অন্য শিশুর সঙ্গে সন্তানের তুলনা করা উচিত নয় যে কারণে

অনেক বাবা-মা বুঝতেই পারেন না, ভালো করতে গিয়ে তুলনার মাধ্যমে সন্তানের বরং ক্ষতি করছেন। এই তুলনা শিশুর কোমল মনে ফেলছে নেতিবাচক প্রভাব।
সন্তানকে শাসন
ছবি: সংগৃহীত

'তোমার বন্ধু তো পারে, তুমি পার না কেন? ওর মতো হতে পার না?' কিংবা 'পাশের বাসার ছেলেটা অঙ্কে ১০০ পেল। অথচ তোমার নম্বরের কথা কাউকে লজ্জায় বলাই যায় না'।

কথাগুলো পরিচিত লাগছে? লাগাটাই স্বাভাবিক। আমাদের দেশে বাবা-মার কাছ থেকে এ ধরনের কথা শুনতে শুনতেই বড় হয় অনেক সন্তান। বাবা-মা শিশুর সবচেয়ে বড় শুভাকাঙ্ক্ষী। সন্তান যেন সাফল্য পায় সেটিই থাকে তাদের পরম চাওয়া। সেজন্য কখনো আদরে, কখনো শাসনে সন্তানকে সঠিক পথটা তারা দেখাতে চেষ্টা করেন।

কিন্তু সেই কাজটি করতে গিয়ে কখনো কখনো তারা অন্য শিশুর সঙ্গে সন্তানের তুলনা করে বসেন। সেই শিশুটিকে সাফল্যের উদাহরণ হিসেবে গ্রহণ করে সন্তান তার মতো হয়ে উঠার চেষ্টা করবে—এমনটা ভেবে কাজটি করে থাকেন তারা।

কিন্তু অনেক বাবা-মা বুঝতেই পারেন না, ভালো করতে গিয়ে তুলনার মাধ্যমে সন্তানের বরং ক্ষতি করছেন। এই তুলনা শিশুর কোমল মনে ফেলছে নেতিবাচক প্রভাব।

চলুন জেনে নিই কী কারণে সন্তানের সঙ্গে অন্য শিশুর তুলনা করা উচিত নয়—

 

শিশু আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলতে পারে

শিশুরা বাবা-মার কথার প্রতি আস্থা রাখে, তাদের কথা বিশ্বাস করে। বাবা-মা যখন বলেন, ওই শিশুটি তোমার চেয়ে ভালো কিংবা তুমি ওই শিশুর মতো ভালো কখনো হতে পারবে না—তখন সে সেটিকেই সত্যি বলে ধরে নেয়।

চেষ্টা করা সত্ত্বেও অন্য শিশুর চেয়ে সে পিছিয়ে আছে এবং তার ওই শিশুটির মতো মেধা নেই বলে বিশ্বাস করতে শুরু করতে পারে সে। তার মধ্যে হতাশা তৈরি হতে পারে। সে ধরে নিতে পারে, সে যথেষ্ট উন্নতি করতে পারছে না এবং বাবা-মার প্রত্যাশা পূরণে সক্ষম নয়। ফলে ধীরে ধীরে তার আত্মবিশ্বাস হারিয়ে যেতে পারে। মনে তৈরি হতে পারে হীনমন্যতা।

অন্যদের প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবতে শুরু করে

যে শিশুদের বাবা-মা ভালো বলছেন ও যাদের মতো হতে বলছেন, তাদের প্রতি শিশুর ঈর্ষা তৈরি হতে পারে। ওই শিশুদের সে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবতে শুরু করতে পারে এবং তাদের প্রতি তার আচরণও পাল্টে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

সহযোগিতার মনোভাবের বদলে শিশুমনে গড়ে উঠতে পারে নেতিবাচক প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব। এটি প্রভাব ফেলতে পারে তার ভবিষ্যত শিক্ষাজীবন, কর্মজীবন এবং পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে।

