‘টিনএজাররা শুনতে নয়, বলতে পছন্দ করে’

ডিজাইন: ফাতিমা জাহান এনা/স্টার

সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শিশুরা বেড়ে ওঠে। হাঁটি হাঁটি পা পা করে যেই হাঁটা শুরু, শৈশব পেরিয়ে যেন দৌঁড়ে যায় কৈশোরে। বাচ্চাদের আমরা যেভাবে শেখাই, তারাও সাধারণত সেভাবেই চলে। তবে কৈশোরে কিংবা বয়ঃসন্ধিতে তাদের স্বাভাবিক কিছু পরিবর্তন আসে।

তারা আগের মতো সব কথা মেনে নেয় না বা মানতে পছন্দ করে না। কখনো প্রশ্ন করে, কখনো তর্ক করে কিংবা অমান্য করার চেষ্টাও করে।

একাকীত্বের পরিসর খুঁজে নিতে চায়। সব অনুভূতি বাবা-মায়ের সঙ্গে ভাগ করে নিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না। পাশাপাশি বাইরের জগতের কাছ থেকে স্বীকৃতি পাওয়াও এই সময় খুব মুখ্য হয়ে ওঠে তাদের কাছে। এই ছোট ছোট আবশ্যিক পরিবর্তনগুলো বুঝে অভিভাবকদের বদলাতে হয় সন্তান পরিচালনার ধরণ।

এতদিন অভিভাবকরা বলেছেন, বাচ্চারা শুনেছে। কিন্তু সময় যখন টিনএজ, তখন কিন্তু তারা শুনতে নয় বলতে চায়। তারা পছন্দ করে এমন কাউকে, যারা অভিমত না দিয়ে চুপচাপ শুনবে। মা-বাবারও তাই এ সময় মনোযোগী শ্রোতা হয়ে ওঠা ভীষণ জরুরি। সন্তান যখন কথা বলে, শুনতে হবে।

একইসঙ্গে বিষয়টাকে নিয়ে সে কী ধরনের চিন্তা করছে জেনে নিতে হবে। যতক্ষণ না নিজে থেকে কোনো সাহায্য বা পরামর্শ চাইছে, ততক্ষণ কোনো মতামত চাপিয়ে না দিয়ে, নিজে কী ভাবছেন সেই দৃষ্টিকোণ প্রসঙ্গে আলোচনা করতে পারেন।

এ প্রসঙ্গে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে ১০-১৯ বছর এই বয়সের যারা তাদের টিনএজার বলে। এটি বয়ঃসন্ধিকাল। এই সময়ে তাদের শারীরিক, মানসিক পরিবর্তন আসে। সমাজে তাদের ভূমিকার পরিবর্তন হয়। তাদের হরমোনের পরিবর্তন হয়। তাদের আবেগের পরিবর্তন ঘটে। বিপরীত লিঙ্গের প্রতি তাদের আকর্ষণ তৈরি হয়। এই পরিবর্তনগুলো মেনে নিতে গিয়ে তারা মানসিক ঝড়ের মধ্যে পড়ে। বেশিরভাগ কিশোর এই ঝড় উৎরে যেতে পারে। তবে অনেকেই এতে কাবু হয়ে যায়। এটিকে বলা হয় কৈশোরকালীন সংকট।'

এই মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, 'সব বয়সের শিশু কিশোরদের সঙ্গে সহনীয় নমনীয় আচরণ করতে হবে। তাদেরকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বেড়ে ওঠার সুযোগ দিতে হবে। নিয়মের বেড়াজালে আবদ্ধ করা যাবে না। তাদেরকে নিয়মকানুনের গুরুত্ব বলতে হবে। কিন্তু কোনো কাজে তাদের আটকে দেওয়া যাবে না। সৃজনশীল কাজে উৎসাহিত করতে হবে। এই সময়ে পারস্পরিক সম্পর্কগুলো নানা দিকে মোড় নিতে পারে। কোনো সম্পর্ক তৈরিতে বাধা দেওয়া যাবে না। এত কারে তাদের দক্ষতা কমে যেতে পারে।'

'এই সময়ে যেসব বিষয়ে মানা করা হয় সেসব দিকে কিশোররা বেশি ঝুঁকে। তাদের অপছন্দের কাজ হলো, কারো খবরদারি। তাদের সঙ্গে এই সময় খবরদারি, নজরদারি না করে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করতে হবে,' তিনি যোগ করেন। 

নিঃসন্দেহে এই বয়সটা খুবই নাজুক। সন্তানের ইতিবাচক পরিবর্তন আনার জন্য এই সময়ে তাদের সঙ্গে অবশ্যই বন্ধুসূলভ আচরণ করতে হবে। তাদের ওপর কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়া যাবে না।

 

Comments

The Daily Star  | English

No price too high for mass deportations

US President-elect Donald Trump has doubled down on his campaign promise of the mass deportation of illegal immigrants, saying the cost of doing so will not be a deterrent.

5h ago