ব্র্যান্ডের পণ্যের দাম বেশি হয় কেন

প্রতীকী ছবি। রয়টার্স ফাইল ফটো

নন ব্র্যান্ডের তুলনায় ব্র্যান্ডের পণ্যের দাম ক্ষেত্র বিশেষে ৫-৬ গুণ বেশি হয়। আবার কখনো বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ডের বিভিন্ন পণ্যের রেপ্লিকার দামও হয় অনেক বেশি।

বিলাসবহুল ব্র্যান্ডের পণ্যের দাম বলতে কেবল পণ্যের উৎপাদন খরচ বোঝানো হয়না। বলা যায়, ব্র্যান্ড হলো একটি ধারাবাহিক ব্র্যান্ডিং প্রক্রিয়ার ফলাফল। ভোক্তার বা ক্রেতার কাছে মানসম্পন্ন পণ্যের প্রতিশ্রুতি দেয় ব্র্যান্ড।

ব্র্যান্ডিংয়ের খ্যাতি ও কদর থেকেই বাজারে প্রভাব ও মূল্যমান এবং ব্র্যান্ডের পণ্য ক্রয়ের মানসিকতা তৈরি হয়। অনেকের কাছেই ব্র্যান্ড মানে একটি দৃশ্যমান পরিচিতি- নাম, লোগো, ডিজাইন, প্যাকেজিং ইত্যাদি।

আমেরিকান মার্কেট অ্যাসোসিয়েশনের মতে, ব্র্যান্ড বলতে এমন কোনো নাম, শব্দ, ডিজাইন, প্রতীক বা অন্য কোনো ফিচার বোঝায় যা কোনো একজন বিক্রেতার পণ্য বা সেবাকে অন্যদের থেকে আলাদাভাবে উপস্থাপন করে। ভালো কোয়ালিটি, দারুণ ফিনিশিং, স্থায়ীত্ব ব্যান্ডের এই বৈশিষ্ট্যগুলো অস্বীকার করার উপায় নেই। তবুও একারণে কোনো ব্র্যান্ডেড পণ্যের এতো বেশি দাম নির্ধারিত হয়না।

ব্র্যান্ডের দামের খুঁটিনাটি জেনে নেওয়া যাক।

১. ব্র্যান্ডের পণ্যের পেছনে সময় ও পরিশ্রম বিবেচনায় পারিশ্রমিক নির্ধারণ করা হয়। ফ্যাশন কেবল কাপড় নয় বরং এটি ধারণ করে ইতিহাস, ঐতিহ্য, ব্র্যান্ডের পরিচিতি ও অভিব্যক্তি। একইসঙ্গে গুনগত মান এবং ভোক্তার রুচিও মাথায় রাখতে হয়। তাই এর পেছনে মেধা এবং সময় অনেক বেশি প্রয়োজন।

২. সাধারণত ব্র্যান্ডের পণ্য মজবুত এবং টেকসই হয়। তাই দীর্ঘদিন ব্যবহার করা যায়। বারবার খরচ করার চেয়ে একবারই বেশি দাম হলেও খরচ করতে প্রস্তুত থাকেন নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের ভোক্তারা। একইসঙ্গে পণ্যকে টেকসই এবং আকর্ষণীয় করতে এর পেছনে পর্যাপ্ত সময় দিতে হয়। অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট পন্য বাজারে আনতেই অনেক সময় লাগে।

৩. ব্র্যান্ডের অন্যতম অর্জন বিশ্বস্ততা। ক্রেতা বা ভোক্তারা একটি ব্র্যান্ডের ওপর বিশ্বাস রাখলে অতিরিক্ত খরচ হলেও সেখানেই তারা যেতে প্রস্তুত থাকেন৷ ভোক্তাদের অনেকেই এটিকে অতিরিক্ত খরচ হিসেবে মনে করেন না।

৪. ব্র্যান্ডের স্বতন্ত্র এবং অদ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হলো, তারা সময় এবং মেধা ব্যয় করলেও খুবই সীমিত পরিমাণে তাদের পন্য তৈরী করে এবং বাজারে ছাড়ে। কম যোগান ঐ পন্যটিকে বহুল আকাঙ্ক্ষিত করে তোলে। এছাড়া ব্র্যান্ড তার নির্দিষ্ট গ্রাহক শ্রেণির বাইরে সবার জন্য কোনো পন্যই সহজলভ্য করতে চায় না। তাই দাম রাখে সাধারণের হাতের নাগালের বাইরে।

৫.  ব্র্যান্ডের পন্য কেনার সময় এর ভোক্তারা আসলে ব্র্যান্ডের নাম ও কেনেন। ব্র্যান্ডভ্যালুর পেছনে এর কারিগররা অনেক খরচ করেন। গুণমান বজায় রাখার সঙ্গে সঙ্গে স্টোরের ইন্টেরিয়র, প্যাকেজিং, ব্যবস্থাপনা, সাংস্কৃতিক এবং দেশীয় ঐতিহ্যকেও মাথায় রাখতে হয়।

৬. ব্র্যান্ডের সফলতার সবচেয়ে মজবুত গাঁথুনি নির্ভর করে ব্র্যান্ডের স্টোরের অবস্থানের ওপরে। এমন অবস্থান বাছাই করতে এবং অন্যান্যদের টপকে সেখানে জায়গা পেতেও বেশ খরচ করতে হয়। নিখুঁত প্যাকেজিং, কাস্টমার সার্ভিস, দক্ষ বিপণন কর্মী, পরিপূর্ণ আর পরিপাটি স্টোর ব্র্যান্ডের ইমেজের সঙ্গে জড়িত। সবকিছু এতটা সুন্দর করতে যেই খরচ তা যুক্ত হয় পণ্যের দামের সঙ্গে।

৭. ব্র্যান্ডিং একটি বিরামহীন প্রক্রিয়া। প্রতিষ্ঠিত হলেই থেমে থাকার সুযোগ নেই। ক্রেতা, মার্কেট এবং ব্যবসার ধরণ নিয়মিত পরিবর্তনশীল বলে ব্র্যান্ডকেও এই দৌঁড়ে যুক্ত হতে হয়। এই ব্র্যান্ডিং, বিজ্ঞাপন, সামাজিক কার্যকলাপ, জনসম্পৃক্ততা বাড়াতেও তাই খরচ করতে হয় বেশি। কারণ প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ডগুলোর কাছে মানুষের আকাঙ্ক্ষাও বেশি থাকে।

৮. ব্র্যান্ডের পণ্যের দাম বেশি হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ হলো আত্মবিশ্বাস। ডিজাইনার ব্র্যান্ডগুলো জানে, মাত্রাতিরিক্ত এমনকি আকাশচুম্বী দাম হলেও লোকজন বা তাদের নির্দিষ্ট ভোক্তারা পণ্যগুলো কিনবেন। ব্র্যান্ডগুলো যখন বুঝতে পারে, এই দামেও মানুষ কিনছে এবং উপার্জনের সুযোগ আছে, তারা সেই বিশ্বাসকে পুঁজি করে এগিয়ে যেতে থাকে।

Comments

The Daily Star  | English

Election in first half of April 2026

In his address to the nation, CA says EC will later provide detailed roadmap

1h ago