বাবা-মায়ের প্রতি ক্ষোভ তৈরি হয়

যখন অন্য শিশুর সঙ্গে তুলনা করা হয় তখন শিশু অপমানিত বোধ করে। চেষ্টা করেও বাবা-মার প্রশংসা পাচ্ছে না বলে তার মনে তাদের প্রতি তৈরি হতে পারে ক্ষোভ। যাদের সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে, বাবা-মা তাদেরকেই বেশি ভালোবাসেন বলে মনে হতে পারে তার। নিজেকে মনে হতে পারে অবহেলিত। সব মিলিয়ে বাবা-মার প্রতি বিরূপ মনোভাব তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

দুশ্চিন্তা ও ভয় তৈরি হয়

শিশুদের কোমল মনে দুশ্চিন্তা ও ভয় তৈরি হয় খুব সহজেই। অন্যের সঙ্গে ক্রমাগত তুলনা তার মনে এই ২টি নেতিবাচক অনুভূতি প্রবলভাবে জাগিয়ে তুলতে পারে, যা পরবর্তী জীবনে তাকে ভোগাবে। কম বয়সের দুশ্চিন্তা ও ভয় তার মনে সারাজীবনের জন্য গেঁথে যেতে পারে এবং ভবিষ্যতে বড় কোনো মানসিক সমস্যার কারণ হয়েও দাঁড়াতে পারে।

সামাজিক যোগাযোগে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে

সহপাঠী, কাজিন, বন্ধু, প্রতিবেশি শিশুদের সঙ্গেই সাধারণত চলে বাবা-মায়ের তুলনা। তাই এ শিশুদের এড়িয়ে চলতে শুরু করতে পারে শিশুটি। বাবা-মায়ের সামনে অন্য শিশুদের সঙ্গে কথা বলা বা মেলামেশা বন্ধ করে দিতে পারে। সে মনে করতে পারে, ওই শিশুদের সঙ্গে দেখলেই বাবা-মা তুলনা শুরু করবেন।

এ ছাড়া, সামাজিক যোগাযোগে আগ্রহ হারিয়ে ফেলার পেছনে তুলনার ফলে তৈরি হওয়া আত্মবিশ্বাসের ঘাটতিরও ভূমিকা থাকে। শিশু মনে করতে পারে, 'ওরা আমার চেয়ে ভালো ও দক্ষ। আমার সঙ্গে হয়তো মিশতে চাইবে না। আমার সঙ্গে হয়তো পড়তে বা খেলতে চাইবে না।'  

এ বিষয়গুলো ছাড়াও আপনার সন্তানের মনে আরও নানা নেতিবাচক অনুভূতি জন্ম হতে পারে অন্য শিশুর সঙ্গে ক্রমাগত তুলনার কারণে। আপনি হয়তো তার ভালো চেয়ে কাজটি করছেন। ভাবছেন, সন্তান তুলনা শুনে ওই শিশুটিকে উদাহরণ মনে করে তাকে অনুসরণ করবে। কিন্তু মনে রাখবেন, এভাবে ইতিবাচকের চেয়ে নেতিবাচক ফল পাওয়ার আশঙ্কাই বেশি।

শিশুর সাফল্য, সুন্দর ভবিষ্যত চাইলে তার সঙ্গে আলোচনা করুন, তাকে বুঝিয়ে বলুন, তার সমস্যা বুঝে সামাধানের চেষ্টা করুন। অন্য শিশুর সঙ্গে তুলনা না করেও আপনার সন্তানের জীবনে ইতিবাচক উদাহরণ তৈরি করা সম্ভব, সুঅভ্যাস গড়ে তোলা সম্ভব। সেদিকটায় মনোযোগ দিন।

Comments

The Daily Star  | English

‘A green, clean Dhaka by 2050’

Aiming to reduce greenhouse gas emissions by up to 70.6 percent, Dhaka north and south city corporations have initiated first-ever Climate Action Plans towards 2050.

13h ago