পাওনা টাকা আদায়ের আইনি প্রক্রিয়া কী

ধারের টাকা ফেরত পাওয়ার উপায়
স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

বিশ্বাস করে আপনজন কিংবা অপরিচিত কাউকে টাকা ধার দিয়ে অনেকেই বিপদে পড়েন। টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলে গড়িমসি করেন বা নানা অজুহাতে টাকা ফেরত দিতে চান না দেনাদার ব্যক্তি।

ধার দেওয়া টাকা ফেরত পাওয়ার আইনি প্রক্রিয়া ও টাকা ধার দেওয়ার সময় মনে রাখা জরুরি বিষয়গুলো সম্পর্কে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট ব্যারিস্টার সারওয়াত সিরাজ শুক্লা।

ব্যারিস্টার সারওয়াত সিরাজ শুক্লা বলেন, পাওনা টাকা ফেরত পেতে অবশ্যই আইনের সাহায্য নেওয়া যায়। এক্ষেত্রে একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর পরামর্শ নিয়ে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করা উচিত।

ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান উভয় ক্ষেত্রেই সাধারণত উকিল নোটিশ দেওয়ার মাধ্যমে টাকা আদায়ের প্রক্রিয়ার সূচনা হয়। ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে স্বত্বাধিকারী এবং কোম্পানির ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিরুদ্ধে মানি স্যুট বা অর্থ আদায়ের মামলা করতে হয়।

নিম্ন আদালতে কোর্ট ফি জমা দিয়ে মানি স্যুট করতে হয়। কোর্ট ফির পরিমাণ নির্ভর করে পাওনা টাকার অংকের ওপর।

টাকা ধার দেওয়ার সময় করণীয়

টাকা ধার দেওয়ার সময় কি করা উচিত বা কোন বিষয়গুলো খেয়াল রাখা জরুরি সেই সম্পর্কে অনেকেই উদাসীন। যে কারণে প্রমাণ হিসেবে কোনো কিছু না থাকায় পরে টাকা ফেরত পেতে সমস্যা হতে পারে। এমনকি এ বিষয়ে আইনের আশ্রয় নিতে গেলেও প্রমাণপত্রের প্রয়োজন হয়।

ব্যারিস্টার সারওয়াত সিরাজ শুক্লা বলেন, আমরা প্রায়ই শুধু বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে অপরকে টাকা ধার দেই। কোনো দালিলিক প্রমাণ না থাকলে এবং ঋণ গ্রহণকারী পরে টাকা ফেরত দিতে অস্বীকার করলে, তা প্রমাণ করা কঠিন হয়ে পড়ে।

টাকা ধার দেওয়ার সময় তাই কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। যেমন-

১. জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পের ওপর চুক্তি করে রাখা সবচেয়ে ভালো উপায়।

২. চুক্তি করা সম্ভব না হলে, ঋণগ্রহীতাকে নগদ টাকা ধার না দিয়ে, একাউন্ট পে-ই (account payee) চেকের মাধ্যমে টাকা দেওয়া বাঞ্ছনীয়।

৩. টাকা ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তা হিসেবে, টাকা ধার দেওয়ার সময় ঋণগ্রহীতার কাছ থেকে ঋণের সমপরিমাণ টাকার তারিখবিহীন পোস্ট ডেটেড চেক রেখে দেওয়া উচিত। এই চেক গুরুত্বপূর্ণ সিকিউরিটি হিসেবে কাজ করে। ঋণগ্রহীতা টাকা ফেরত না দিলে বা তালবাহানা করলে, এই চেক অ্যানক্যাশ করার মাধ্যমে টাকা আদায় করা যায়। আর চেক ডিজঅনার হলে ঋণগ্রহীতার বিরুদ্ধে নেগোশিয়েবেল ইন্সট্রুমেন্ট অ্যাক্টের অধীনে ফৌজদারি মামলা করা যায়।

৪. টাকা ধার দেওয়ার সময় মানি রিসিট অবশ্যই নিতে হবে। মানি রিসিটে টাকার অংক এবং টাকা দেওয়ার তারিখ এবং টাকার প্রাপ্তি স্বীকার করে ঋণগ্রহীতার সই রাখতে হবে।

কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংক যদি ব্যক্তির কাছে টাকা পায় সেক্ষেত্রে করণীয়

ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহককে টাকা ঋণ দেওয়ার সময় বিভিন্ন সতর্কতা অবলম্বন করে। জমিজমা বন্ধক রেখে ঋণ দেওয়া হয়। ঋণগ্রহীতার গ্যারান্টরদের কাছ থেকে পার্সোনাল গ্যারান্টি রাখা হয়। ঋণ গ্রহীতার কাছ থেকে পোস্ট ডেটেড চেক রেখে দেওয়া হয়।

যথাসময়ে টাকা ফেরত না দিলে, জমি নিলাম করে, পোস্ট ডেটেড চেক ভাঙিয়ে অথবা পার্সোনাল গ্যারান্টরদের কাছ থেকে ঋণের টাকা আদায় করা হয়। ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থঋণ আদালত আইন এবং নেগোশিয়েবল ইন্সট্রুমেন্ট আইনের অধীনে খেলাপি ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের মামলা করে থাকে। কোনো কোনো ব্যাংক রিকভারি এজেন্সির মাধ্যমে গ্রাহকদের ব্যক্তিগত ঋণ/ পার্সোনাল লোন পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করে।

 

Comments

The Daily Star  | English

Trump imposes added 25% tariff on India over Russian oil purchases

The tariff is set to take effect in three weeks and would be added on top of a separate 25% tariff entering into force on Thursday

Now