রাশিয়া যুদ্ধের অবসান জটিল করছে: জেলেনস্কি, শান্তিচুক্তি মেনে নেওয়ার আহ্বান ট্রাম্পের

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, যুদ্ধবিরতিতে রাজি না হওয়ায় রাশিয়া যুদ্ধের অবসান প্রক্রিয়াকে জটিল করছে।
তিনি এক্সে (সাবেক টুইটার) এক বিবৃতিতে বলেন, 'আমরা দেখছি, রাশিয়া বারবার যুদ্ধবিরতির আহ্বান প্রত্যাখ্যান করছে এবং এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি কবে হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করবে। এটাই পরিস্থিতি জটিল করছে।'
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি জেলেনস্কিকে শান্তিচুক্তিতে সম্মত হতে উৎসাহিত করবেন।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পর ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি এড়িয়ে সরাসরি স্থায়ী শান্তিচুক্তির দিকে যেতে চান।
অবস্থান পরিবর্তনের বড় ইঙ্গিত দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট সম্মেলনের পর ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, 'এটাই রাশিয়া-ইউক্রেনের ভয়াবহ যুদ্ধ শেষ করার সবচেয়ে ভালো উপায়। কারণ বেশিরভাগ সময় যুদ্ধবিরতি টেকে না।'
পুতিনের সঙ্গে শীর্ষ সম্মেলনের পর ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপে জেলেনস্কি 'বাস্তব ও টেকসই শান্তির' আহ্বান জানান। তবে তিনি বলেন,'এই হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করতে হবে।'
পরবর্তীতে সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া বিবৃতিতে জেলেনস্কি মস্কোর সঙ্গে 'টেকসই ও নির্ভরযোগ্য শান্তির' শর্তাবলী তুলে ধরেন। যার মধ্যে ছিল 'নিরাপত্তা নিশ্চয়তা' এবং ক্রেমলিনের হাতে 'দখলকৃত অঞ্চল থেকে অপহৃত' শিশুদের ফেরত দেওয়া।
ট্রাম্পের অবস্থান পরিবর্তন
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মন্তব্যে স্পষ্ট হয় যুদ্ধ শেষ করার ব্যাপারে তার অবস্থানে পরিবর্তন এসেছে। কারণ শুক্রবারের শীর্ষ বৈঠকের আগেই তিনি বলেছিলেন দ্রুত যুদ্ধবিরতি চান।
এখন পর্যন্ত ইউক্রেনের প্রধান দাবি ছিল যুদ্ধবিরতির পর দীর্ঘমেয়াদি আলোচনায় যাওয়া। কিন্তু ট্রাম্প ইউরোপীয় নেতাদের জানিয়েছেন, তার মূল লক্ষ্য ছিল একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিশ্চিত করা।
এদিকে খবর অনুযায়ী, পুতিন ট্রাম্পকে একটি শান্তি প্রস্তাব দিয়েছেন। যেখানে শর্ত হিসেবে বলা হয়েছে, ইউক্রেনকে দোনবাসের দোনেৎস্ক অঞ্চল থেকে সরে যেতে হবে, এর বিনিময়ে রাশিয়া জাপোরিঝঝিয়া ও খেরসন অঞ্চলে সামনের দিকে অগ্রসর হবে না।
বিবিসির তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়া ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখল করে নেয় এবং আট বছর পর ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার হামলা চালায়। মস্কো দনবাসকে রাশিয়ার অংশ দাবি করে এবং বর্তমানে লুহানস্কের বেশিরভাগ ও দোনেৎস্কের প্রায় ৭০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে রেখেছে।
ট্রাম্প আগেও বলেছেন, কোনো শান্তিচুক্তির অংশ হিসেবে 'কিছু ভূখণ্ড বিনিময়' থাকতে পারে। খবরে বলা হয়েছে, শীর্ষ বৈঠকের পর তিনি নাকি এই প্রস্তাব জেলেনস্কির কাছে পৌঁছে দিয়েছেন।
