৪ ধরনের ডগ প্যারেন্টিং

৪ ধরনের ডগ প্যারেন্টিং
স্টার ফাইল ছবি

বলা হয়, মানুষের জীবনে সবচেয়ে বিশ্বস্ত প্রাণী হচ্ছে কুকুর। বিশ্বাস, নির্ভরতা আর স্নেহের স্থান হিসেবে কুকুর সব সময়ই অন্য প্রাণীর চেয়ে মানুষের কাছে এগিয়ে থাকে। অনেক সময় কুকুরের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক প্রায় অন্য মানুষের সঙ্গে সম্পর্কের শামিল হয়ে দাঁড়ায়।

এই সম্পর্কের প্রতি আগ্রহ থেকে লেখক ও সাংবাদিক ওয়েন্ডি লিওন্স আমেরিকানদের মধ্যে একটি অনলাইন জরিপ চালিয়েছিলেন। যেখানে প্রায় ১০০ জন আমেরিকান অংশ নেন এবং তারা সবাই কুকুর পোষেন। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৪৫ শতাংশ ব্যক্তি তাদের কুকুরকে 'মাই চাইল্ড' এবং ৬৫ শতাংশ 'মাই বেবি' বলে সম্বোধন করেন। সম্বোধনের ভাষা থেকে সহজেই বোঝা যায়, পোষা কুকুরের সঙ্গে তাদের আবেগী সম্পর্ক কতটা গাঢ়। 

যারা কুকুর পোষেন, তাদের অধিকাংশই মনে করেন পোষা কুকুরটি হচ্ছে তাদের সন্তান। তাই ইংরেজিতে 'ডগ প্যারেন্ট' শব্দটি বেশ প্রচলিত। তো এই ডগ প্যারেন্ট বা কুকুরের মাতা-পিতাদের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরন; যা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এ লেখায়। যদি পাঠকও কুকুর পুষে থাকেন, তবে নিজেকে মিলিয়ে নিতে পারেন। 

উদাসীন পালক

এ ধরনের কুকুর পালক বাবা-মায়েরা সাধারণত নিজেদের সন্তানের বিষয়ে বেশ উদাসীন হয়ে থাকেন। বাচ্চার খাওয়া-দাওয়া, স্কুলে যাওয়া বা অন্যান্য যত্ন নিয়ে তাদের খুব একটা মাথা ঘামাতে দেখা যায় না। এ ধরনের মানুষেরা ডগ প্যারেন্ট হিসেবেও একই ধরনের আচরণ করে থাকেন। তারা কুকুর পোষেন ঠিকই, কিন্তু সেই কুকুরের যত্ন নিয়ে ভাবেন না। এমন লোকজনকে প্রায়ই দেখা যায়, কুকুরকে খাবার বা পানি না দিয়ে ফ্ল্যাটের দরজা আটকে বেরিয়ে যাচ্ছেন। 

এ সব ক্ষেত্রে কুকুরটি যে বেশ বিপদে পড়ে, সেকথা বলাই বাহুল্য। অনেকটা দায়িত্ব নিয়েও দায়িত্ব পালন না করা লোকজন এই ধরনের কুকুরপালকদের মধ্যে পড়েন। 

প্রশ্রয়দাতা

কুকুরের যত্নের বিষয়ে সরাসরিভাবে এরা একেবারেই উদাসীন নন, তবে উদাসীন অন্য বিষয়ে। এরা চিন্তার দিক দিয়ে আবেগী। এই ব্যক্তিরা নিজেদের সন্তানের কোনো দোষ দেখেন না। পাশের বাড়ির বাচ্চার সঙ্গে মারামারি হলে কিছু না শুনেই অন্য বাচ্চাটিকে দোষ দিয়ে বসেন। সন্তানকে শৃঙ্খলার মধ্যে না রাখতে পারা, সব অন্যায় আবদার মেনে নেওয়া– মূলত যথেচ্ছাচারই হচ্ছে এ ধরনের বাবা-মায়ের বৈশিষ্ট্য। 

