শিন্নি: বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী সামাজিক বন্ধনের চিত্র

শিন্নি

আমার নানিকে আদর করে আমি ডাকতাম 'বুবু'। প্রতিবার দেশের বাড়ি বরিশালের পিরোজপুর থেকে আসার সময় বুবু আমার জন্য বাতাসা নিয়ে আসতেন। বাতাসা হলো চিনির তৈরি এক ধরনের মিষ্টি খাবার। তিনি আমাদের বলতেন এই বাতাসা হলো তবারক বা শিন্নি। তাই এখনো আমার ছোটবেলার সাদা রঙের বাতাসার মিষ্টি স্মৃতির সঙ্গে শিন্নি নামটি জড়িয়ে রয়েছে।

যেকোনো সম্প্রদায়ে আধ্যাত্মিক পরিশুদ্ধির জন্য কোনো আয়োজন করা হলে সেখানে সবার জন্য অনেক যত্নে শিন্নি প্রস্তুত করা হয়। হারিয়ে যাওয়া পুরোনো দিনের কথা মনে করিয়ে দিয়ে 'শিন্নি' নিয়ে সম্প্রতি একটি আয়োজন করা হয়। নভেম্বরের ১৬ তারিখ ঢাকার যাত্রাবিরতিতে নিরামিষ রেস্টুরেন্ট সঞ্চয়িতার কর্ণধার ফাইজা আহমেদ 'ভি-রোহানা শিন্নি' নামে ভীষণ সুন্দর এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।

শিন্নি

প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা যেকোনো কারণে যখনই কোনো সম্প্রদায় কোনো বিপদে পড়েছে তখন শিন্নি তৈরি করে সবাই মিলে আয়োজন করে খাওয়ার একটা প্রচলন ছিল এক সময়।

ফাইজা আহমেদ বলেন, 'ভি-রোহানা শিন্নির সঙ্গে ধর্মীয় কোনো যোগসূত্র রাখিনি আমি। এটি এমন এক ধরনের আয়োজন ছিল, যেন এর মাধ্যমে ঢাকার মানুষ তাদের ইতিবাচক শক্তিকে চারিদিকে ছড়িয়ে দিতে পারে।'

একবার ঘুরতে গিয়ে ফাইজা আহমেদ দারুণ এক ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন।

দুই ধর্ম বিশ্বাসী দুই বন্ধুকে গ্রামের বিশাল এক বটগাছের নিচে বসে বিরাট ডেকচিতে শিন্নির জন্য ক্ষীর রান্না করতে দেখেন তিনি। এই বটগাছটি আবার গ্রামের সবার আড্ডা দেওয়ার প্রিয় জায়গা। গ্রামের এই অপূর্ব দৃশ্যটিই তাকে অনুপ্রাণিত করেছে এ ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করতে।

ফাইজা আহমেদ বলেন, 'যেই ব্যাপারটি আমায়ে সবচেয়ে বেশি অবাক করেছে তা হলো বড় কোনো সংকটের মুহূর্তে এরকম সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা। ইতিবাচক পরিবর্তনের আশায় তারা সবকিছু জোগাড় করে, একসঙ্গে রান্না করে এবং সবাই মিলে খায়। শিন্নির সঙ্গে ধর্ম জড়িত এমন একটি ধারণা প্রচলিত থাকা সত্ত্বেও আমি বলব, এর সঙ্গে কোনো ধর্মের যোগ নেই।'

ফাইজা'স ফিস্ট ঢাকায় নিয়ে এসেছিল সিলেটের প্রিয় খাবার তুশা শিন্নি। এটি একটি ভেগান মিষ্টান্ন যা যেকোনো ধরনের শস্যের ময়দা, গুড় বা দারুচিনি-ভেজানো চিনির সিরা এবং তেল দিয়ে তৈরি হয়। এর ওপর বাদাম ও কিশমিশ দিয়ে সাজানো হয়। এর সঙ্গে ছিল ফুলকো লুচি এবং মিষ্টি পান-সুপারি।

এটি সমাজের একত্রিত শক্তির উদাহরণ। যেমন গ্রামের মানুষ সবাই মিলে যেটুকু পারে তা দিয়ে সাহায্য করে, তেমনি এই আয়োজনও শুভাকাঙ্ক্ষীদের সময়, প্রতিভা এবং সব রকম সহযোগিতাতেই সম্ভব হয়েছে। শিন্নি রান্নায় সহায়তা করেছে যাত্রা কিচেন এবং তাদের স্টাফরা।

চাঁদের আলোয় ইতিবাচক শক্তি সঞ্চারিত করতে এই অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছিল। মোমবাতির আলো আর মৃদু বাঁশির সুরে কোলাহলের শহরের মধ্যে তৈরি হয়েছিল একটি শান্তিময় ও আরামদায়ক পরিবেশ।

অনুবাদ করেছেন সৈয়দা সুবাহ আলম

 

Comments

The Daily Star  | English

Investment slump deepens

Imports of capital machinery have fallen to multi-year lows, dipping even below Covid-19 levels

7h ago