কয়েকদিন আগে জেলেনস্কি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, দনবাস অঞ্চল (লুহানস্ক ও দোনেৎস্ক) রাশিয়ার হাতে ছেড়ে দেওয়া হবে না। কারণ ভবিষ্যতে আরও হামলার জন্য এই অঞ্চল ব্যবহার করা হতে পারে।
ইউরোপের শঙ্কা ও প্রতিক্রিয়া
সিবিএস জানিয়েছে, ইউরোপীয় কূটনীতিকদের উদ্বেগ আছে যে, ট্রাম্প জেলেনস্কিকে পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে আলোচিত শর্তগুলো মেনে নিতে চাপ দিতে পারেন।
খবর অনুযায়ী, ট্রাম্প ইউরোপীয় নেতাদের বলেছেন, পুতিন 'কিছু ছাড়' দিতে রাজি, তবে বিস্তারিত জানাননি।
শীর্ষ সম্মেলনের পর ফক্স নিউজে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্পকে জিজ্ঞেস করা হয়, তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে কী পরামর্শ দেবেন। উত্তরে ট্রাম্প বলেন, 'একটা চুক্তি করুন।'
'রাশিয়া খুব বড় শক্তি আর তারা (ইউক্রেন) নয়,' তিনি যোগ করেন।
কূটনৈতিক পদক্ষেপ
শীর্ষ সম্মেলনের আগে জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস জেলেনস্কি, ইউরোপীয় নেতা ও ট্রাম্পকে নিয়ে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন।
ট্রাম্প আগে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, পুতিন যুদ্ধ শেষ না করলে 'খুব কঠিন পরিণতির'মুখে পড়তে হবে। যুদ্ধবিরতি না করলে মস্কোর প্রতি নতুন নিষেধাজ্ঞা চাপানোর হুমকিও দিয়েছিলেন।
তবে শুক্রবারের বৈঠকের পর স্পষ্ট কোনো চুক্তি ঘোষণা না হলেও ট্রাম্প বলেছেন অগ্রগতি হয়েছে।
শনিবার পুতিন বৈঠককে 'খুব ফলপ্রসূ' বলে অভিহিত করেন।
রাশিয়ার জাতিসংঘ প্রতিনিধি দিমিত্রি পলিয়ানস্কি বিবিসিকে বলেন, আলাস্কার এই বৈঠক ছিল 'শান্তির পথে গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি'। তবে তিনি বলেননি, পুতিন এখন জেলেনস্কির সঙ্গে দেখা করবেন কি না।
ইউরোপীয় ও পশ্চিমা প্রতিক্রিয়া
'কোয়ালিশন অব দ্য উইলিং' জোট ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন জোরদার করেছে (যার মধ্যে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি রয়েছে)। তারা জেলেনস্কির হোয়াইট হাউস সফরের আগে রোববার বৈঠক করবে।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ, জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস ও ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লেইয়েন বলেছেন, পরবর্তী ধাপে জেলেনস্কিকে অন্তর্ভুক্ত করে আরও আলোচনা হতে হবে।
তারা যোগ করেন, আমরা রাশিয়ার ওপর চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রাখব। ভূখণ্ড সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেবে ইউক্রেন, সীমান্ত বলপ্রয়োগে পরিবর্তন করা যাবে না।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টার্মার ট্রাম্পের প্রচেষ্টার প্রশংসা করে বলেছেন, 'আমরা শান্তির এত কাছাকাছি আগে কখনো আসিনি।'
'অগ্রগতি হয়েছে, তবে পরবর্তী ধাপে অবশ্যই জেলেনস্কিকে অন্তর্ভুক্ত করে আলোচনা করতে হবে। ইউক্রেনের শান্তির পথ তার অংশগ্রহণ ছাড়া নির্ধারিত হতে পারে না,' তিনি বলেন।
Comments