একাগ্রতা-মনোযোগ বাড়াতে মেডিটেশন বোল

মেডিটেশন বোল। ছবি: তানজিনা আলম

বাঞ্জি জাম্প, র‍্যাফটিং, স্পা, মোমো কিংবা অন্নপূর্ণা বেস ক্যাম্প শুনলেই প্রথমে মাথায় আসে নেপালের নাম। এমন অনেক কারণেই নেপাল পৃথিবীতে জনপ্রিয়। একই সঙ্গে মেডিটেশন বোলও নেপালে খুবই প্রসিদ্ধ। বর্তমানে বাংলাদেশেও এটির বেশ কদর আছে। একাগ্রতা ও মনোযোগ ধরে রাখতে এই মেডিটেশন বোল এর জু্ড়ি মেলা ভার।

মেডিটেশন বোলের অন্য নাম হিমালয়ান বোল বা সিঙ্গিং বোল।

মেডিটেশন বোলের রিদম বা শব্দ একটি নির্দিষ্ট তীক্ষ্ণতায় শুরু হয়। বোলের সঙ্গে সংযুক্ত ঘণ্টা একটি নির্দিষ্ট নিয়মে বাজালে তা কম্পন তৈরি করে। ফলে একটি সমৃদ্ধ ও গভীর ধ্বনির তৈরি হয়। এই হিমালয়ান বোল বা মেডিটেশন বোলগুলো আসলে মনকে শিথিল করে এবং মানসিক ক্ষত নিরাময়ের কার্যকরী গুণ আছে বলে মনে করা হয়।

সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সঙ্গের ঘণ্টাটি বাজানোর বেগ ধীরে ধীরে বাড়াতে হয়। বাজানোর ধরণের উপর শব্দের অনুরণন হয় এবং শ্রুতিমধুর সুর তৈরি হতে থাকে। মনোযোগ হারালে বা পাল্লা দিয়ে বেগ না বাড়ালে কিংবা বোলের থেকে দূরে সরে গেলে সুর কেটে যায়। একই ভাবে থামার আগেও একেবারে না থেমে বাজানোর গতি ধীরে ধীরে কমিয়ে শেষ করতে হয়।

বৌদ্ধ ভিক্ষুরা দীর্ঘকাল ধরে ধ্যান অনুশীলনে তিব্বতি সিঙ্গিং বোল ব্যবহার করে আসছেন। এছাড়াও, সুস্থতা অনুশীলনকারী (মিউজিক থেরাপিস্ট, ম্যাসেজ থেরাপিস্ট এবং যোগ থেরাপিস্টরা) চিকিৎসার সময় তিব্বতি গানের বোল ব্যবহার করেন।

এর সঠিক উৎপত্তি সম্পর্কে বিতর্ক আছে। যদিও কিছু প্রমাণ পাওয়া যায় যে, এটি খ্রিস্টপূর্ব ষোল শতকের কাছাকাছি সময়ে চীনে উদ্ভূত হয়েছিল। ঐতিহ্যবাহী বোলগুলো পারদ, সীসা, রূপা, লোহা, সোনা এবং তামাসহ বিভিন্ন ধাতু দিয়ে তৈরি।

১৯৭০ এর দশকে উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপের মানুষজন এগুলো আমদানি করতে শুরু করে এবং ১৯৯০ এর দশকে বিভিন্ন রোগের পরিপূরক এবং বিকল্প চিকিৎসা হিসেবে এটি জনপ্রিয়তা লাভ করে।

তিব্বতি বোলগুলোর সুরেলা শব্দ মস্তিষ্কের উভয় দিকেই গভীরভাবে শিথিলকরণের কাজ শুরু করে। এটি শরীরের বিভিন্ন স্তরের স্ট্রেস থেকে পরিত্রাণ এবং শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে উদ্দীপ্ত করে। এই সাউন্ড থেরাপির পরে আবেগ শান্ত হয় এবং মন পরিশ্রুত হয়। কারণ, সিঙ্গিং বোলগুলো বাজানোর ফলে শব্দের কম্পনগুলো একটু একটু করে শরীরে প্রভাব ফেলতে শুরু করে।

