হেরে যাওয়ার ভয় কাটিয়ে উঠবেন যেভাবে
জীবনে যেকোনো কিছু প্রথমবারের মতো করার সময় প্রত্যেকের মধ্যে কিছুটা ভয় কাজ করে। ব্যর্থতার ভয় আমাদেরকে কাজে মনোযোগী করে, সুদৃঢ় পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নিতে উদ্বুদ্ধ করে। তবে কোনো কাজে নামার সময় অত্যধিক সংশয় বা ভীতি নিয়ে নামলে নিজের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা দেওয়া কঠিন হয়ে যেতে পারে।
ব্যর্থতাজনিত ভীতির ইংরেজিতে একটি নাম রয়েছে, তা হলো অ্যাটিচিফোবিয়া। ব্যর্থতার এই ভয় সবসময় আপনাকে মনে করিয়ে দিতে থাকে যে, আপনি যতই চেষ্টা করেন না কেন কখনও তা যথেষ্ট হবে না। আপনি নিজেকে এবং আশপাশের সবাইকে হতাশ করবেন।
অত্যধিক দুশ্চিন্তা, নৈরাশ্যবাদী ভাবনা, দ্বিধাবোধ, কাজের প্রতি অনীহা, ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের ক্ষতি করা ইত্যাদি এই বিশেষ ধরনের ভীতির লক্ষণ। এরকম ভয়ের কারণে মানুষ যেকোনো কাজ শুরু করতে দ্বিধাগ্রস্ত থাকে। ফলে নিজের কাজে অনেকটাই পিছিয়ে যায় তারা।
এরকম ভয় কাটিয়ে ওঠার কিছু উপায় জানব আজ।
ভয়ের কারণগুলো খোঁজার চেষ্টা করুন
হেরে যাওয়ার ভয় মানুষ কেন পায়? নেতিবাচক পরিবেশে বড় হওয়া, বারবার ব্যর্থ হওয়া, অতীতের বড় কোনো ব্যর্থতা ইত্যাদি থেকে এই ভয়ের সৃষ্টি হতে পারে। যারা প্রতিটি কাজ নিখুঁতভাবে করতে চান ইংরেজিতে তাদের বলা হয় 'পারফেকশনিস্ট'। এ ধরনের মানুষরা মনে করেন, তাদের কাজে কোনো ভুল হওয়া যাবে না।
দেখুন, একেবারেই নিখুঁতভাবে কাজ করা অনেক সময় সম্ভব হয় না। তাই বলে কি আমরা কাজটা থেকে দূরে থাকব? অবশ্যই নয়। সাহস নিয়ে নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে কাজ শুরু করতে হবে। ভয়ের অন্যান্য কারণগুলো খুঁজে সেগুলোর ওপর কাজ করতে শুরু করুন।
ছোট ছোট লক্ষ্য স্থির করুন
অনেক সময় একটি কাজ খুব কঠিন মনে হতে পারে। পুরো কাজটিতে হয়তো আপনি একবারেই সফল হবেন না। এক্ষেত্রে কাজটিকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে ফেলুন। ধাপে ধাপে কাজটি করলে কাজটি সহজ হয়ে যাবে। ছোট ছোট লক্ষ্যগুলো অর্জন করার ফলে আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়বে এবং এই আত্মবিশ্বাস আপনাকে কাজের প্রতি আগ্রহী করে তুলবে। প্রতিদিন অল্প অল্প করে এগুতে শুরু করলে আপনার জন্য লক্ষ্য অর্জনের পথ সহজ হয়ে আসবে।
নিজেকে ব্যর্থ হওয়ার সুযোগ দিন
ব্যর্থতা জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। হাঁটতে শেখার সময় একটি শিশু যেমন বারবার হোঁচট খেয়ে হাঁটতে শেখে, তেমনি যেকোনো কাজে প্রথমবারেই আপনি সর্বোচ্চ ফলাফল পাবেন তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। ব্যর্থতাকে শেখার একটি সহজাত প্রক্রিয়ার অংশ মনে করতে হবে। কাজে ভুল হতে পারে, আপনি ব্যর্থ হতে পারেন। তাই বলে কাজটি না করে বসে থাকলে হবে না। ব্যর্থ হলেই সবকিছু শেষ নয়। বরং সেখান থেকেই শেখার চেষ্টা করুন নতুন কিছু।
ইতিবাচক চিন্তা করুন
কাজ শুরুর সময় যারা ভয় পান তাদের ভয়ের অন্যতম মূল কারণ নেতিবাচক ভাবনা। যদি আমি সফল না হই, এ ধরনের চিন্তায় কাজ শুরুই করেন না অনেকে। তাই সবসময় ইতিবাচক চিন্তা করুন। এমনকি ব্যর্থতা থেকেও অনেক কিছু শেখার আছে। অপরদিকে নেতিবাচক চিন্তার ফলে আপনার মনোবল দুর্বল হয়ে যাবে। ফলে আপনি সবসময় আপনার কাজকে ভয় পাবেন।
বর্তমানকে গুরুত্ব দিন
কোনো কিছু অর্জনের জন্য একনিষ্ঠ এবং নিবিষ্ট মননের প্রচেষ্টা প্রয়োজন। ফলাফল আর সম্ভাবনা নিয়ে অত্যধিক ভয়-ভাবনা সেই অর্জনের পথে মূল বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। কী হলে কী হতে পারত এ ধরনের চিন্তা আপনাকে পিছিয়ে দেবে।
বরং বর্তমানে আপনার হাতে যা আছে সেই কাজে মনোযোগ দিন। প্রত্যাশিত ফল অর্জনের জন্য যা কিছু উপাদান দরকার, তা আপনার কাছেই বর্তমানে রয়েছে - এই আত্মবিশ্বাসই আপনাকে সাফল্যের খোঁজ এনে দিতে পারে।
অন্যের সংগ্রাম ও সাফল্যের গল্প জানুন
জীবনের শ্রেষ্ঠ গল্পগুলো মসৃণ হয় না। সফলতার দিকে এগিয়ে যাওয়ার পথে যারা অসংখ্য বাধা বিপত্তির সম্মুখীন হয়েছেন, এমনকি ব্যর্থতার গ্লানিতে জর্জরিত হয়েও নতুন করে স্বপ্ন দেখেছেন এবং পরে বহু ত্যাগ, গ্লানি, প্রবল পরিশ্রম এবং অধ্যবসায়ের সঙ্গে সাফল্য ছিনিয়ে এনেছেন, তাদের কীর্তিগাথা সবাই বারবার শুনতে চায়। তাদের গল্পগুলো মানুষকে আশা দেখায়। আপনার ভীতি কাটিয়ে উঠতে এই গল্পগুলো সোপান হয়ে উঠতে পারে।
ইতিবাচক মানুষের সঙ্গে থাকুন
কোনো কাজ শুরুর সময় আমাদের আশপাশের পরিবেশ একটি বড় ভূমিকা পালন করে। 'তোমাকে দিয়ে এই কাজটি হবে না' বা 'তুমি এটি পারবে না' পরিবার বা বন্ধুদের কাছ থেকে এইরকম নেতিবাচক মন্তব্য পেতে থাকলে আপনি ক্রমশ কাজ করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন।
তাই ইতিবাচক বন্ধুদল গড়ে তুলুন, যারা আপনার প্রতিটি কাজে উৎসাহ যোগাবে। ব্যর্থতা সবার জীবনেই কখনো না কখনো আসে। এরকম সময়ে একে অপরের পাশে থাকা, পরস্পরকে উৎসাহিত করাই ইতিবাচক মানসিকতার পরিচয়।
Comments