত্যামূলক হামলায় চূড়ান্ত আকারের মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে খ্রিষ্টানদের সর্বোচ্চ ধর্মগুরু পোপ লিওকে মানবিক মিশনে গাজা সফরের অনুরোধ করেছেন অসংখ্য রেকর্ড সৃষ্টিকারী মার্কিন পপ তারকা ম্যাডোনা।

আজ মঙ্গলবার এই তথ্য জানিয়েছে সিএনএন।

'আর সময় নেই'

এই পপ রানি পোপের উদ্দেশে বলেন, 'আর সময় নেই।'

শৈশব থেকেই রোমান ক্যাথলিক হিসেবে বেড়ে উঠেছেন ম্যাডোনা। তিনি নবনিযুক্ত পোপকে গাজা উপত্যকায় গিয়ে ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা নিজের চোখে দেখার আবেদন করেছেন।

গতকাল সোমবার সমাজমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করে তিনি এ তথ্য জানান।

পোপকে 'হোলি ফাদার' বলে সম্বোধন করে সেই পোস্টে ম্যাডোনা বলেন, 'বেশি দেরি হয়ে যাওয়ার আগে অনুগ্রহ করে গাজায় যান। একজন মা হিসেবে আমি তাদের দুর্দশা আর সইতে পারছি না। শিশুদের দেখভাল করার দায়িত্ব গোটা বিশ্ববাসীর ওপর বর্তায়। আপনিই আমাদের মধ্যে একমাত্র মানুষ যিনি বিনা বাধায় সেখানে যেতে পারবেন।'

ম্যাডোনা আরও বলেন, 'নিষ্পাপ শিশুদের বাঁচাতে মানবিকতার দুয়ার পুরোপুরি খুলে দিতে হবে। আর সময় নেই। অনুগ্রহ করে আপনার সফর নিশ্চিত করুন। আপনি সেখানে যান।'

কেন পোপকে গাজা সফরের আহ্বান জানালেন, সেটা স্পষ্ট করেছেন ম্যাডোনা।

তার মতে, 'রাজনীতির মাধ্যমে যে পরিবর্তন আসে না, জাগ্রত বিবেকের মাধ্যমে তা আসতে পারে।'

নিজের সন্তান রক্কো'র জন্মদিন উপলক্ষে পোস্টটি প্রকাশ করেন ম্যাডোনা।

'আমার সন্তানের জন্য জন্মদিনের সেরা উপহার হবে যদি সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে গাজায় (হামাস-ইসরায়েলের) ক্রসফায়ারের মধ্যে পড়ে যাওয়া নিষ্পাপ শিশুদেরকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন।'

ইসরায়েলি আগ্রাসনকে সমর্থন করেন না পোপ

এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য ভ্যাটিকানের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে সিএনএন। তবে এখনো পোপের পক্ষ থেকে মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

পোপ লিও ভ্যাটিকানে বক্তব্য রাখছেন। ফাইল ছবি: এএফপি
পোপ লিও ভ্যাটিকানে বক্তব্য রাখছেন। ফাইল ছবি: এএফপি

পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুর পর গত মে মাসে পোপের দায়িত্ব পান লিও। শুরু থেকেই তিনি গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের সমালোচনা করে এসেছেন। তিনি ইসরায়েলি হামলার মুখে ফিলিস্তিনি বেসামরিক মানুষের দুর্দশা নিয়ে বেশ কয়েকবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

গত জুলাইয়ে গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে পোপ বলেন, 'আমি গাজার ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতির দিকে গভীর উদ্বেগ নিয়ে নজর রাখছি। সেখানে বেসামরিক মানুষরা তীব্র খাদ্য সংকটে ভুগছে। তারা সহিংসতা ও মৃত্যুর কাছে অসহায়।'

দেড় বছরে ১৮ হাজার শিশু নিহত

জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী—২০২৩ সালের অক্টোবরে থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ১৮ হাজারেরও বেশি শিশু নিহত হয়েছে। মোট নিহতের সংখ্যা ৬১ হাজার ৪৩০।

গত সপ্তাহে সংস্থাটি জানায়, গাজায় প্রতিদিন অন্তত ২৮ ফিলিস্তিনি শিশু নিহত হয়।

ইসরায়েলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির সামনে বসে আছে ফিলিস্তিনি শিশুরা। ছবি: রয়টার্স (১৭ ডিসেম্বর)
ইসরায়েলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির সামনে বসে আছে ফিলিস্তিনি শিশুরা। ছবি: রয়টার্স (১৭ ডিসেম্বর)

ম্যাডোনা বলেন, 'আমি কারো দিকে আঙুল তুলছি না। কাউকে দোষারোপও করছি না বা কারও পক্ষও নিচ্ছি না। সবাই দুর্দশার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। মায়েরা কষ্ট পাচ্ছে, জিম্মিরাও কষ্ট পাচ্ছে। প্রার্থনা করি, তারা মুক্তি পায়।'

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাসচিব তেদ্রস আধানম গেব্রিয়াসুস ম্যাডোনার পোস্টে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে গাজাযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত শিশুসহ সবার প্রতি একাত্মতা প্রকাশের জন্য ম্যাডোনাকে ধন্যবাদ জানান।

'এ ধরনের উদ্যোগ খুবই জরুরি। মানবতা ও শান্তিকে জয়ী হতে হবে,' বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বক্তব্য রাখছেন ম্যাডোনা। ফাইল ছবি: এএফপি
বক্তব্য রাখছেন ম্যাডোনা। ফাইল ছবি: এএফপি

গত জুলাইয়ে এক বিরল ঘটনা ঘটে। গাজার ক্যাথোলিক চার্চে ইসরায়েলি হামলায় তিনজন নিহত ও আরও অনেকে আহত হন। ঘটনার পর ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ দুই যাজককে গাজা সফরের অনুমতি দেয়।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই ওই চার্চে গাজার খ্রিষ্টানরা আশ্রয় নিয়েছিলেন।

Comments