কুকুর পোষার ক্ষেত্রেও তারা ব্যতিক্রম নন। বাসায় আসা অতিথিটিকে পোষা কুকুর যদি ভয় পাইয়ে দেয়, এমনকি প্লেট থেকে খাবার ছিনিয়ে নেন, তবু তারা হাসিমুখে মেনে নেবেন। 'যতই ভয় দেখাক, কামড়াবে না' – এমন বাক্য তাদের প্রায়ই ব্যবহার করতে দেখা যায়। বাড়ির যেখানে সেখানে কুকুরের প্রাকৃতিক কাজ সেরে ফেলাও তাদের কাছে 'এমন কিছু নয়'। এমন অতি আদরের দায় কুকুরটিকেও পোহাতে হয়। খাওয়া-দাওয়ার ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ না রাখায় এমন পালকদের কুকুরগুলো স্থূলতার শিকার হয়। 

দমনমূলক 

অন্য ২ ধরন থেকে একেবারেই আলাদা এই ধরনটি। নিজের চরিত্রের অতি নিয়মতান্ত্রিক মনোভাবকে এই ব্যক্তিরা সন্তান এবং এ ক্ষেত্রে কুকুরের ওপর চাপিয়ে দেন। মানবসন্তান হোক বা সারমেয়, তাদের কাছে আনুগত্যই শেষ কথা। এই ব্যক্তিদের অনেকেই ভালো প্রশিক্ষক হবার দক্ষতা রাখেন। অনেক বাবা-মা যেভাবে নিজের বহু প্রত্যাশা সন্তানের ওপর চাপিয়ে দেওয়াটা স্বাভাবিক মনে করেন, এই ডগ প্যারেন্টরাও এমন কাজই করেন তাদের কুকুরের সঙ্গে। শিখিয়ে দেওয়া খেলাটা না খেলতে পারা, ছুঁড়ে দেওয়া বল না নিয়ে আসতে পারার মতো 'ব্যর্থতা'র জন্য মাঝে কুকুরটিকে পেতে হয় ছোটখাটো শাস্তিও। এই দমনমূলক আচরণের জন্য বেচারা কুকুরটি যে বেশ ভয়ে থাকে, ওটা আঁচ করে নেওয়া যাচ্ছে। 

দায়িত্বশীল 

এই ব্যক্তিরা স্বভাবতই দায়িত্বশীল। নিজের ভূমিকা ঠিকঠাক পালন করার সঙ্গে তাদের অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ হয় ইতিবাচক ও হৃদ্য। বাবা-মা হিসেবে তারা সন্তানের জন্য বয়সের অনুপাতে মানানসই চ্যালেঞ্জ ঠিক করে দেন, কোনোকিছু চাপিয়ে দেন না। সন্তানের শৈশব গড়ে তুলতে ভেবেচিন্তে প্রতিটি ধাপ নেন তারা। এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তিরা যখন কুকুর পোষেন, স্বাভাবিকভাবে একই ধরনের আচরণ করে থাকেন। আর তাই এ ধরনের ডগ প্যারেন্টিং বাকিগুলোর চাইতে অনেক বেশি সংবেদনশীল এবং অনুকরণীয়। সঠিক দিকনির্দেশনা ও আবেগী স্পর্শের মিশেলের এই ব্যক্তিরা প্রয়োজনমতো শৃঙ্খলা যেমন রাখেন, তেমনি আদরেও ঘাটতি রাখেন না। কুকুরের সঙ্গে তাদের আচরণ বেশ উৎসাহমূলক এবং সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ, দু পক্ষের জন্যই ঠিক যেমনটা হওয়া দরকার। 

 

তথ্যসূত্র: সাইকোলজিটুডে 

গ্রন্থনা: অনিন্দিতা চৌধুরী 

Comments

The Daily Star  | English

Finance adviser sees no impact on tax collection from NBR dissolution

His remarks came a day after the interim government issued an ordinance abolishing the NBR and creating two separate divisions under the finance ministry

27m ago