২০১৭ সালের সিঙ্গিং বোলের প্রভাবের উপর পরিচালিত পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণায় গবেষকরা কিছু সুবিধার কথা উল্লেখ করেন—

১. টেনশন কম হয়

২. আধ্যাত্মিক মঙ্গল বৃদ্ধি পায়

৩. রাগ কমে যায়

৪. উদ্বেগ বা দুশ্চিন্তা কমে যায়

৫. কম ক্লান্তি অনুভূত হয়

৬. বিষণ্ণতা কমে যায়

সিঙ্গিং বোলের আরও কিছু সুবিধা

১. আমেরিকান জার্নাল অব হেলথ প্রমোশনের প্রাথমিক সমীক্ষায় দেখা যায়, সিঙ্গিং বোলের মাধ্যমে ১২ মিনিটের একটি রিলাক্সেশন সেশন পরিচালনার করার পর তাদের সিস্টোলিক প্রেসার এবং হৃদকম্পন সাধারণ সময়ের তুলনায় দারুণভাবে কমে যায়।

২. মেডিটেশন বোল থেরাপির ব্যবহার স্ট্রেস থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে।

৩. শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে উদ্দীপ্ত করতে পারে।

৪. স্বল্প খরচে ডিপ্রেশন দূর করার মাধ্যম হিসেবে কাজ করতে পারে। মনকে স্থিরতা দিয়ে দুশ্চিন্তা দূর করতে সাহায্য করে।

৫. মেডিটেশন বা সিঙ্গিং বোল থেরাপির মাধ্যমে ঘুমের উন্নতি ঘটে।

মেডিটেশন বোলের প্রভাব

মেডিটেশন বোলের মাধ্যমে প্রভাবিত হওয়ার কারণ হিসেবে ৩টি বিষয় কাজ করে।

১. মেডিটেশন বোলগুলো দ্বারা সৃষ্ট কম্পন শরীর এবং মনকে প্রভাবিত করতে পারে।

২. মেডিটেশন বোলে যে শব্দ তৈরি হয় তা মস্তিষ্কের তরঙ্গকে শিথিলতার জন্য প্রভাবিত করতে পারে।

৩. সঙ্গীত শোনার সময় যে মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব হয়, এক্ষেত্রেও একই মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব কাজ করার মাধ্যমে চিন্তাকে প্রভাবিত করতে পারে।

সাধারণত শিক্ষানবিশ বা নতুনদের জন্য ছোট থেকে মাঝারি আকারের বোলগুলো উপযোগী।

এগুলো ছোট তাই হাতের তালুতে ধরে রাখা যায় এবং প্রারম্ভিক ব্যবহারকারীদের জন্য আরামদায়ক আর মানসম্পন্ন অনুরণিত শব্দ তৈরি করে। দক্ষ ব্যবহারকারী বা দলের পক্ষে একজন বাজানোর জন্য হলে এবং বাকীরা ধ্যানে মগ্ন থাকলে সেক্ষেত্রে বড় বোলগুলো উপযোগী। এতে শব্দ এবং অনুরণন দীর্ঘ আর তীব্র হয়৷

উভয়ক্ষেত্রেই বিভিন্ন ধরণের অনুরণিত শব্দ তৈরি করতে সক্ষম এমন বোল বাছাই করতে হবে।

যেখানে পাওয়া যাবে বোল

১. অনলাইন খুচরা বিক্রেতা

২. মেডিটেশন সেন্টার

৩. ইয়োগা সেন্টার

৪. মিউজিক শপ

৫. নতুন পণ্যের বিশেষায়িত দোকান

স্ট্রেস, দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ, হতাশা যতই বাড়ছে, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সচেতনতা এবং প্রতিকার পদ্ধতি। মেডিটেশন বোলও তেমনি একটি মন শান্ত রাখার পদ্ধতি।

সূত্র:

ভেরিওয়েলমাইন্ড ডট কম

Comments

The Daily Star  | English

How Dhaka’s rickshaw pullers bear a hidden health toll

At dawn, when Dhaka is just beginning to stir, thousands of rickshaw pullers set off on their daily grind.

18h ago